ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সূর্যের ‘জন্ম’ দেখতে ....

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
সূর্যের ‘জন্ম’ দেখতে .... সারাংকোট থেকে সূর্যোদয় দেখা। ছবি: সোহেল সরোয়ার

পোখারা (নেপাল) থেকে: সূর্যের জন্ম দেখবে বলে যে সব মানুষ ভোর পাঁচটায় ঘুম তাড়িয়ে সারাংকোটের পথ ধরেছে তাদের চোখে-মুখে তখন রাজ্যের বিষণ্ণতা।

ঘড়ির কাঁটা ৬টা পেরিয়েছে সেই কখন। বেয়াড়া মেঘেদের দল তবু আড়াল করে রেখেছে সূর্যকে।

কি আর করা! সূর্যোদয় বোধহয় আজ আর দেখা হবে না। ঘুমের সঙ্গে যুদ্ধ করে সারাংকোটের চূড়ায় উঠে আসা মানুষগুলো অগত্যা তাই বহুদূরের অন্নপূর্ণা রেঞ্জের সুন্দরতম শৃঙ্গ মেছোপুচড়কে পেছনে রেখে দৃশ্য ধারণে ব্যস্ত।

তবে ক্যামেরার ফোকাস নিজের দিকে টানতে বেশি দেরি করল না সূর্য। ঘড়ির কাঁটা পৌনে সাতটার ঘরের আশপাশে ঘুরছে তখন। সূর্য তার শক্তিমত্তা দেখাল অবশেষে। মেঘেদের বুক চিরে বাড়িয়ে দিলো রঙিন মুখ!

সূর্যের হাসির সঙ্গে মানুষের মুখেও হাসি ফুটলো যেন। এই হাসি সারাংকোট আসা সফল হলো বলে। তবে মিনিট পাঁচেক পর আবারও মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো সূর্যটা।

এর আগে ভোর সাড়ে পাঁচটায় শহরের ঘুম ভাঙিয়ে এগিয়ে চলে আমাদের গাড়ি। শহরের পুরো পথজুড়েই প্রায় অন্ধকার তখনো। কুয়াশা কাটিয়ে গন্তব্য কেবল সারাংকোট। মেঘ সরিয়ে উন্মুক্ত সূর্যের রঙিন মুখ

শুক্রবার রাতভর কেঁদেছে মেঘেদের দল। সেই কান্নায় ভিজেছে পোখারার সব পথ। তবে সেই বৃষ্টিটাই যেন স্বর্গের শহরকে আরও রূপবান করে তুলেছে। বৃষ্টির আদর পেয়ে গাছেদের গা-পাতা যে আরও ঝকঝক করছে।

প্রায় আধাঘণ্টা চলার পর থেমে গেল গাড়ি। পৌঁছে গেছি সারাংকোট।

গাড়ি থেকে নেমে, সূর্যকে কাছ থেকে দেখার তাগাদায় আরও চূড়ায় উঠতে থাকি আমরা। তারপর সারাংকোটের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠে সূর্যের অপেক্ষায়।

নানা দেশের মানুষ মিলিত হয়েছে সেখানে। সবার একটাই উদ্দেশ্য, সূর্যোদয় দেখবে। শুধু সূর্যোদয় নয়, এখান থেকে অন্যপূর্ণাকেও স্পষ্ট দেখা যায়। সারাংকোটে সূর্যোদয়।  ছবি: সোহেল সরোয়ার

সেই পথে দেখা হয়ে যায় কয়েকজন বাঙালির সঙ্গে। তাদেরই একজন সিলেটের বিয়ানিবাজারের জগলুর রহমান। ২২ জন বন্ধুকে নিয়ে অফিস ছুটির এই সময়ে চলে এসেছেন নেপালে।

একপ্রস্থ কথা হলো, জগলুরের সঙ্গে। বললেন, 'নেপালে এলাম, কিন্তু পোখরায় আসবো না তা তো হয় না। নতুন সূর্যের জন্ম দেখবো বলে ভোরে ভোরে ছুটে এলাম। কিন্তু সূর্যকে সেভাবে দেখতে পেলাম কই। একটু যা পেলাম তাও কয়েকটা ছবি তুলতেই হাওয়া। '

'আমাদের ভাগ্য খারাপ। খারাপ আবহাওয়া সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল। ' বিষণ্ণ শোনায় বছর ছত্রিশের জগলুলের গলা। '

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোখারা শহরের অদূরের সারাংকোটে পর্যটকদের সুবিধার্থে ১২টি হোটেল রয়েছে। অনেকে সূর্যোদয় দেখবেন বলে আগের রাতে এসে এসব হোটেলে ঘাঁটি গাড়েন। অনেকে আবার ভোর রাতের গাড়ি ধরে চলে আসেন এখানে।

তবে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে সূর্যের উদয় দেখা-না দেখা। তার মন ভালো তো, সূর্যের হাসি ফুটবে, মন খারাপ তো মেঘের চাদরে ঢাকা থাকবে সূর্য। কেননা সেই যে এখানকার একচ্ছত্র 'নিয়ন্ত্রক'।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।