সোনার বাংলা এক্সপ্রেস থেকে: ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। ’ সোনার বাংলা আমাদের মন প্রাণজুড়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বিলাসবহুল ট্রেন। বিরতিহীন বললেও একমাত্র বিমানবন্দর স্টেশনে থামে। এখান থেকে যাত্রার সময় সকাল ৭টা ৩২ মিনিট। মাত্র ২ মিনিটের বিরতির মধ্যেই লাগেজ নিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে ঢুকতে হলো। বাইরের চাকচিক্যের সঙ্গে ভেতরের আভিজাত্যও টের পাওয়া গেলো। ছয়জনের কেবিনের আসনগুলো সুন্দর হলেও আয়েশ করার সুযোগ কম। সমস্যা একটু রয়েছে ব্যাগ-ব্যাগেজ রাখার। তবে এসি চেয়ার কম্পার্টমেন্টে সমস্যা নেই।
বাংলাদেশের ট্রেনের ইতিহাসে সুযোগ-সুবিধা আভিজাত্যের ধারণা বদলে দিতে আসা সোনার বাংলাকে যে মানুষ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে তা টের পাওয়া গেলো ট্রেনের ১৬ বগি হেঁটে। মোটামুটি যাত্রী ঠাসা। তবে অভিযোগও আছে এন্তার। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, খাবার-দাবার ভালো। কিন্তু মশার অত্যাচারে তো বসা যায় না। কোনো ব্যবস্থা নেই। টাকা দিয়ে যাচ্ছি সেবা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
তার কথার লাগাম টেনে পাশে বসা ব্যবসায়িক পার্টনার সৈয়দ পারভেজ বলেন, বাথরুমগুলোর অবস্থা একবার দেখে আসেন। নোংরা, ফিটিংসও ভালো না। দরজাও ঠিক নেই। এসি নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নেই। এখন শীত লাগছে।
তবে দু’জনই রেলের কর্মীদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতার প্রশংসা করলেন।
মশার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ট্রেনটির পরিচালক নিজাম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, মশার সমস্যা আছে। আমাদের ব্যবস্থাও আছে স্প্রে করার। কিন্তু ঠিকমতো করে না। বিষয়টি দেখছি। আর বাথরুম নোংরা বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়াশিং না হওয়ায় এমনটি রয়ে যাচ্ছে। এটা ওয়াশিং ও ফিটিংস ডিপার্টমেন্টের কাজ। প্রতিদিন সাবান দিয়ে পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তারা করে না।
তবে বাথরুমের সামনে বেসিন, হ্যান্ডওয়াশ, ভেতরে হাই কমোড, টিস্যু, ফ্ল্যাশের মতো আধুনিক ব্যবস্থা ট্রেনের বাঁক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় নিশ্চিতভাবে।
নামাজ পড়ার আলাদা ঘর, জায়নামাজ, বাইরে ওজু করার স্থান এর আগে কোনো ট্রেনে দেখা যায়নি। টিভির স্ট্যান্ড লাগিয়ে রাখলেও এলইডি টিভি লাগবে শিগগিরই। ওয়াইফাইও চালু হয়নি এখনও। যাত্রীদের দাবি এখন এগুলো যেন দ্রুত শেষ করা হয়।
আটলান্টার জর্জিয়া থেকে দেশে বেড়াতে আসা সন্দ্বীপের বাসিন্দা নাসির উদ্দীন প্লেনে না চড়ে সোনার বাংলায় চড়েছেন আধুনিক সুবিধার কথা জেনে। বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের ট্রেন ব্যবস্থা বাইরের দেশের সঙ্গে তুলনা করলে খুবই করুণ। আপ টু ডেট না। আরও উন্নত করা দরকার। এই ট্রেনটি তুলনামূলক ভালো সবদিক থেকে। তবে আরও সার্ভিস দরকার। পাশের সিটে বসা সাংবাদিক জহিরুল আলম বলেন, সোনার বাংলা ট্রেন একটি ভালো সূচনা। আমরা যদি পাশের দেশ ভারতের দিকে দেখি তাদের রেল অনেক নিরাপদ, আনন্দময়, সার্ভিসও ভালো। আর যে খাবার তারা দিয়েছে সেটা নট আপ টু দ্য মার্ক। টাকার তুলনায় সার্ভিস আশাব্যঞ্জক নয়। এগুলো তো টিকে থাকবে সার্ভিসের ওপর।
ট্রেনটির খাবার সরবরাহ করে পর্যটন করপোরেশন। করপোরেশনের ১২ জন কর্মী সার্ভিস দেন এ ট্রেনে। এখানে দায়িত্বরত দু’জন সহকারী ম্যানেজার। কিচেন ও ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা হলো সহকারী ম্যানেজার আবুল হোসেন মজুমদারের সঙ্গে। খাবার নিয়ে তিনি বলেন, লিস্টে যা আছে আমরা তারচেয়ে বেশি খাবার সরবরাহ করছি। যাত্রীরাও খুশি।
তবে ওভেন, ফ্রিজ, চুলা এখনও ঠিকভাবে চালু করতে পারেননি বলে জানান তিনি।
এসি কেবিনের যাত্রী ব্যবসায়ী হাবিবের মুখে শোনা গেলো ভিন্ন সুর। তিনি বলেন, টাকাই বৃথা। এসি যায় আসে। সিটও খারাপ। আরাম নেই। কেবিনে মালামাল রাখার ব্যবস্থা নেই। ১৯৫ টাকার খাবারের প্যাকেট পছন্দ হয়নি। অনেক সিট খালি থাকলেও গতকাল ব্ল্যাকে টিকিট কিনতে হয়েছে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে। এর চেয়ে সুবর্ণ এক্সপ্রেসই ভালো। সোনার বাংলার যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত বেসরকারি এস এ করপোরেশন। তাদের ১৬ জন কর্মী সেবায় নিয়োজিত। এদের একজন মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের কাজ যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা। যাত্রীরা বেশি সমস্যায় পড়েন বাথরুম নিয়ে। তাদের অভিযোগ ফিটিংস ভালো না। ব্যবহারও করতে পারেন না ঠিকমতো। তাছাড়া ক্লিন করা যায় না ঠিকমতো। যদিও আমরাই কাজটি করি। এটা ফিটিংসের সমস্যা।
তবে, যাত্রীদের এমন কিছু অভিযোগ থাকলেও সেবার জন্য আন্তরিকতার কমতি দেখা গেলো না ট্রেনের কর্মীদের।
বগি খুঁজতে যেন হয়রানিতে পড়তে না হয় সেজন্য প্রতি বগিতে নম্বর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন অ্যাটেনডেন্ট। ময়লা ফেলার জন্য বাস্কেট রয়েছে প্রতিটি কেবিন ও কম্পার্টমেন্টে। এমনকি পর্যটন করপোরেশনের তিন পিস চিকেন ফ্রাই, কেক, স্যান্ডউইচ, আপেলের সঙ্গে পানিও সরবরাহ করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
যাত্রীদের দাবি, এ ধরনের ট্রেন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট ছাড়াও অন্যান্য রুটেও যেন দেওয়া হয়। আর চট্টগ্রাম থেকে যদি একই সময়ে আরেকটি ট্রেনে আসা এবং যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে কাজে আরও গতি পাবে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৬
এইচএ/এএ