ভারত থেকে ফিরে: কলকাতায় যাওয়ার আগে অবশ্যই বার হিসাব করে যাওয়া উচিত। রোববার ভারতের সাপ্তাহিক ছুটি।
ভারতে আমরা বিদেশি। তাই টিকিটের জন্য পাসপোর্টই আমাদের আইডি কার্ড। ভারতে পা রাখার আগে ভিসা পেজ পর্যন্ত পাসপোর্টের অন্তত ১০ কপি ফটোকপি করে রাখলে হোটেল, এজেন্সি সবখানে কাজ সহজ হবে। আগে থেকে টিকিটের ব্যবস্থা না করে গেলে নির্ভর করতে হবে তৎকাল টিকিটের উপর। এতে খরচ সামান্য বেশি, রয়েছে অনিশ্চয়তাও। ভ্রমণের কয়েক ঘণ্টা আগে ছাড়া নিশ্চিত হতে পারবেন না যে টিকিট পাবেন কি না। তাই আগে থেকে এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে যাওয়াই ভালো। তবে অনেক এজেন্সি আবার টিকিট নিয়ে ঠকায়- এ অভিযোগও কম নয়।
আমাদের গন্তব্য মুম্বাই। কলকাতা থেকে মুম্বাই দুরন্ত, জ্ঞানেশ্বরী, গীতাঞ্জলি, মুম্বাই মেইল ও কলকাতা মেইল- এই পাঁচটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। এর মধ্যে মুম্বাই দুরন্ত সবচেয়ে দ্রুতগতির ও ভালো সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ট্রেন। সম্পূর্ণ এসি হওয়ায় ভাড়াটাও একটু বেশি। ন্যূনতম আড়াই হাজার রুপি গুনতে হবে আপনাকে। আবার কলকাতা মেইলে নন-এসিতে ৭৫০ রুপিতেও ৩৮ ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারবেন মুম্বাই।
যাইহোক আমরা নিউমার্কেট সংলগ্ন মারকুইস রোডের তাজ ট্রাভেল এজেন্সির আশফাক ভাইয়ের সহযোগিতায় মুম্বাই দুরন্তের টিকিট পেয়ে গেলাম থ্রি-টায়ারে। অর্থাৎ, উপর-নিচ তিনটি করে ছয়টি স্লিপিং বাথ। এর মধ্যে আমাদের চারটি। তবে টিকিট হাতে পেলাম যাওয়ার আগের দিন রাত ৮টায়। এর আগ পর্যন্ত জানতে পারেনি টিকিট পাবো কি না। পুরোটা দিন কেটেছে টেনশন আর অনিশ্চয়তায়।
ট্রেন ছাড়বে হাওড়া স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে। আগে দূরযাত্রার ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা না থাকলে এজেন্সির কাছ থেকে সব নির্দেশনা ভালো করে শুনে নেওয়া উচিত। কারণ একটু ভুল হলেই মিস হয়ে যেতে পারে ট্রেন। বিশেষ করে ট্রেনের নম্বর, বাইরে লেখা বগি নম্বর ও কত নম্বর প্লাটফর্মে এসে থামবে তা আগেই জেনে নিন। প্রয়োজনে স্টেশনের অনুসন্ধান কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞাস করে নিন ট্রেন লেট আছে কি না কিংবা কত নম্বর প্লাটফর্মে এসে থামবে।
টিকিট কাটা শেষে অনেকটা নিশ্চিন্ত। এবার আশপাশটা দেখার পালা। পাশেই নিউমার্কেট, রয়েছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রামলাইনও। আমরা প্রথমে নিউমার্কেটের দিকে গেলাম। দামে অনেক সস্তা অনেককিছুই কিনতে ইচ্ছে করলেও সামনে চিকিৎসা খরচের কথা মাথায় রেখে নিবৃত থাকতে হলো।
রাতে খেয়ে ঘুমানোর পালা। ট্রেনের জন্য রওয়ানা দিতে হবে সকাল সাড়ে ৬টায়। খাওয়ার জন্য অনেকগুলো হোটেল রয়েছে এখানে। অধিকাংশ মুসলিম হোটেল। চাইলে একবেলা ৩০ রুপিতেও খাওয়া যায়। তবে ১০০ রুপি হলে পেটপুরে ডাল, সবজি মাংস দিয়ে খাওয়া যায়। আমরা করলাম সেটাই।
টেনশনে রাতে ঘুম হলো না ঠিকমতো। হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম সাড়ে ৬টায়। ট্যাক্সিতে সোজা হাওড়া স্টেশন। ২০ মিনিট যেতেই দেখা মিললো কলকাতার বিখ্যাত হাওড়া ব্রিজের ইস্পাতের চূড়া। ব্রিজ পেরিয়ে পশ্চিমদিকের বাঁপাশে হাওড়া স্টেশন। কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি উঠলো ব্রিজের উপর। নিচে হুগলী নদী। তৎকালীন সময়ের বিস্ময় এ ব্রিজটি। ৭০৫ মিটার লম্বা ব্রিজটির নিচে কোনো পিলার বা সাপোর্ট নেই। কলকাতা ও হাওড়াকে সংযুক্ত করেছে এ ব্রিজটি। ১৯৬৫ সাল থেকে রবীন্দ্র সেতু নামকরণ করা হলেও হাওড়া ব্রিজ নামেই বেশি পরিচিতি তার।
হাওড়া স্টেশন ভারতীয় রেলের পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের টার্মিনাল। ব্রিজ থেকে লাল স্থাপনা ও কর্মব্যস্ততা দেখেই বুঝে নিলাম স্টেশন চলে এসেছি। ভিতরে ঢুকে দেখলাম একটির পর একটি ট্রেন আসচে যাচ্ছে। স্টেশনে প্রচুর সংখ্যক মানুষ অপেক্ষায়। রয়েছে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান। অনেক মানুষের ভিড়ে বসে গেলাম আমরাও।
আগামী পর্বে থাকছে রোমাঞ্চকর ২৬ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৫
এএ
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা