ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সিপ্পি অভিযান-২

রনিন পাড়ার চূড়ায় দেখা মেঘঢাকা সিপ্পি আরসুয়াং

রিয়াসাদ সানভি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
রনিন পাড়ার চূড়ায় দেখা মেঘঢাকা সিপ্পি আরসুয়াং ছবি: শাফিন জাহিদ/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রনিন পাড়ার আগে দু’টি পাড়া পড়ে মাঝখানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাইক্ষং পাড়া।

এটি বিশাল একটি পাড়া। এ পাড়ায় ঢোকার আগে একটি দোকানে চকলেট আর চা খেয়ে শরীর গরম করে নিলাম। রনিন পাড়ার কারবারি আমাদের সঙ্গ দিচ্ছিলেন। কিন্তু পাহাড়ি পথের নিয়ম অনুযায়ী কিছুক্ষণ পরপরই আমরা আগ পিছ হয়ে যাচ্ছিলাম।

এভাবে চলতে চলতে বিকেল চারটার দিকে উঠে এলাম পাহাড় শীর্ষে এক চালাঘরে। সামনে অপার্থিব এক দৃশ্যের মঞ্চায়ন চলছে। দিগন্তের প্রান্তে একটি পাহাড় সব চূড়াকে ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পলাশ দা জানালেন সেটিই সিপ্পি আরসুয়াং। আর তার নিচের সবকিছু দখলে নিয়েছে মেঘের দল।

বৃষ্টিভেজা পৌষের শেষ বিকেলের আলোতে আমার দেখা সে দৃশ্য স্বপ্ন কল্পনায় ফিরে আসবে বারবার। এখান থেকে রনিন পাড়ার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। আর্মিক্যাম্পও দেখা যায়। আর কিছুক্ষণের মধ্যে ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে- এ কথা মনে পড়তেই এ দৃশ্যকল্পের মুগ্ধতা ফিকে হতে লাগলো। কিন্তু সেখানে রিপোর্ট করতেই হবে। নইলে পাড়ায় থাকতে ঝামেলা হবে।

পাহাড় শীর্ষের চালাঘর থেকে একটি রাস্তা একেবারে খাঁড়া নিচে নেমে গেছে। এটিই পাড়ায় যাওয়ার পথ। একেতো বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে আছে, তার উপর ভারী খুরি দিয়ে গয়াল একেবারে রাস্তা চষে রেখে গেছে। অনেক কষ্টে পথটুকু পেরিয়ে আমরা আর্মিক্যাম্পের সামনে দাঁড়ালাম। এরপর সেনাবাহিনীর ইন্টারভিউয়ের মুখে পড়তে হলো। কিন্তু যখন বেরিয়ে আসছি তখন সবার মুখে হাসি।

কি আশ্চর্য পাড়ায় থাকার অনুমতি তো পেয়েছিই, পেয়েছি সিপ্পির দিকে যাওয়ার অনুমতিও। ক্যাম্পে আমাদের সঙ্গে বেশ ভালো ব্যবহার করা হয়েছে, সেই সঙ্গে বেশ কিছু পরামর্শও দিলেন তারা। আগামীকাল সিপ্পি চূড়া ছোঁয়ার দৃশ্য কল্পনা করতে করতে বলা যায় নাচতে নাচতে রনিন পাড়ায় এলাম আমরা। ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে।

এখন আর বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। কিন্তু সারাবেলা ব্যাটা ভালো জ্বালিয়েছে। রনিন পাড়া বান্দরবানে আমার দেখা অন্যতম বড় পাড়া। এখানে বম ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর মানুষের বাস। আমরা জায়গা পেলাম কারবারির ঘরে। খিদেয় পেট একেবারে মোচড় দিচ্ছে। তা আরও বেড়ে গেলো যখন জানলাম রাতে মুরগি আছে তালিকায়। আসন্ন ভোজের আনন্দে তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে ঘরে এসে জাঁকিয়ে বসলাম। কিন্তু মুরগি রান্নায় হাত লাগাতে একসময় উঠতে হলো। ঘরে খুব বেশি মসলা নেই। কিঞ্চিত যা পেলাম তা দিয়ে রান্না হলো।

পেটে ছুঁচোয় ডন মারছে। ভাত আর কিঞ্চিত মসলার এ তরকারি মনে হলো অমৃত। কিন্তু শাফিনের মুখ দেখলাম কালো। সে বেশি খেলোও না। এর ফল ভোগ করেছিলাম পরের দিন। খাওয়ার পর খানিকক্ষণ আড্ডা মেরে বৃষ্টিভেজা পাহাড়ি শীতের রাতে ঘুম আসতে একটুও সময় লাগলো না। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে উঠতে হবে। সিপ্পি চূড়ার নিজদের পায়ের চিহ্ন আঁকতে হবে যে...

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এএ

সিপ্পি অভিযান-১
শীতের ঝুমবৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে পাহাড়ে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।