ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মেঘ-পাহাড়-ঝরনার রূপে মুগ্ধ করা মেঘালয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৭
মেঘ-পাহাড়-ঝরনার রূপে মুগ্ধ করা মেঘালয় মেঘালয়। ছবি: অপু দত্ত

শিলং-চেরাপুঞ্জি(মেঘালয়) থেকে ফিরে: আঁকা-বাঁকা, উচু-নিচু পথ পাড়ি দিতে দিতে মনে হবে, আপনি পৌঁছে যাচ্ছেন মেঘেদের বাড়ি। আবার কোনো কোনো মেঘে ঢাকা পথ আপনাকে জানাবে উষ্ণ অভিনন্দন! পথ চলতে চলতেই কোনো না কোনো পাহাড়ের ভেতর থেকে শুনতে পাবেন ঝরনার শব্দ। দেখতে পাবেন বিশাল পাহাড় বেয়ে দুধ সাদা ঝরনার স্বচ্ছ পানি গড়িয়ে পড়ছে নিচে। পাহাড়ের পর পাহাড়ের সবুজ রূপ আপনাকে নিশ্চিত মুগ্ধ করবে।

প্রকৃতির এমন অকৃত্তিম উদার রূপ দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। ভারতের সেভেন সিস্টার্সখ্যাত উত্তর-পূর্বে অবস্থিত আকর্ষণীয় এক রাজ্য মেঘালয়।

পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টি প্রবণ এলাকা। মেঘালয়ের রাজধানী হচ্ছে শিলং। সিলেটের তামাবিল থেকে যার দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার।

গত ১ অক্টোবর থেকে ৪ দিনের সফরে ঘুরে এলাম মেঘালয় রাজ্য থেকে। ঢাকা থেকে সিলেট নেমেই চলে গেলাম তামাবিল ইমিগ্রেশন অফিসে। সেখানকার এবং ভারতের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করেই শুরু হলো আমাদের মূল সফর।

ছবি: অপু দত্তমাওলিনং ভিলেজ-লিভিং রুট ব্রিজ
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে আমরা গেলাম এশিয়ার পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ভিলেজ মাওলিনং এ। ভিলেজটি দেখতে দেখতে পৌছে যাবেন জীবন্ত শেকড়ের তৈরি লিভিং রুট ব্রিজ ও জলপ্রপাত। বিস্ময়কর সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। মাওলিনং যাওয়ার আগেই পথে দেখতে পাবেন দুটি বিশাল আকারের ঝরনা।

গলফ লঙ্কি ও অর্য়াডস লেক
১ম দিন শিলং শহরে রাত্রিযাপন করে ২য় দিন চলে গেলাম গলফ র্কোস দেখতে। পুরো এলাকায় যেন সবুজ কার্পেট বিছানো। এর কাছেই অবস্থিত অয়ার্ডস লেক। প্রায় ৫টি পাহাড়ের ভাঁজে কৃত্তিমভাবে তৈরি এই লেক বিকালে সময় কাটানোর জন্য দারুণ।

ডন বসকো ক্যাথেড্রাল
শিলং এ অবস্থিত এই চার্চটি প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত। স্থানীয় মানুষের দাবি অনুযায়ী, এই চার্চটি নাকি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় চার্চ। স্থাপত্য শৈলীর কারণে দৃষ্টি নন্দন এই চার্চটি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।

মেঘালয়।  ছবি: অপু দত্তএলিফেন্ট জলপ্রপাত
অনেক বছর আগে ভূমিকম্পে একটি পাথর ধসে পড়ে। পাথরটি দেখতে হাতির মত বলেই এর পাশের জলপ্রপাতকে বলা হয় এলিফেন্ট জলপ্রপাত। জলপ্রপাতটির তিনটি ধাপ রয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই এক এক করে জনপ্রপাতের সব ধাপ দেখতে পাবেন।

ছবি: অপু দত্তডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ  
চেরাপুঞ্জি সফরকালে অবশ্যই ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজে যাবেন। অসম্ভব সুন্দর। ব্রিজটি গাছের তৈরি। স্থানীয় উমশিয়াং নদীর উপর একটি গাছের শিকড় পেঁচিয়ে তৈরি হওয়া দুটি ধাপের এই ব্রিজ প্রকৃতির নিজস্ব দান। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর আর কোথাও এমন গাছের তৈরি ব্রিজ নেই। এটি দেখতে হলে আপনাকে প্রায় ৩ হাজার সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে এবং সেই ৩ হাজার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। যাওয়া আসা মিলে লাগবে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা। পথে যেতে যেতে মুগ্ধ করার মত অনেক কিছু দেখতে পাবেন। পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য দুটো লোহার তৈরি ঝুলন্ত ব্রিজ রয়েছে। দেখতে পাবেন আরো গাছের তৈরি ব্রিজ।

ছবি: অপু দত্তমংসুমই গুহা
মংসুমই গুহা চেরাপুঞ্জি শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে। গুহাটি দেড়শ’ মিটার লম্বা। গুহার ভেতরের পাথরগুলো দেখে মনে হবে বহু বছর আগে আগ্নেয়গিরিতে গলে যাওয়া। ভয়ংকর দেখতে। গুহার ভেতরটাতে কৃত্রিম আলো রয়েছে। গা ছমছম অনুভূতি নিয়ে ফিরে আসা।

নোহকালিকাই ফলস
নোহকালিকাই জলপ্রপাতটি সম্ভবত মেঘালয়ের বৃহৎ জলপ্রপাতগুলোর একটি। প্রায় এক হাজার ফুট উচুঁ সবুজ পাহাড় থেকে সাদা পানি সোজা নিচে নামছে। প্রচলিত উপকথা অনুযায়ী, কালিকাই এক মেয়ের নাম। যে কিনা এই জলপ্রপাত থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছে বলেই তার নাম অনুসারে জলপ্রপাতটির নাম নোহকালিকাই ফলস।

মেঘালয়।  ছবি: অপু দত্তসেভেন সিস্টার্স ফলস
এটিকে মেঘালয়ের অন্যতম পর্যটন স্পট বলা হয়ে থাকে। পাহাড়ের গা বেয়ে ৭টি ধারায় নেমে এসেছে এই ঝরনাটি। যেখান থেকে ঝরনার পানি নিচে নামছে সেটিকে ইকো পার্ক বলে। এখানে দেখা যাবে মেঘের লুকোচুরি খেলা। দূর থেকে দূরবিন দিয়ে বাংলাদেশ দেখার সুবিধা আছে।

রামকৃষ্ণ মিশন
১৯৫২ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু চেরাপুঞ্জি রামকৃষ্ণ মিশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। খাসি জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষা,  চিকিৎসাসহ সামাজিক ক্ষেত্রে এই মিশন ভূমিকা রাখছে। বিশাল এলাকাজজুড়ে অবস্থিত এই মিশনটিকে চেরাপুঞ্জির প্রতীক বলা চলে। এখানে রয়েছে নৃতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। যেখান থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

এছাড়াও শিলং-চেরাপুঞ্জিতে আরো অনেক পর্যটন স্পট আছে। নেট ঘেঁটে সব স্পট সম্পর্কে ধারণা নিন। সময়ের গুরুত্ব দিয়ে হাতে ৪ দিন সময় নিয়ে গেলে সব স্পট দেখতে পাবেন।

কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে প্রথমে সিলেট। সেখান থেকে টেক্সি বা বাসে তামাবিল। এখানেই ইমিগ্রেশন-কাস্টমস অফিস। বর্ডার পার হলেই মেঘালয়ের ডাউকি। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিককতা ছেড়ে একটি টেক্সি ভাড়া করে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে সরাসরি শিলং চলে গেলেই ভালো। সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা। শিলং-চেরাপুঞ্জিতে চাহিদা অনুযায়ী হোটেল পাবেন। তবে বিশেষ দিনে গেলে আগে থেকেই রুম বুকিং করে যাওয়া ভালো। সময় সুযোগ করে ঘুরে আসুন মেঘালয় থেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।