পূর্ব প্রকাশের পর...
হোটেল থেকে বের হয়ে প্রথমেই রওয়ানা হলাম শতবর্ষের পুরানো হিড়িম্বা দেবীর মন্দিরের উদ্দেশে। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে- হিড়িম্বা ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের একজন ভীমের সহধর্মিণী ও বীর ঘটোৎকচের মা।
এই হিড়িম্বা কিন্তু মানুষ ছিলেন না, ছিলেন রাক্ষসী। মানালিতে তিনি দেবীজ্ঞানে পূজিত। কাঠের তৈরি মন্দিরটি দেখতে বেশ সুন্দর। মন্দিরের ভেতরে বিরাট কালো রঙের পাথর। যা ঘিরে গড়ে উঠেছে এ মন্দির।
কথিত আছে, এই পাথরের নিচে ধ্যানে মগ্ন হতেন হিড়িম্বা। সাড়ে ৪০০ বছরেরও বেশি পুরানো এ মন্দির যেন আজও তার স্বাক্ষর বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিনই হাজারো ভক্ত-দর্শনার্থী হিড়িম্বা দেবীকে দর্শন করেন।
পাহাড়ের মধ্যে এ মন্দিরের আশপাশে আছেন স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। যেখানে খরগোশ ও স্থানীয় কুল্লু পোশাক ভাড়া পাওয়া যায়। চাইলেই এসব পোশাক পরে প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তুলে নেওয়া যাবে।
সুযোগটা মিস করলাম না। আমরা দু’জনই কুল্লুবেশে পটাপট কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। এখানে কিন্তু এসব জিনিসের ভাড়া ১০ থেকে ২০ রুপির বেশি না। কিন্তু আপনি যদি সহজ-সরল হন, তবে তারা আপনার থেকে ৫০-৬০ রুপিও নিয়ে নিতে পারে। তাই একটু দরকষাকষি করে নেওয়া ভালো।
মানালির আরেকটি দর্শনীয় জায়গা হল- মল বা মার্কেট এরিয়া। এখানে মানালির বিখ্যাত কুল্লু চাদর, ঐতিহ্যবাহী কাজের পোশাক থেকে শুরু করে চেরি ফল, আখরোটসহ নানা শুকনো ফল পাওয়া যায়।
মানালিতে কিন্তু চেরি ফল আর স্ট্রবেরি বেজায় সস্তা ও সহজলভ্য। আর খেতেও দারুণ সুস্বাদু।
হিড়িম্বা ছাড়াও মানালিতে মহামুনি বশিষ্ঠের মন্দির, রাম মন্দির, মনু মন্দির আছে। বশিষ্ট মন্দিরে একটি উষ্ণ ঝরনাও রয়েছে। কথিত আছে, এখানে স্নান করলে সব পাপ ও রোগ থেকে মুক্তি লাভ করে মানুষ!
মানালির প্রথম দিন এসব মন্দির দর্শন শেষে গেলাম ক্লাব হাউজ নামের একটি জায়গায়। বিয়াস নদীকে ঘির গড়ে উঠা এ ছোট্ট বিনোদন কেন্দ্রটি ছিল বেশ দারুণ।
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ কিন্তু এই ক্লাব হাউজে বেশ কিছু ওয়াইল্ড রাইডে অংশ নিতে পারেন। সেই সুযোগও রয়েছে সেখানে।
দ্বিতীয় দিনে গেলাম মানালির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই জায়গা রোটাং পাস ও সোলাং ভ্যালিতে। রোটাং পাসে সবসময় বরফে ঢাকা থাকে। রাস্তা বেশ ঢালু। আর সোলাং ভ্যালিতে আপনি দেখতে পাবেন পাহাড়, বরফ ও নদীর অপূর্ব সম্মিলন।
এক কথায় ছবির মতো সব দৃশ্য। সোলাং ভ্যালিতে যেতে কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে যেতেই বেশ মজা। তবে সেই মজার জন্য অবশ্যই টাকা গুনতে হবে! এসব ঘোরাঘুরিতেই কেটে গেল দুইটা দিন।
পাহড়ের শহর সিমলা...
মানালি ঘোরা শেষ, পাহাড়ি ঢালু রাস্তা আর বিয়াসের গর্জন শুনতে শুনতেই আমরা পরের দিন রওয়ানা হই সিমলার উদ্দেশে। মানালি থেকে সিমলায় যেতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা।
যাত্রা পথে আমরা কুল্লুতে একটি বিখ্যাত শাল ফ্যাক্টরির সামনে দাঁড়াই। সেখানে দারুণ দারুণ সব শাল ও শীতের পোশাক পাওয়া যায় বেশ সুলভ দামে। কয়েকটা শাল কিনেই আবার গাড়িতে চেপে বসা।
সিমলায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তখন প্রায় সন্ধ্যা। পুরো একটি পাহাড় জুড়ে ছোট ছোট দালান, রাত হলেই সেখানে জ্বলে উঠে বাতি। যেন এক অপার্থিব দৃশ্য।
রাতটা নির্ধারিত রির্সোটে কাটিয়ে পরের দিন ভোরেই বেরিয়ে পড়লাম সিমলার সৌন্দর্য অবগাহনে। এখানে মানালির মতো অতটা ঠাণ্ডা না নেই। সকালে আমাদের নিয়ে ড্রাইভার গান্ধীজী গেলেন কুফরিতে। সমতল থেকে ২৫০০ কিলোমিটার উঁচুতে এই জায়গাটি কিন্তু শীতকালেই দেখতে বেশ সুন্দর লাগবে।
গরমের সময়ে আপাতত সেখানে দেখার তেমন কিছু নেই। একটি নাগ মন্দির, আপেলের বাগান আর টুকটাক অ্যাডভেঞ্চার রাইড ছাড়া দর্শনীয় কিছুই পেলাম না।
তবে কিছুটা রোমাঞ্চকর ছিল এই উঁচু পাহাড়ে ঘোড়ায় চড়ে আসা-যাওয়া। এরজন্য ৭০০ রুপি খরচও করতে হয়েছে। কুফরি দর্শন শেষে আমরা বের হলাম সিমলার আরও একটি দর্শনীয় স্থান হনুমানজীর মন্দিরে, যা ঝাঁকু টেম্পল হিসেবে পরিচিত।
পুরাণ মতে, রামায়াণে রামের ভাই লক্ষ্মণকে সুস্থ করতে সঞ্জীবনীর সন্ধানে বেরিয়ে এই পর্বতে আসে হনুমান। ৮ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ মন্দিরটি যেন বানরের অভয়ারণ্য।
এখানে রয়েছে হনুমানজীর ১০৮ ফুটের একটি বিশাল আবক্ষ মূর্তি। যেটা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্যের মধ্যে অন্যতম!
এসবের পাশাপাশি সিমলায় দেখার মধ্যে রয়েছে মল রোড, চার্চ এরিয়া, ভাইস লিগ্যাল লজসহ অনেক কিছুই। তবে এখানকার জিনিসপত্রের দাম কিন্তু খনিকটা বেশি।
দিনে দিনে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা বেশ অভিজাত শহরেই পরিণত হচ্ছে।
দু’দিনের সিমলা ভ্রমণ শেষে এবার এলাম চন্ডীগড়ে। যেন উঁচু-নিচু থেকে সমতলে। আর সে গল্প বলছি পরের কিস্তিতে...
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন-
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
এমএ
** আকাশছোঁয়া মানালি যাত্রা