প্রতিটি মানুষের কাছেই সবচেয়ে প্রিয় নৈসর্গিক দৃশ্যের ভাণ্ডার তার মাতৃভূমি। আমাদের সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ এমনই এক রত্ন ভাণ্ডার।
এদেশ যার মাতৃভূমি নয়, সেও রূপসী বাংলার রূপযৌবনের কাছে নতজানু হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা একটা সময় ভুলতে বসেন তাদের দেশটির সৌন্দর্যের গভীরতা কতখানি। নৈমিত্তিক যানজট আর সারাদিনের কাজের চাপে তাই হাঁপিয়ে ওঠে চিত্ত।
মনে হয় অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গেছে ফুসফুসে! তাই বুক ভরে শ্বাস নিতে আর প্রকৃতির কোলে মিশে যেতে বেরিয়ে পড়ার ডাক আসে। এ যাত্রায় যদি কাছের বন্ধু-বান্ধব সঙ্গে থাকে তবে তো কথাই নেই।
কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে আমরা ক’জন এরকমই এক নিসর্গ দর্শনে বেরিয়ে পড়েছিলাম কিছুদিন আগে। গন্তব্য চা-বাগান, পাহাড় আর ঝরনার দেশ সিলেট। এ সফরে মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম লালাখালের নীল জলরাশি, রাতারগুলের জলারবন ও জাফলংয়ের পাহাড়ি নদীর সৌন্দর্য।
নিসর্গপ্রেমীরা আমাদের মতো সিলেটের এই অনন্যসাধারণ তিনটি পর্যটন স্পট ঘুরে আসতে পারেন।
লালাখাল
প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি লালাখাল। ধূসর পাহাড়ের পাদদেশে নীল জলের স্বচ্ছ একটি খাল। তার ঢালু পাড়ে রয়েছে অসংখ্য বৃক্ষরাজি আর জীববৈচিত্র্য। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সবুজের হাতছানি। মনে হয় নীল আর সবুজের অপূর্ব এক মেলবন্ধন। স্বচ্ছ জলরাশির নিচে সোনালি বালুকণা সেই রূপে যোগ করে নতুন মাত্রা। চোখ ধাঁধানো এ নৈসর্গিক দৃশ্যে বিমোহিত হবেন যে কোনো পর্যটক।
লালাখালে যাওয়ার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। সিলেট পৌঁছে জাফলংয়ের পথে সারিঘাট নেমে পড়লেই পাওয়া যাবে অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি লালাখাল।
রাতারগুলের জলারবন
প্রকৃতির আপন খেয়াল হলো সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলারবন। আমাদের দেশে এরকমই একটি সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল। রাতারগুল যেন অসংখ্য গাছপালা, পাখি আর জল ও স্থলের প্রাণী সমৃদ্ধ এক স্বর্গরাজ্য। যেদিকে চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। নৌকায় ভাসলে সেই সবুজের ছোঁয়া পাওয়া যেতে পারে নিবিড়ভাবে।
চারপাশে দেখা যাবে অসংখ্য লম্বা গাছ আর সেই গাছের ডালে নানা প্রজাতির পাখি। সূর্যালোক খুব কম পৌঁছায় এখানে। আলো ছায়ার লুকোচুরির মাঝখানে এ এক স্নিগ্ধ পরিবেশ।
রাতারগুলের জলারবন ঘোরার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো বর্ষার শেষে শরৎ কালের শুরুর দিকে। রাতারগুল যাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। সিলেট শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে দেড় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারেন এই বনে।
জাফলং
সিলেটে পা দিলেই প্রথম জাফলংয়ের নাম মনে আসে। দেশের সীমান্তবর্তী অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পর্যটন স্পট এটি। জাফলং গেলেই দেখা যাবে উঁচু উঁচু পাহাড় আর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা বরফগলা স্বচ্ছ নদী ‘পিয়াইন’।
এই নদীর চারপাশে শুধু পাথর আর পাথর। শত শত আকার ও বর্ণের পাথর যে এখানে আছে তার ইয়ত্তা নেই। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানি আর সবুজ পাহাড় মিলে এক অপূর্ব নৈসর্গিক আবহ।
কান পাতলেই শোনা যায় পাথর আর স্রোতের অপূর্ব সুর-ঝঙ্কার। মনে হয় প্রকৃতির নিজস্ব রং আর সুরের এক অসাধারণ ঐকতান। এসব মিলেই জাফলংয়ের সৌন্দর্যের মহিমা।
সিলেট শহর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং অবস্থিত। শহর থেকে বাস বা ট্যাক্সিযোগে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৫
এসইউ/এমএ/এএ