ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মুম্বাই-কলকাতার কড়চা-৪

প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো

আসিফ আজিজ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভারত থেকে ফিরে: সঙ্গে রোগী আছে, তাই আগে থেকেই ট্যাক্সি পাঠিয়ে রেখেছিলেন নানাবতী হসপিটালের মার্কেটিং অফিসার সৌরভ। ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে বেরিয়ে খুঁজে নিলাম ‘ট্যাবক্যাব’ চালক কাওসারখাঁ পাঠানকে।

বিশালবপু, মুখে দাড়ি, সত্যি পাঠান! শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সিটি ছাড়তেই চালু হলো মিটার। একটু এগোতেই এসে পড়লো ফ্লাইওভার। মনে হলো সত্যি পা রেখেছি ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই শহরে।

ফ্লাইওভার থেকেই দেখা যাচ্ছিলো আরব সাগরের কোলজুড়ে গড়ে ওঠা তারার শহর মুম্বাই। বড় বড় স্থাপনা, পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, সামনে দিয়ে ছুটে চলা মনোরেল, কঠোর নিয়ম মেনে চলা- সবই জানান দিচ্ছিলো কেন মানুষ মুম্বাই থাকার স্বপ্ন দেখে, কেন তারকারা ভিড় জমায় এখানে।

আমাদের গন্তব্য মধ্য মুম্বাইয়ের ভিল পারলের সান্টাক্রুজে। এখানে কেউ বাংলা জানে না, বলেও না। কারও সঙ্গে যোগাযোগ বা ভাব বিনিময়ে তাই হিন্দি ও ইংরেজি ছাড়া উপায় নেই। ইংরেজি, হিন্দি কোনোটাতেই অভ্যস্ত না হলেও কাজ চালানোর মতো কথা-বার্তা চালিয়ে গেলাম। চালক বললেন ঘণ্টাখানেক লাগতে পারে। কিন্তু ফ্লাইওভার কিছুতেই শেষ হচ্ছিলো না। ৩২ কিলোমিটার রাস্তার ১৫-২০ কিলোমিটারই যেন কাটলো ফ্লাইওভারে। একটি শেষ তো আরেকটি শুরু।

মুম্বাইয়ে পা রেখে ট্যাক্সিতে এটি আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা। তবে ভালো। এখানকার চালকরা যে সৎ সেটা বুঝতে পারলাম গন্তব্য শেষে যখন প্রিন্ট স্লিপ দিয়ে ন্যায্য ভাড়া নিলেন। ট্যাক্সি নিয়ে আরও ভালো অভিজ্ঞতা পরে জানাবো। জ্যাম খুব বেশি নেই। যাত্রাপথে প্রথম যে টানেলটি পড়লো সেটি খুবই সুন্দর। প্রথম কোনো টানেলের ভিতর দিয়ে গাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা। মনে হচ্ছিলো কম্পিউটারের মোটররেসের খেলাগুলোর কথা। মুম্বাই শহরটি অনেকটা পাহাড়ি শহর। পাহাড় কেটে রাস্তা-ঘরবাড়ি বানানোর ব্যাপারটি আঁচ করা যায়। রাস্তাঘাট বেশ প্রশস্ত। প্রচুর সংখ্যক ট্যাক্সি ও অটো চলে। বড় গাড়ি কম। প্রাইভেট যা দেখা যায় তার অধিকাংশ মার্সিডিজ বেঞ্জ, অডি, ভক্সওয়াগন অথবা বিএমডাব্লিউ।

পথেই দেখলাম মুম্বাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, ইউনিভার্সিটিসহ নানা স্থাপনা। ব্যস্ত শহর, তবে জট নেই। ৪৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম ৩২ কিলোমিটার রাস্তা। ডানে মোড় নেওয়া নিষেধ ছিলো। কিন্তু আমাদের হোটেল ডান পাশেই। সঙ্গে বড় ল্যাগেজ। তাই চালক ট্রাফিকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই ডানে মোড় নিয়ে নামালেন। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়েই ছুটলাম ডাক্তারের কাছে। বলা বাহুল্য থ্রি-স্টার হোটেল ক্রুজ রয়েলের মালিক ও রিসিপসনিস্টদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতাও ভোলার নয়।

ক্যানসার চিকিৎসায় বর্তমানে ভারতের অন্যতম সেরা হসপিটাল ডা. বাল্লাভাই নানাবতী হসপিটাল। টাটা মেমোরিয়ালকেও টেক্কা দিচ্ছে এটি। ক্যানসারের সেরা ডাক্তাররা বসেন এ হসপিটালে। আর ব্রেস্ট ক্যানসারে সর্বাধুনিক চিকিৎসা এখন এ হসপিটালেই।

হোটেলের সামনে থেকে অটোতে উঠতে হবে। বাহন পেতে এখানে অপেক্ষা করতে হয় না। খরচও খুব বেশি না। আর বাস ভাড়া তো খুবই কম। কিন্তু অটোতে চারজন ওঠা নিষেধ। তিনজনের বেশি অনুমতি নেই। তাই দুটিতে উঠলাম। মিটার শুরু হয় ১৭ রুপি থেকে। এক দেড় কিলোমিটারের পথে ১৭ থেকে ১৮ রুপির বেশি ভাড়া ওঠে না। চালকরা ১৯ রুপি উঠলেও এক টাকা অবশ্যই অপনাকে ফিরিয়ে দেবে।

প্রায় ৬৫ বছরের পুরনো এ হসপিটালটি বাইরে থেকে চকচকে মনে না হলেও ভিতরটা চকচকে ঝকঝকে। সৌরভ আমাদের নিয়ে গেলেন আন্ডারগ্রাউন্ডের চারতলায়। চারতলার পুরোটা ক্যানসার ইউনিট। ডাক্তারের নাম নাগরাজ। দেখতে ডারউইনের মতো। চমৎকার ব্যবহার। বয়স ৬৫-৭০ হবে। খালাকে দেখেই বললেন, আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে কেমোর পর আপনার আর কোনো সমস্যা রয়েছে। কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। তবু পেটসিটি (শরীরের কোনো অঙ্গে সামান্যতম ক্যানসারের জীবাণু থাকলে এই টেস্টে ধরা পড়বে) টা করিয়ে নিতে পারেন। কারণ আপনারা অনেক দূর থেকে এসেছেন।

সেটা করতে হবে পরের দিন। ডাক্তার ও তার সহযোগীরা ক্যানটিনে গিয়ে খেয়ে নিতে বললেন। ডাক্তারের ব্যবহার আর আশ্বাস আমাদের মন অনেকটা ভালো করে দিলো। আর ক্যাব, অটোচালক থেকে শুরু করে সবার সহযোগিতার মানসিকতা, আচরণে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। চিকিৎসার জন্য পরের দিনের অপেক্ষা। বিকেলটা আমাদের ফ্রি। খালার তেমন কোনো সমস্যা নেই শুনে বিকেলে মন কিছুটা আরও হালকা করতে সিদ্ধান্ত নিলাম মুম্বাইয়ের বিখ্যাত জুহু বিচে যাওয়ার। আমাদের হোটেল থেকে অটোতে মাত্র ৩৬ রুপির ভাড়া। কিন্তু গিয়ে যা দেখলাম সে গল্প থাকবে আগামী পর্বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
এএ

** মনভোলানো খানাপিনায় ২৬ ঘণ্টায় মুম্বাই
** সোনার হরিণ ট্রেন টিকিট, অতঃপর হাওড়া স্টেশন
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।