চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডর কথা মনে হলেই চোখে ভাসে পাহাড় ও সমুদ্রের মিলনে এক অনন্ত সৌন্দর্য। একপাশে শুধু সবুজ আর অন্য পাশে সাগরের রূপালি জল।
পাহাড় আর সবুজের সমারোহে বিলুপ্তপ্রায় গাছ-গাছালির মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সে এক ভিন্নরকম মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি।
সীতাকুণ্ডের প্রবেশদ্বার পেরিয়েই ডানপাশে দেখা গেল কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ভাস্কর্য।
১৯২৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিশিষ্ট সাহিত্যিক হাবীবুল্লাহ বাহার ও তার বোন শামসুন নাহারের আমন্ত্রণে এখানে বেড়াতে আসেন কবি নজরুল।
এখানকার পাহাড়-সমুদ্র ও ঝরনার মাখামাখির দৃশ্য দেখে কবি মুগ্ধ হয়ে গান লেখেন ‘আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। ’
সীতাকুণ্ডের পাহাড় চূড়ায় আছে চন্দ্রনাথ মন্দির। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুন্দর মন্দির এটি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই মন্দিরের গুরুত্ব অনেক বেশি।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে ‘সিভা চতুর্দশী’ উৎসব হয় এখানে।
বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীদের ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দিরও রয়েছে এ এলাকায়। কথিত আছে-এখানে গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাঁপ আছে।
সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আছে মন মাতানো ইকোপার্ক। ৯৯৬ একর উঁচু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত এই পার্কে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি এবং নানা ধরনের পশুপাখি।
মায়া হরিণ, ভাল্লুক, শুকর, শিয়াল, হনুমান, বন্য কুকুরের চলাফেরার দৃশ্য আপনার মনে বিশালতার এক অনুভূতির জন্ম দেবে!
জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত এ পাহাড় ঘেরা বন বনানীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদও। সমুদ্রপৃষ্ঠে থেকে ১ হাজার মিটার উচ্চতায় সীতাকুণ্ড পাহাড়ের ‘ওয়াচ টাওয়ার’ থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের নীল জলরাশি দেখে উতালা হয়ে যায় মন।
বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ জগৎ পরিবেশকে করেছে মোহনীয়। পাহাড় বেয়ে চলা মাঝে মাঝে পিচঢালা পথের পাশে মোটেলে কিছুটা বিশ্রাম হয়তো আপনাকে দেবে এক অনাবিল আনন্দ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে বন্দরনগরীর প্রবেশদ্বার সিটি গেট থেকে ৩০ কিলোমিটার আগেই সীতাকুণ্ড শহর।
এরপর ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ফকিরহাট বাসস্ট্যান্ড। সিএনজি চালিত অটোরিকশা কিংবা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা দিয়ে যাওয়া যায় সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে।
থাকা-খাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন মান ও দামের আবাসিক হোটেল-মোটেল পাওয়া যায়। সীতাকুণ্ড অথবা ভাটিয়ারীতেও রয়েছে থাকার আবাসিক সু-ব্যবস্থা।
সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক দেখতে এসে ভাটিয়ারীতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজও চোখে পড়বে।
ইকোপার্ক থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে দেশের একমাত্র গরম পানির জলপ্রপাতে গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে জলকেলি উৎসবে মেতে উঠতে দেখা যায় অনেক পর্যটককে।
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ছেড়ে দুদণ্ড শান্তির খোঁজ করেন যারা, তারা অবশ্যই ছুটে যেতে পারেন পাহাড়-সমুদ্র এবং মেঘের লুকোচরি জড়ানো নিরিবিল সীতাকুণ্ডে।
সীতাকুণ্ডে যেতে চাইলে- ঢাকার কমলাপুর ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন নামের বাস (এসি/ননএসি) ছাড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে। রয়েছে ট্রেনও।
বাসের ভাড়া পড়বে সর্বনিম্ন ৩৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা। আর ট্রেনের ভাড়া ননএসি ৩৫০ আর এসি ৬১০ টাকা। রয়েছে বিভিন্ন লোকাল ট্রেনও।
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-
বাংলাদেশ সময়: ০১৩১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
টিআই/এমএ