ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বিচ্ছিন্ন যোগাযোগে পর্যটক হারিয়েছে সুসং দুর্গাপুর!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
বিচ্ছিন্ন যোগাযোগে পর্যটক হারিয়েছে সুসং দুর্গাপুর! সুসং দুর্গাপুরের বেহাল সড়ক। ছবি: বাংলানিউজ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) থেকে : দীর্ঘদিনের বেহাল সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় পর্যটক হারিয়ে ফেলেছে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর।
 

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষা গারো পাহাড়ে আচ্ছাদিত দুর্গাপুর উপজেলায় রয়েছে ১টি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১৩৪টি মৌজায় ২০৫টি গ্রাম।

এখানকার মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

এখানেই সনাতন ধর্মাবলম্বী, ইসলাম ধর্মের মানুষের সাথে গারো, হাজং, হদি, কোচ, ডালু, বানাই নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিবিড় সম্পর্কে বসবাস করেন।

সুসং দুর্গাপুরের বেহাল সড়কে ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ।                                          ছবি: বাংলানিউজপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসতেন এখানে। কিন্তু পর্যটন এলাকা হিসেবে সুসং দুর্গাপুর বা বিরিশিরি নামটি যখন বিকশিত হচ্ছিল তখনই বেহাল সড়কের দৈন্যদশায় হয়ে পড়েছে পর্যটক শূন্য।

পর্যটকদের প্রবল ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকলেও বেহাল সড়ক আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে তারা আসতে পারছেন না এখন। এতে করে বাণিজ্যিক এলাকাটিতে অর্থনৈতিক ধস নেমেছে! ট্রাক, বাস ও তিন চাকার যানচালক থেকে দিনমজুর বা শ্রমিক হয়ে পড়েছেন কর্মহীন।

২৯৩.৪২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় উত্তরে ভারত, দক্ষিণে পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা। পশ্চিমে রয়েছে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা এবং পূর্বে কলমাকান্দা উপজেলা।

সুসং দুর্গাপুরে চীনামাটির পাহাড় ও রঙিন পানির লেক।  ছবি: বাংলানিউজসোমেশ্বরী ও আত্রাখালি নদী আর কংশ নদ উপজেলাটিকে জড়িয়ে রেখেছে।

সুসং রাজ্যের পৃথক পৃথক জমিদার বাড়ি, রাণীখংয়ে পাহাড়ের চূড়ায় সাধু যোসেফের ধর্ম পল্লী, টঙ্ক ও কৃষক আন্দোলনের পথিকৃ‍ৎ নেত্রী হাজংমাতা শহীদ রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, দুর্গাপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, সোমেশ্বরী নদী, গারো পাহাড়, চীনামাটির পাহাড় ও রঙিন পানির কূপ দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

শ্যামগঞ্জ থেকে সুসং দুর্গাপুরের ৩৬ কিলোমিটার পাকা সড়কটি ভেঙে হাল চাষের ফসলি জমিতে রূপ নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে পড়েছে যাত্রীবাহী বাস চলাচল। দুর্ভোগে পড়ছে প্রতিদিন স্থানীয়সহ সড়কে আসা হাজারো মানুষ।

সোমেশ্বরী নদী।  ছবি: বাংলানিউজসড়ক ও জনপথের (সওজ) হিসাব মতে, রাজধানী ঢাকা থেকে দুর্গাপুরের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ রাস্তায় এসেও পড়েন, তাতে সময় প্রয়োজন হয় ১০/১২ ঘণ্টা! তাই পর্যটক আসা তো দূরের কথা, স্থানীয়রাও সহজে নিজের কোনো কাজের জন্য এ রাস্তা মাড়াতে চায় না।

সড়ক সংস্কার বা ফের নতুন করে নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলনও হয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।

সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বাংলানিউজকে জানান, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি সেতুসহ পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ থেকে দুর্গাপুর উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি সংস্কার করা হয়।

রাশিমণি স্মৃতিসৌধ।  ছবি: বাংলানিউজবছর যেতে না যেতেই পুরো সড়কটির বিভিন্নস্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড়বড় গর্ত হয়। পরে পুরোপুরি কর্দমাক্ত কাঁচা সড়কে রূপ নিলে শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি অবর্ণনীয় দুর্ভোগ!

ভুক্তভোগীরা জানান, সেই থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই।

এদিকে পূর্বধলা ও দুর্গাপুর উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুর্গাপুর উপজেলার ৩৬ কিলোমিটার বেহাল এ সড়কটি এখন ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কে উন্নীত হবে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের উদ্বোধন করার পর  ঠিকাদার ও শ্রমিকরা নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। অপেক্ষা এখন সেই সুসময়ের।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।