ধাপে ধাপে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করেন। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের ভূত ঘাড় থেকে নামে না।
তার ভাষায়, অামি অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসি। অামার মনে হয়, জীবন একটাই এবং এটাকে উপভোগ করে যেতে হবে। অামি জীবনকে অাবার ফিরে পাবো না এবং চাইলেও অামার মৃত্যুর সময়কে পেছাতে পারবো না। তাই জীবনের সেরা সময়গুলো কাজে লাগাতে চাই। সবারই জীবনকে বিভিন্ন মাত্রা থেকে দেখার অভিজ্ঞতা নেওয়া উচিত।
পাহাড় ও পাহাড়ি মানুষের সরলতা তাকে ভীষণ টানে বলে একসময় চেয়েছিলেন পাহাড়ে থিতু হতে। কিন্তু পাহাড় কী আর সবাইকে রাখে!
২০১১ সালের জুন মাসে যোগ দেন দেশসেরা নিউজপোর্টাল বাংলানিউজে। এরপর থেকে শুরু নয়নের নতুন অধ্যায়। বাংলানিউজের হয়ে দেশের এ-মাথা থেকে ও-মাথা চষে ফেলেছেন। বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে গিয়েছেন ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, নেপাল ও কাতার। কাজের বিষয়ও বহুমাত্রিক। এক কথায়, রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বভুক।
তার সম্পর্কে সহকর্মীদের শংসাবাক্য, অফিসের কোনো অ্যাসাইনমেন্টেই নয়নের না নেই। তার ব্যাকপ্যাক সমসময় রেডি থাকে, বলামাত্রই সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে মিষ্টি হেসে বেরিয়ে পড়বেন।
এ নিয়ে তার মুখেই শোনা যাক, দেশে-বিদেশে অামাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, অামি কোন বিটের রিপোর্টার। আমি তাদের উত্তর দেই, অামার বস অালমগীর হোসেন অামাকে গরম মশলা হিসেবে তৈরি করেছেন। যে মশলা সবখানেই টেস্ট করা যায়। এজন্য অামি সব জায়গায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তিনি অামাকে যেমন লা মেরিডিয়ান বা মেফেয়ারের মতো জায়গায় ঘুমানোর সুযোগ করে দিয়েছেন, তেমনি নৌকায় রাত কাটাতেও অভ্যস্ত করেছেন। অামি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে ডিনার করেছি, তেমনি বস্তিতে দিনমজুরের প্লেটেও ভাত খেয়েছি। তিনি শিখিয়েছেন, একজন মানুষকে বা একটি ঘটনাকে কতো ভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়।
এজন্য নয়নের মুকুটে অর্জনও অনেক। তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১১ সালের মে মাসে জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে সেরা সাংবাদিকের পুরস্কার পান। ২০১৬ সালে পেয়েছেন মিনা পুরস্কার।
চলতি বছরের এশিয়া জার্নালিজম ফেলোশিপ পেয়েছেন বাংলানিউজে বর্তমানে স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কর্মরত মাজেদুল নয়ন। বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ রিপোর্টার নয়নসহ এশিয়ার ১৩ দেশের ১৬ জন সাংবাদিক আগামী ২৪ জুলাই থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশ নেবেন।
এই ফেলোশিপের আওতায় নয়ন তিন মাস সিঙ্গাপুরে গবেষণা প্রকল্পে কাটাবেন। অংশ নেবেন বিভিন্ন সেমিনারে। পরিদর্শন করবেন বিভিন্ন স্থান ও প্রতিষ্ঠান। সাক্ষাৎ করবেন সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, একাডেমিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে।
সদ্যই থাইল্যান্ড থেকে ১৩ হাজার ফুট উপর থেকে স্কাই ডাইভিং করে ফেরা নয়ন ইতোমধ্যে আবারও উড়ে গেছেন সিঙ্গাপুরে। ফেলোশিপের অংশ হিসেবে সেখানে থাকবেন পরবর্তী তিন মাস। সিঙ্গাপুর অবস্থানকালে, সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক রিপোর্টিং নিয়ে একটি মিডিয়া গাইডলাইন তৈরি করতে চান। এ জাতীয় রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি নিয়মিত সেখান থেকে ভ্রমণ গল্প লিখবেন। প্রতি রোববার বাংলানিউজে ‘সিঙ্গাপুরের চিঠি’ নামে ধারাবাহিকভাবে তা প্রকাশ পাবে।
নয়নের চোখ দিয়ে সেখানে থাকার নানা মজার অভিজ্ঞতা, সিঙ্গাপুরের কৃষ্টি-কালচার, জীবন যাপন, খাবার, উৎসব, পোশাক প্রভৃতি জানতে চোখ রাখুন বাংলানিউজের পাতায়। এরপর সময়-সুযোগ করে নিজেই বেরিয়ে পড়ুন একদিন।
এ নিয়ে নয়নের ভাষ্য, নেপালের প্যারা গ্লাইডিং, বাঞ্জি জাম্প বা থাইল্যান্ডের স্কাই ডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চান অনেকে। বিশেষ করে বাঞ্জি বা প্যারাগ্লাইডিংয়ের অভিজ্ঞতা অামি বলবো, এটা অাপনাকে একই সঙ্গে জীবনকে ভালবাসাতে এবং ঝুঁকি নিতে শেখাবে। আর যারা খরচের কথা জিজ্ঞাসা করেন, তাদের বলি- জমানো অর্থ মৃত্যুর পর নিয়ে যাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
এসএনএস