এর মধ্যে এক জায়গায় গত বছর ১৬ জন প্রাণ হারান পাহাড় ধসে। আজকের পথটিও বেশ বৈচিত্র্যময়।
একে কেন্দ্র করে রীতিমতো লজ বসে গেছে। আমরা সকালের প্রথম বিরতি এখানেই দিলাম। সেই বাংলাদেশ থেকেই আমরা শুনে আসছিলাম এই তাতোপানির কথা। পরিকল্পনা ছিল এখানে গোসল করার। এখন কেবল সকাল। পরিকল্পনা বাদ দিতে হলো। আমরা এগিয়ে গেলাম। আজ ঝরনার সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এই সাত সকালেই ১৫-২০টি ঝরনা দেখে ফেলেছি। আমরা সেই ল্যান্ড স্লাইডের জায়গাটি তাড়াতাড়ি পার হয়ে গেলাম। দেখতে তেমন ভয়ংকর কিছু না। বিশ্বাস হতে চায় না এখানেই গত বছর ১৬ জন মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছেন।
বুড়িগন্ধাকী আজ আরও প্রমত্তা। এপার-ওপার দৈর্ঘ্যে বেশি না কিন্তু তার স্রোতের আওয়াজ ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পথিমধ্যে সরু করিডোরের মতো এক জায়গায় খচ্চরের দলকে জায়গা দিতে দুর্ঘটনার উপক্রম হলেও বেঁচে গেলাম আমরা। ঝরনা আর বুড়িগন্ধাকীর যুগলবন্দী উদ্দামতাকে সঙ্গী করে আমরা দোভানে পৌঁছে গেলাম। এখানে লাঞ্চ করবো। স্মৃতির আয়নায় প্রতিবিম্ব ফেলার মতোই জায়গা দোভান। দু’পাশে পাহাড় ঘেরা উপত্যাকার মাঝে লজ। ঠিক মাথার উপরে বিশাল এক ঝরনা। এখানে চিকেন পাওয়া যাবে না। আলুভর্তা আর ডিমভাজির তোড়জোর শুরু হয়ে গেলো।
মুহিত ভাই, বিপ্লব ভাই আর বিথী লেগে গেলো। আমরা নরম রোদে ঝিমুচ্ছি। নূর ভাই দশ মিনিটের ছোট্ট ন্যাপ নিয়ে নিলো এর ফাঁকে। গরম ভাত, পাপড় ভাজা, আলু ভর্তা, ডিম ভাজি আর ডাল। গলা পর্যন্ত খেলাম। ইচ্ছে করছিলো অন্তত দু’দিন এখানে থেকে যেতে। কিন্তু আমাদের যেতে হবে বহু দূর।
আজ গাছপালার আকার আকৃতিতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। বোঝা যাচ্ছে আমরা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছি। আরুঘাটে তো আম গাছও দেখে এসেছি। দোভানের পর থেকে গাছপালার আকার-আকৃতি ধরনে পরিবর্তন হতে লাগলো। দোভানের মূল বসতি পার হয়েই বিশাল আরেকটি ল্যান্ড স্লাইড এরিয়া। পুরো পাহাড়সহ ধসে গেছে। জায়গাটি এতোই বড় যে আধ ঘণ্টার বেশি লাগলো পার হতে। এখানে বেশ কিছুটা সময় আবার আটকে থাকতে হলো খচ্চর বাহিনীর জন্য। অবশেষে ঘাম ঝরানো এক চড়াইয়ের পর এর হাত থেকে মুক্তি মিললো।
এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম, কোমলপানীয় পান। আধ লিটারের এক ক্যান বোধহয় ২০০ রুপি দাম নিলো। এরপর শুরু হলো দিনের আসল খেল। প্রথমে অল্প অল্প, পরে পা মাথায় এনে ঠেকানো চড়াই শুরু। মনে হলো পাতাল থেকে স্বর্গের দিকে উঠছি। সেই রাস্তাও শেষ হলো। এরপর ইয়ারু বাজার। দিনের আসল খেল যদি সেই চড়াই ভাঙা হয় তবে আসল চমক সামনেই অপেক্ষা করছিলো।
নেপালের একমাত্র ক্লিপ ব্রিজ পার হতে হবে জগতের পথে। খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে ক্লিপের সাহায্যে আটকানো এই কাঠামো পার হওয়াও এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। এক পশলা ফটোসেশন হয়ে গেলো। জগত তখনো দেড় থেকে দুই ঘণ্টার দূরত্বে। শেষ মুহূর্তগুলোয় জিজ্ঞাসা ছিল আর কত দূর জগত। ঠিক সন্ধ্যার মুখে আমরা এসে পৌঁছালাম বড় এ জনপদে।
বসতবাড়ি, হোটেল, লজ মিলিয়ে বেশ বড় জায়গা নিয়ে জগত। এখানে মানাসলু কনজার্ভেশন এরিয়ার কর্তৃপক্ষের চেকপোস্ট রয়েছে। আজ বেশ ঠাণ্ডা লাগছে। ফলে গোসলের ঝামেলায় আর গেলাম না। হাত মুখ ধুয়ে সরাসরি ডাইনিং টেন্টে। খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বড় একটা তাঁবুতে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এএ
কখনও সরু ফিতা কখনও এবড়ো-থেবড়ো পথে যাত্রা
চারিদিকে বান্দরবান বান্দরবান গন্ধ, সামনে আরক্ষেত