পূর্ব প্রকাশের পর...
ভোরে ঘুম থেকে জেগে হোটেলেই নাস্তাটা সেরে নিলাম। এরপর ৩০০ বাথে একটি ট্যাক্সি দিয়ে ৪০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ব্যাংকক সাফারি ওর্য়াল্ডে।
সাফারি ওর্য়াল্ডে প্রবেশ টিকিট কেনার সময় খাবারের প্যাকেজও নিয়েছিলাম, কারণ ভেতরে খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই। থাকলেও তা খুবই ব্যয়বহুল।
ভেতরে প্রবেশের সময় এক আলোকচিত্রী বললেন- ফটো তুললে তা সাফারি ওয়ার্ল্ড-এর প্লেটে বাঁধাই করে দেওয়া হবে। ভেবে দেখলাম মন্দ না, স্মৃতি থাকবে। তুলে ফেললাম ছবিও...।
সাফারি ওয়ার্ল্ডের ভেতরে গিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ বনে যাওয়ার উপক্রমে! বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সাফারি পার্ক।
প্রথমে ঘুরোঘুরি করে দেখলাম কিছু পাখি, এরপর ক্রোকোডাইল ফার্মে এলাম। পাশেই শুনলাম একটু দূর থেকে মাইকের আওয়াজ! ডলফিন শো’র বিষয়টিই বলা হচ্ছে মাইকে। দেরি না করে তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম ডলফিন শো দেখতে।
ও! একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি। এখানে অনেকগুলা শো হয়। যেগুলা একটার পর একটা হয়, কারণ একই সময় সবগুলা শো হলে হয়তো অনেকেই তা মিস করে ফেলবে!
তো আমরা প্রথমে ডলফিন শো উপভোগ করলাম। শো-টি এত উপভোগ্য ছিল যে, বলে বোঝানো যাবে না।
ডলফিনগুলোকে যা বলা হচ্ছিল তারা ঠিক তাই-ই করলো। বিনোদনের জন্য মনে হলো এরা মানুষের থেকে এক ধাপ এগিয়ে।
প্রথমটা দেখতে দেখতেই দ্বিতীয় শো-এর সময় হয়ে গেল। পরের শো ছিল-এলিফ্যান্ট শো। সেটাও অসাধারণ।
ফুটবল খেলা থেকে শুরু করে আঁকা-আঁকিতেও দক্ষ এসব হাতি। এরপর শুরু হলো- বার্ড শো, এখানেও পাখিরা যা দেখালো, সেগুলো ভুলার নয়।
বার্ড শো দেখার পর চলে গেলাম খেতে। রেস্তোরাঁয় গিয়ে টোকেন দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খাবার টেবিলে যেতে বলা হলো। টেবিলে বসে দেখলাম- খাবার সাজানো। প্রতিটা খাবারই ছিল সুস্বাদু।
বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেলাম প্রায় ৪৫ আইটেমের খাবার। মেন্যুতে ভারতীয় খাবার থেকে শুরু করে কন্টিনেন্টাল ও ডেসার্টও ছিল সঙ্গে।
খাওয়া শেষে আমরা দুইবোন অপেক্ষা করছিলাম- স্পাই ওয়ার শো। স্পাই ওয়ার শো টা হচ্ছে জেমস বন্ড এর কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত। একদম সব কিছুই লাইভ করেছে ওরা।
বোমা থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার ধ্বংস, ভিলেনকে মারধর, জায়গায় জায়গায় আগুন ধরানো সবই।
এমনকি নায়ক-নায়িকার প্রেম ভালোবাসাও দেখানো হয়েছে এখানে। অর্থাৎ পুরোটাই ছিল জেমস বন্ড সিনেমার লাইভ ভার্সন!
শো তো শেষ হলো। এবার সাফারি পার্ক দেখার পালা। সেজন্য আমরা সাফারি জু থেকে বের হয়ে পার্কের দিকে ছুটলাম। একটু তাড়া ছিল কেননা বিকেল ৪টার পর সেখানে প্রবেশ করা যায় না।
নির্দিষ্ট কারে চড়ে গেলাম সাফারি পার্কে। পার্কের গেট খুলতেই দেখি- খোলা মাঠে বিভিন্ন জীবজন্তু বসে আছে। কী সুন্দর!
দেখলাম আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকেও! কী যে ভালো লাগলো। সবাই বলাবলি করছিল-দেখো..দেখো... রয়েল বেঙ্গল টাইগার। গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল।
এক ব্রিটিশ মেয়েকে তো বলেই ফেললাম-এটা আমাদের দেশ সুন্দরবনের বাঘ। সেও কী পুলকিত। বললো ওয়াও...তোমরা কী ভাগ্যবান।
তারপর এক এক করে ঘুরে দেখলাম- পার্কের সব জীবজন্তু। ঘুরা শেষে চলে এলাম-হোটেলে।
হোটেলে ফিরে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ঠিক করলাম শপিং এ যাবো। সন্ধ্যায় আবার বের হলাম। প্রথমে গেলাম এমবিকে শপিং সেন্টারে। সেখানে কিছু কেনাকাটা করে গেলাম ইন্দ্র মার্কেটে।
সেখান থেকে কিছু কেনা-কাটা করে রাত ১১টার দিকে হোটেলে ফিরলাম, ফিরেই রাতের খাবার খেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম ম্যাসেজ করতে যাবো। শুনেছি ব্যাংকক ম্যাসেজের জন্য খুবই বিখ্যাত।
পরদিন বের হলাম মাদাম তুসদ দেখার জন্য। সেখানে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী মিশেল ওবামা, দালাই লামা, জিম কেরি, মেসি, টাইগার উড, আইনস্টাইন, পুতিন, মাহাথির মোহাম্মদসহ পৃথিবী বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্বনেতাদের মোমের মূর্তি।
‘জীবন্ত’ এসব মানুষদের মূর্তি দেখে যে কেউ হতবিহ্বল হয়ে যাবেন! তবে ভেতরে প্রবেশের পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে মোমের মূর্তির সঙ্গে ছবি তুলতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন পর্যটকরা।
মাদাম তুসদ দেখা শেষ করে হোটেলে ফিরলাম। পরদিন চলে এলাম প্রিয় জন্মভূমিতে। আর এভাবেই শেষ হলো আমাদের থাইল্যান্ড ভ্রমণ।
ফেরার সময় যদিও মনে হচ্ছিল অনেক কিছুই অদেখা রয়ে গেছে। তাই মনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম- আবারও আমরা স্বপ্নের দেশ থাইল্যান্ডে যাবো।
(সমাপ্ত)
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-
** ঘরের মধ্যে সমুদ্র!
** স্বপ্নের দেশের মোহনীয় দ্বীপে
** স্বপ্নের দেশ থাইল্যান্ডে
বাংলাদেশ সময়: ০২১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫