কাছে গিয়ে নাড়াচাড়া করতেই আফগানি ভাঙা আরবী ও ইংরেজি মিশিয়ে বললেন, 'আইফোন সিক্স। জাদিদ।
কাভার প্যাকেট দেখে তাই মনে হলো। সৌদিতে নকল মাল প্রবেশ করা দুষ্কর। খাদ্যে বা পণ্য সামগ্রীতে ভেজাল দেওয়া প্রায়-অসম্ভব। সব সময় পাহারাদারি চলছে। হোটেলে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর খাবার বিক্রি করতে হয়। দোকানে বাসি-পচা খাবার থাকলেই ফাইন হচ্ছে উচ্চহারে। ক্ষেত্র বিশেষে লাইসেন্স বাতিল করে দোকান বন্ধও করা হয়।
প্যাকেটজাত খাবার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়। দুধ, দই, জুস সরবরাহকারী কোম্পানির গাড়ি রাত বারোটার পর এসে মেয়াদ শেষ হচ্ছে, এমন খাদ্য দোকানে দোকানে গিয়ে তুলে নিচ্ছে। মানের পাশাপাশি দামের ক্ষেত্রেও কোনও তারতম্য নেই। ফাইভ স্টার হোটেলের সুপার শপ আর মহল্লার মুদি দোকানে জিনিসের একই দাম। লোকের ভিড়ে বা স্বাভাবিক সময়েও দাম থাকে অভিন্ন।
এহেন আরব দেশের বিরাণ প্রান্তরে অত্যাধুনিক পণ্য দেখে আগ্রহী হলাম। আফগানি কাজ চালানোর মতো ইংরেজি, উর্দু জানে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে মিশে কিছু বাংলা শব্দও শিখেছে। স্যামসং, নকিয়ার মোবাইল, মেমোরি কার্ড ইত্যাদিও তার এখানে আছে। বাস থেকে আগত লোকজন ছোটখাট অনেক কিছু কিনলেন।
আফগানির অন্য পাশে মধু, কালো জিরা ইত্যাদি ভেষজের পসরা সাজিয়েছে আরেক জন। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি দোকানে খাবার, লজেন্স ও নানা গিফট আইটেম নিয়ে বসেছে দোকানি। কিছুক্ষণ পর পর মক্কা বা মদিনার দিক থেকে আসা-যাওয়াকারী বাস থামতেই যাত্রীরা ভিড় করছে।
মঞ্জিল জায়গাটা বেশ মজার। শুধু বাস স্টপ বলা যাবে না। সরাইখানার মতো বিরাট এক হোটেল। ভেতরে দস্তরখানা বিছিয়ে আসন পেতে বসে খাওয়ার ঢালাও ব্যবস্থা। এক পাশে জ্বলন্ত চুল্লিতে ঝলসানো হচ্ছে কাবাব, যার নাম লেহাম। বেশি চলে জামালের লেহাম বা উটের মাংসের কাবাব। পুরো আবহাওয়াটাই আরবি কেতায় পূর্ণ।
হোটেলের পেছনে হাম্মাম বা বাথরুম। নারী, পুরুষের আলাদা ওজু ও প্রক্ষালনের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। অনতিদূরেই একটি মসজিদ। খোলামেলা জায়গাটিতে দ্রষ্টব্য বলতে আর কিছুই নেই।
মঞ্জিল দেখে প্রাচীন সিল্ক রোডের মধ্যযুগীয় সরাইখানার কথা ভেসে আসে। আধুনিক যুগের যাবতীয় আয়োজন নিয়ে আরবের মহাসড়কের নানা প্রান্তে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে সরাইখানা সদৃশ্য মঞ্জিল। দেখে মনে হয়, আধুনিকতা ও ঐতিহ্য চলছে যেন হাত ধরাধরি করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এমপি/জেডএম