ভারত থেকে ফিরে: এবার ভারত যাত্রার উদ্দেশ্য ছিলো চিকিৎসা। গন্তব্য কলকাতা থেকে সোজা মুম্বাই।
ইমিগ্রেশনের কাজ শুরু হয় ভোর ৫টা থেকে। তাই নাইটকোচে যাওয়াই ভালো। কারণ বিকেল ৫টার পর আর পার হওয়া যায় না। আমরা ছিলাম চারজন। একজন যোগ দিলেন বেনাপোল থেকে। রাত পৌনে ১১টায় রওয়ানা করে দৌলতদিয়া ঘাটে ঝড়ে আটকা পড়ে বেনাপোল পৌঁছাতে বেজে গেলো প্রায় সকাল ৮টা। গাড়ির কাউন্টার থেকে জনপ্রতি ১০ টাকায় ইজিবাইকে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিস। চাইলে এই পথটুকু যেতে পারেন হেঁটেও। গিয়েই সেরে নিলাম ৫০০ টাকা করে ভ্রমণ ট্যাক্সের কাজ। পরে চেকিং শেষে ভারতীয় ইমিগ্রেশনে যাত্রা।
এই এক মিনিটের যাত্রাপথে ব্যাগ বহকারী লাল-সবুজ পোশাকধারীরা বেশ যন্ত্রণা দেবে। দাবি করে বসবে ১০০/২০০ টাকা। তাদের মিষ্টি কথায় না ভুলে ল্যাগেজ বেশি না হলে নিজে বহন করাই ভালো। ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়লো নতুন ডিউটি ফ্রি শপ হয়েছে এখানে।
ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিসে ঢুকে পাসপোর্ট চেকিংয়ের সময় সাংবাদিক থেকে দায়িত্বরত কর্মকর্তার চোখ একটু বড় হয়ে গেলো। খুব কড়া সুরে জিজ্ঞেস করলেন কি উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। তবে বেশি কথা না বলে ছেড়ে দিলেন। এর আগে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয় ছোট এক পাতা। নাম ঠিকানা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এটার জন্য কিছু লোক থাকে সেখানে। আপনাকে প্রলুব্ধ করে তারা করে দেবে। বিনিময়ে ৫০, ১০০, ২০০ যার কাছ থেকে যা নেওয়া যায়। এখানেও তাদের কথায় না ভুলে নিজে ৫ মিনিট ব্যয় করে সহজ ফর্মটি পূরণ করে ফেলতে পারবেন।
ভারতে পা রাখা মাত্র বাংলা টাকার তো আর গুরুত্ব নেই। সঙ্গে ডলার বা টাকা যাই থাক সেটা ভারতীয় রুপি করে নিতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে ভিসার আবেদন করলে সঙ্গে বাংলা টাকা নেওয়া যায়। তা না হলে ডলার এনডোর্স করে নিতে হয়। এতে কিছুটা লস হবে আপনার। ওপারে অনেক মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন। একটু ঘোরাঘুরি করলেই বেশি দর পেয়ে যেতে পারেন। বাংলা ১০০ টাকায় আমরা পেলাম ভারতীয় ৮০ টাকা ৫০ পয়সা।
যাইহোক এবার কলকাতা যাওয়ার পালা। হরিদাসপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার দুটি সহজ উপায় আছে। যদি আপনি সোহাগ, শ্যামলী কিংবা গ্রিনলাইনে ঢাকা-কলকাতা সরাসরি টিকিট করে আসেন তো ঝামেলা কম। এতে খরচ পড়বে প্রায় ১ হাজার ৭শ’ টাকা। আর আমাদের মতো বেনাপোল পর্যন্ত অন্য গাড়িতে এসে পার হয়ে বিকল্প উপায়ে গেলে খরচ কমে যাবে অনেক।
বেনাপোল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। তাই সবকিছুতে এখানে সময় একটু বেশি লাগে। ভিড়ও থাকে বেশি। হরিদাসপুর থেকে এসি অথবা ননএসি গাড়িতে কলকাতা যেতে চাইলে খরচ পড়বে ৩ থেকে ৫শ’ টাকার মতো। আগেই বলেছি এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিতে চাই। তাই আমরা ধরলাম বিকল্প পথ। জনপ্রতি ৩০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে গ্রান্ডট্রাঙ্ক রোড ধরে চলে গেলাম বনগাঁ রেলস্টেশন।
যাওয়ার রাস্তাটি অর্থাৎ গ্রান্ডট্রাঙ্করোড দেবে অন্যরকম শান্তি। দু’পাশে বিশাল আকৃতির গাছের সারির মিষ্টি ছায়া। জানা যায়, আফগান যোদ্ধা শেরশাহ মোগল সাম্রাজ্য জয় করে নিজেকে সম্রাট ঘোষণার পর এ রাস্তা তৈরি করে দু’পাশে গাছ লাগিয়েছিলেন তার মায়ের যেন রাস্তা দিয়ে যেত কষ্ট না হয় সেজন্য। সেই গাছগুলো সত্যি এখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে অনেক মায়ের শান্তি দিচ্ছে।
২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম বনগাঁ স্টেশনে। গিয়ে দেখি ট্রেন দাঁড়ানো। আধা ঘণ্টা পর পর এখান থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে ট্রেন ছেড়ে যায়। কালকাতা পর্যন্ত ভাড়া জনপ্রতি মাত্র ২২ টাকা। সময় লাগে দুই ঘণ্টার কিছু বেশি। তবে বাসে গেলে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। কখনো চার ঘণ্টাও লেগে যায়। বাসের স্টপেজ নিউমার্কেট সংলগ্ন মারকুইস রোড। ট্রেন থামবে শিয়ালদাহ স্টেশন।
কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আশপাশের মানুষের কাছে শুনে নিন। আর ট্রেনে ভুলে আবার লেডিস কম্পার্টমেন্টে ঢুকে পড়বেন না। তাহলে জরিমানা গুণতে হবে ৫০০ টাকা। তবে সঙ্গে কোনো নারী থাকলে তাকে বা তাদের নিয়ে অন্য যে কোনো বগিতে একসঙ্গে বসতে পারবেন। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ এখানে। ভারতে অধিকাংশ ইলেক্ট্রিক ট্রেন, তাই গতি বেশ ভালো থাকে। বনগাঁ স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর সামনে পড়বে একের পর এক স্টেশন। প্রথমে ৫-৭ মিনিট পর পর হলেও কলকাতার দিকে যত এগোতে থাকবেন তখন ২-৩ মিনিট পর পর স্টেশনে থামবে। থামার সময়সীমা ঘড়ির কাটা ধরে ৩০ সেকেন্ড। বার বার থামাটাই জার্নির একটি বিরক্তিকর দিক।
তবে যখন দমদম স্টেশন পৌঁছাবেন এবং ভাববেন শিয়ালদাহ প্রায় এসে গেলাম তখন কষ্ট ভুলে যাবেন। আর হিসাব করবেন চারজন হলে অন্তত আড়াই হাজার টাকা বাঁচালেন তখন আরও ভালো লাগবে।
আরেকটি কথা। স্টেশনের ট্যাক্সি ড্রাইভাররা কিন্তু মিটারে কোথাও যাবে না। ভাড়াও দাবি করবে অনেক। তাই সম্ভব হলে হেঁটে মূল রাস্তা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে ট্যাক্সি ধরুন। আর যদি নন-ভেজ খাবার খেতে পছন্দ করেন তবে ধর্মতলা নিউমার্কেট এলাকায় থাকাই ভালো। এখানে প্রচুর সংখ্যক মুসলিম হোটেল পাবেন থাকা ও খাওয়ার। খরচ পড়বে হোটেল ভেদে ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মতো। তবে ১০০ টাকা হলে অনেক ভালো খেতে পারবেন একবেলা।
আমরা বেছে নিলাম মারকুইস রোডের একটি হোটেল। এবার মুম্বাই যাত্রার টিকিট কাটার পালা। অল্প সময়ে টিকিট পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার এখানে। টিকিট পাওয়ার গল্প থাকছে আগামী পর্বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৫
এএ