সারি সারি টেরাকোটার খোদাই চিত্রে তাই পাওয়া যায় আদিকালের বনে শিকার, রাজকীয় শোভাযাত্রা, পৌরাণিক দৃশ্যাবলী, সমুদ্রগামী জাহাজ, রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী, সম্রাট আকবরের জীবদ্দশার কাহিনী, শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন চিত্রসহ অনেক প্রাচীনকালের ঐতিহাসিক দৃশ্য।
১৭২২ সালে দিনাজপুরের তৎকালীন মহারাজা প্রাণনাথ এই কান্তজিউ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
আদিকাল থেকেই আমাদের এই অঞ্চলের মাটি উর্বর পলিময়। ছিল পাথর সংকট। তাই দেশি ঐতিহ্যে পোড়ামাটি দিয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল কান্তজিউ মন্দিরের নির্মাণ কাজে।
পুরনো স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দির বাংলাদেশের একটি মহা মূল্যবান প্রত্নসম্পদ। পর্যটকদের জন্য বর্তমানে এই মন্দিরটি অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন শতশত দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে বেড়াতে এসে মুগ্ধ হন। মন্দিরটির আর্শ্চয্য কারুকাজ সহজেই সবাইকে আকৃষ্ট করে। প্রতি বছর রাস পূজার সময়ে মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় মাসব্যাপী মেলা। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে ভক্ত ও পর্যটক ছুটে আসেন।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে সপরিবারে ঘুরতে আসা দিনাজপুর শহরের পুলহাট এলাকার মো. তোফায়েল আহমেদ জানান, কান্তজিউ মন্দির ইতিহাসের পাতায় নিজেকে বেশ ভালো ভাবেই ধরে রেখেছে। প্রাচীন এই স্থাপনাটি দিনাজপুর তথা দেশের গর্ব। এক সময় এখানে যাতায়াতের কারণে পর্যটকদের চরম অসুবিধায় পড়তে হতো। বর্তমানে ঢেপা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গেছে। সপ্তাহের ছুটির দিন উপলক্ষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কান্তজিউ মন্দিরে ঘুরতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে মন্দিরের সুন্দর এই পরিবেশ।
দিনাজপুর সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেপা নদীর তীরে এ মন্দির অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন
বাস: ঢাকা থেকে সরাসরি ঠাকুরগাঁও বা পঞ্চগড়গামী নৈশ্য বা দিবা কোচে এসে কান্তনগর মোড়ে নামতে হবে। এরপর ইজিবাইক বা ভ্যানে জন প্রতি ৫ টাকা ভাড়া দিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছুতে পারবেন।
ট্রেন: ঢাকা-দিনাজপুর রুটে আন্ত:নগর একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন সকাল-সন্ধ্যা যাতায়াত করে। দিনাজপুর স্টেশনে নামার পর শহর থেকে বাস টার্মিনাল বা সরকারি কলেজ মোড় থেকে বাস যোগে অথবা ইজিবাইক যোগে কান্তজিউ মোড় পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
খাওয়া : কান্তজিউ মন্দির ও এর আশপাশের এলাকায় ছোট-বড় একাধিক ভালো খাবারের হোটেল রয়েছে। তবে এর অনতি দূরে দশমাইল নামক স্থানে স্বনামধন্য কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে।
থাকার স্থান: কান্তজিউ মন্দির এর পাশে পর্যটকদের জন্য একটি সরকারি ডাকবাংলো ও পর্যটন মোটেল রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে আবাসিক হোটেল।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : কান্তজিউ মন্দিরকে সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর থেকে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকছে। মন্দির প্রাঙ্গনে স্থাপিত হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প।
বাংলাদেশ সময় : ১২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
জেডএম/