ঢাকা: যখন ব্যাংকক পৌঁছালাম, তখন সকাল ৯টা। বাস থেকে নেমেই আমরা একটা ট্যাক্সি নিলাম।
লম্বা জার্নির পর খুব ক্লান্ত ছিলাম। তাই হোটেলে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে গেলাম সকালের নাস্তা করতে। থাই খাবার-দাবার আমার একদম ভালো লাগতো না। তাই মনে মনে ইন্ডিয়ান হোটেল অথবা মুসলিম হোটেল খুঁজছিলাম। পেয়েও গেলাম একটা মুসলিম হোটেল। একদম পেট পুরে খেলাম। ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে চিকেন আর ডিমের তরকারি।
পরে আমি আর আমার ছোট বোন বের হলাম ব্যাংকক শহর ঘুরতে। প্রথমে ঠিক করলাম একটু শপিং করবো, যা ভাবা তাই করা, কিন্তু ভাবছিলাম ওদের মতো বাসে চড়বো কিন্তু কিছুই তো চিনি না।
ভাবলাম কারও সাহায্য নেবো। পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন এক তরুণ। তাকে বিষয়টি বলার পর তিনি আমায় বললেন, আমার সঙ্গেই বাসে উঠুন।
তার কথা মতো উঠে গেলাম বাসে। বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে গেছি শুনে বেশ অবাক হলেন ওই যুবক। বললেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মেয়েরা একা একা থাইল্যান্ড ঘুরতে এসেছে!’
তিনি বললেন, আমার পরের বাসস্টপে আপনারা নামবেন, জায়গার নাম সিয়াম স্কয়ার। তবে ওই ভদ্রলোক চালককে বলে গেলেন যেন আমাদের সিয়াম স্কয়ারে নামিয়ে দেওয়া হয় এবং আমাকে ভাড়া দিতে মানা করলো। কেননা বাসটি ছিল সরকারি।
জমকালো সিয়াম স্কয়ারের আশপাশ আমাদের বেশ মুগ্ধ করে দিল। আমাদের প্রথম টার্গেট ছিলো সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ড ও মাদাম তুসো ঘুরে দেখা।
কিন্তু টিকিট কাটার সময় বুঝলাম- দু’টি স্থান একসঙ্গে ঘোরা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আগে দেখবো সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ড।
এরপর দেশে ফেরার আগে যেকোনো সময় দেখবো মাদাম তুসো। তবে টিকিটটা কেটে নিলাম একসঙ্গেই। টিকিটের মেয়াদ ছিল ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
ঢুকে গেলাম সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ডে। ভেতরে প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেলাম আমি, মনে হচ্ছিল যে সমুদ্রের নিচে আছি।
কী নেই এখানে! অক্টোপাস থেকে শুরু করে পেঙ্গুইন, আরও কত কী আছে এখানে! সব কিছু আসলে বলে বোঝানো যাবে না।
যাইহোক ঢুকলাম ভেতরে। নাম না জানা অনেক প্রাণী দেখেছি। এক পর্যায়ে আমি ও আমার বোন একটা জায়গায় গেলাম যেটা শুধু প্যাকেজ নিলে ভেতরে ঢোকা যায়। বিশাল একটি রুম, যাকে কৃত্রিমভাবে পুল বানানো হয়েছে। যেখানে রয়েছে অনেক প্রজাতির মাছ।
বোটে চড়ে মাত্র পাঁচ মিনিটেই পুরো পুল ঘোরা যায়। একজন মেয়ে গাইড ঘুরে ঘুরে আমাদের প্রতিটি মাছের নাম বলে মাছগুলোর পুরো বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
বোট থেকে নেমে গেলাম ওশান ওয়ার্ল্ডের ভেতরে একটা রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টটাও ছিল অদ্ভুত! মনে হচ্ছিল যেন কোনো ভূতের জঙ্গলে বসে আছে আমরা।
চারপাশে পাখির কিচির-মিচিরও ভেসে আসছিল কানে। রীতিমতো ভয়ও লাগছিল আমাদের। যাইহোক, ভয়ে ভয়ে একটা কফি আর স্যান্ডউইচ খেয়ে বের হলাম সেখান থেকে।
বের হওয়ার সময় বলা হলো- টিকিটের প্যাকেজে ৫ডি সিনেমাও আছে। তাই চলে গেলাম সিনেমা হলে। সেখানে একটা মুভি দেখলাম ১৫ মিনিটের, খুবই মজার ছবি।
হল থেকে বের হওয়ার সময় আমার বোন বললো, মুভি দেখবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। দু’জনে ছুটে গেলাম সিয়াম প্যারাগন-এর সিনেমা হলে।
সেখানে দেখলাম ইংরেজি মুভি ‘টেকেন-৩’ যেটা ছিল ফোর-ডি। প্রথমবারের মতো ফোর-ডি ছবি দেখে বেশ আনন্দিতও লাগছিল।
মুভি শেষ করে বের হতে হতে ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা রাত ১০টায়। এরইমধ্যে শপিংমলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংককে রাত ৮টার মধ্যেই শপিংমল বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় স্ট্রিট মার্কেট, চলে অনেক রাত পর্যন্ত। হল থেকে বের হয়ে চলে গেলাম সিয়াম প্যারাগনের ঠিক উল্টো দিকের নাইট মার্কেটে।
কত প্রকার জিনিস আছে যে এখানে আছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমি কিছু না কিনলেও আমার বোন একজোড়া জুতা কিনে নিলো।
সেখান থকে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা চলে গেলাম হোটেলে। গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে পরদিন বেড়ানোর প্ল্যান করে নিলাম। এই গল্পটি বলছি পরের পর্বে...
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫
** স্বপ্নের দেশের মোহনীয় দ্বীপে
** স্বপ্নের দেশ থাইল্যান্ডে