ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মুম্বাই-কলকাতার কড়চা-৫

বলিউড তারকাদের বেহাল জুহু বিচ!

আসিফ আজিজ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৫
বলিউড তারকাদের বেহাল জুহু বিচ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুম্বাই থেকে ফিরে: বিকেলটায় কাজ নেই। জিপিএস অন করে দেখলাম কাছেই জুহু বিচ।

মুম্বাইয়ের অন্যতম বিখ্যাত এলাকা জুহু। বিশেষ করে বলিউড তারকাদের আবাস ও বহু সিনেমার শুটিংয়ের জন্য জুহু চেনে না বা নাম শোনেনি এমন মানুষ খুব কম রয়েছে।

ভিল পারলের সান্টাক্রুজ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটারের পথ জুহু। হোটেল থেকে বেরিয়ে উঠলাম অটোতে। চালক রাম উদগার বেশ দিলখোলা মানুষ। পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন ২৫ বছর আগে। বাংলা বলা এখন একেবারেই ভুলে গেছেন। তবে বোঝেন কিছু কিছু। আমাদের কথপোকথন শুনেই বুঝে গেলেন বাংলা থেকে এসেছি। আশেপাশে ঘুরে দেখার মতো কি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি সানন্দে নিয়ে গেলেন অন্য এক জগতে। সে গল্প আরেকদিন।

দেশের বাইরে জিপিএস যে কত কার্যকরী জিনিস তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি মুম্বাই-কলকাতায়। জিপিএস অন থাকলে ট্যাক্সিও আপনাকে ঠকাতে পারবে না। কোথায় আমরা আছি, কোথা থেকে কোথার দূরত্ব কতটুকু সব নির্দেশনা কমান্ড দিলেই ভেসে উঠবে মোবাইলের স্ক্রিনে।

মিনিট দশেকের পথ। দু’পাশে কয়েকটি ব্র্যান্ডশপ রয়েছে; রয়েছে দু’একটি পাঁচতারকা হোটেলও। জ্যাম নেই। তাই পৌঁছে গেলাম দ্রুতই। জুহুর পশ্চিমে আরব সাগরের কোলজুড়ে এই বিচ।

আমরা বাংলাদেশের কক্সবাজার বিচ দেখে অভ্যস্ত। প্রথমে যখন দেখলাম ছোট্ট একটা বিচে শ দুয়েক মানুষ দাপাদাপি করছে তখন ঠিক বুঝে উঠতে পারলোম না এটাই জুহু কি না। ওখানে এসে অটো থেকে না নেমে রাম উদগালকে জিঞ্জেস করলাম জুহু আর কতদূর। বললেন, এটাই তো জুহু। মিটারে তখন ৩৬ রুপি উঠেছে। নেমে পড়লাম। আগেই শুনেছিলাম পড়ন্ত বিকেলে ভালো লাগবে। ভেবেছিলাম অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গোছালো, অভিজাত একটি বিচ দেখতে যাচ্ছি। কিন্তু সে ধারণা মিইয়ে গেলো মুহূর্তে।

নেমে পড়ন্ত বালুকাবেলায় হাঁটতে শুরু করলাম। বিচের আকাশে উড়ছে কয়েকটি হনুমান, বাদুড় ঘুড়ি। হকার খুব বেশি নেই। কতগুলো খোদ মুম্বাইয়ের খাবারের দোকানই এখানকার অলংকার।

সমুদ্র যতই উত্তাল হোক, পানি যতই ঘোলা হোক কাছে গিয়ে দূরে থাকা যায় না। কিন্তু জুহুর পানি আমাদের সহজেই দূরে সরিয়ে দিলো। পানির রং অনেকটা কালো। আরব সাগরের পানি কালো! কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেলা আরব সাগরের পশ্চিমের এ বিচের পানি কালো, নোংরা কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বিচের বালিও কালচে। এতেই অনেক উৎসাহীকে দেখা গেলো গলা পানিতে নেমে ভিজতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই পানিতে ভেজার পর অনেকেরই নানা রকম চর্ম রোগ দেখা দেয়। নামি এ বিচের এই ব্যবস্থাপনা সত্যি হতাশ করলো আমাদের।

আমাদের কক্সবাজারের বিচকে অগোছালো, অপরিষ্কার বললেও অনেক গোছালো সুন্দর মনে হলো জুহু বিচ দেখার পর। এতোটা হতাশ হবো ভাবিনি। দৈর্ঘ্যে চার-পাঁচ কিলোমিটার হবে। তবে জনসমাগম খুব কম জায়গা জুড়ে। বিশেষ করে খাবারের দোকানগুলো কেন্দ্র করেই মানুষের আনাগোনা বেশি। বিচজুড়ে ভ্রাম্যমাণ খাবারের হকার ছাড়া মেয়েদের গয়না সামগ্রীর দোকান চোখে পড়লো মাত্র একটি। দামও খুব বেশি না।

তবে জুহুর খাবারের কথা না বললেই নয়। এখানে পাবেন মুম্বাইয়ের সব বিখ্যাত স্ট্রিটফুড। পাউভাজি, পাউভাজি চিৎকার শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যাবে। এছাড়া ভেলপুরি, পানি পুরি, সেভপুরি, কচুরি, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস, শরবত পাওয়া যায় এখানে। সফটড্রিকংস ছাড়াও সব ধরনের বিয়ার ও হাডড্রিংসও এখানে সহজলভ্য।

খাবার জমে সন্ধ্যার পর। আর ছুটির দিন থাকে মাত্রারিক্ত ভিড়। সন্ধ্যা নামলে দেখা গেলো একখানে ভিড় জমেছে। কাছে গিয়ে দেখলাম জটায়ু শিবের কোলে শুয়ে গনেশ ঠাকুর। তবে সত্যি নয়, বালির শিল্পকর্ম। অনেককে দেখা গেলো সেখানেই পূজা দিতে।

জুহু বিচ কেন্দ্র করে বলিউড তারকাদের ভিড় কম নয়। জুহুতে একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকা অভিজাত ব্যাপার তাদের জন্য। ৬০, ৭০, ৮০ ৯০ দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা-পরিচলাকদের মধ্যে জনা কুড়ির বসবাস এখানে। অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া থেকে শুরু করে কাদের খান, জিতেন্দ্র, মহেশ ভাট, ঋত্বিক রোশন পর্যন্ত। সেই তারকাপাড়ার গল্প শোনাবো অন্যদিন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৫
এএ/

** প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো
** মনভোলানো খানাপিনায় ২৬ ঘণ্টায় মুম্বাই
** সোনার হরিণ ট্রেন টিকিট, অতঃপর হাওড়া স্টেশন
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।