ঘাট থেকে নেমেই এক পলকে দেখে নিলাম স্বপ্নের দ্বীপটাকে। মানুষ কোথাও যাওয়ার আগে সে জায়গা সম্পর্কে একটি কল্পচিত্র তার হৃদয়ে তৈরি করে।
কেবল যশোরকেই খেজুরের রাজ্য মানা হয়। কিন্তু হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের রাস্তার দু’ধারে খেজুর গাছের সারি যেন যশোরের সেই গৌরবের চাদরকে টান দিতে চায়। ভর দুপুরে একেবারে ছোট এমনকি মাটির সঙ্গে লাগোয়া খেজুর গাছ থেকে রস ঝরছে। মধ্য দুপুরেও অনেক গাছের সঙ্গে প্লাস্টিকের বোতল ঝুলে থাকতে দেখা গেল। আগে মাটির হাড়িতে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হতো। এখন প্লাস্টিকের বোতল জানান দিলো যেন সময় বদলের। মূল সড়ক থেকে একটু এগোতেই হাতের ডানে চোখে পড়লো কেওড়া গাছের সারি। সারি সারি কেওড়া গাছ রাস্তার ডান দিক দিয়ে চলে গেছে আরও গভীরে। আরও একটু এগিয়ে গেলে কেওড়ার বন হালকা হতে থাকে। এরপর আবার শূন্য প্রান্তর। রাস্তার দু’ধারে শস্যক্ষেত। বন উজাড় করে গড়ে উঠেছে বসতি। বসতির ফাঁকে ফাঁকে দুই একটি ছোট ছোট কেওড়া বৃক্ষ জানান দিচ্ছিল যেন, ‘একদা এখানেও ঘন বন ছিল’। নিঝুম দ্বীপ ঘুরতে ঘুরতে ভাবনা মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল, বঙ্গোপসাগরের এ ভাসমান দ্বীপে বসতি বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের কর্মযজ্ঞও। হয়তো জীবনের প্রয়োজনেই কেওড়া উপড়ে রোপণ হচ্ছে শস্য চারা। কিন্তু তাই বলে সবুজ নিরল-নিঝুম পরিচয় মুছে দিয়ে?
রাস্তা ধরে এগোতে থাকলো মোটরসাইকেল। একটা সময় মনে হলো যেনো গভীর এক নিস্তব্ধতার বুক চিরে এগিয়ে চলছি। মাথার ওপর উড়ে চলেছে চেনা-অচেনা রং-রূপের কতো-শতো পাখি। পাখিদের কিচির-মিচির ছাড়া নিঝুম দ্বীপের এই অংশটায় সত্যিই নিঝুম মনে হলো।
ফেরার পথে আবার সেই ভাবনা ঘুরপাক খায় মনে, সাগরের বদলে মানুষ যেভাবে যে পদ্ধতিতে গিলছে নিঝুম দ্বীপ আর তার বনকে, একদিন কি এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে না যে, সহসা দেখা মিলছে না পর্যটক টানার প্রধান আকর্ষণ মায়া হরিণের। ধূসর কি হয়ে যাবে না এর নিরল-নিঝুম-সবুজ পরিচয়?
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** এই তো সবুজ মায়ার নিঝুম দ্বীপ
** ডাকে নিঝুম দ্বীপ, ভেঙচি কাটে অবহেলিত সড়ক
** হাতিয়া যাওয়ার পথে একটি সকাল
** হাতিয়ায় যাওয়া সহজ, আসা কঠিন