সোমবার (৮ জানুয়ারি) ভোরে পূর্ব জিনান রেল স্টেশন থেকে হাইস্পিড ট্রেনে এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাই কনফুসিয়াসের ছু ফু তে। ট্রেন থেকে নামতেই শীতল হাওয়ায় গা ছম ছম করছে।
চীনের পথঘাট এমনিতেই বিলবোর্ড এলইডি বোর্ডে ঠাসা। ছু ফু পূর্ব রেল স্টেশনের সামনের বিলবোর্ডে ভাসছে কনফুসিয়াসের ছবি।
কনফুসিয়াসের দর্শন নিয়ে অনেকবার পড়া হয়েছে। চীনের ছু ফু শহরে তার জন্ম। তার দর্শন ও রচনাবলী চীনসহ পূর্ব এশিয়ার জীবনদর্শনে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। তার বিশ্বাস ছিল, শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে নীতিজ্ঞান। বিশ্বে প্রভাব বিস্তারকারী সেরা ১০০ জনের তিনি ছিলেন পঞ্চম।
চীনের দীর্ঘতম দ্রুতগতির রেলপথ বেইজিং-সাংহাই রেলপথটির দক্ষিণ ও উত্তর দিক ছু ফু'র মধ্য দিয়ে গেছে। দ্রুতগতির ট্রেনের ছু ফু পূর্ব স্টেশন কনফুসিয়াসের জন্মস্থান থেকে বেশি দূরে নয়। প্রতিদিন ঘণ্টায় ঘণ্টায় এখান দিয়ে বেইজিং ও সাংহাইগামী ট্রেন আছে।
ছু ফু শহরটি আয়তনে খুব একটা বড় না হওয়ায় পাবলিক বাস বা ইলেকট্রিক রিকশায় ঘুরে আসা যায়। তবে পাবলিক বাস তেমন একটা চোখে পড়েনি।
ছু ফু শহরের পথঘাট বেশ প্রশস্ত। শীতের এ সময়ে রুক্ষতায় শুষ্ক ভাব থাকলেও আর্দ্রতা অনেক। তবে তুষার বা বরফাবৃত নয়।
১৯৮২ সাল থেকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত ছু ফু চীনের প্রথম সারির শহর হিসেবে বিবেচিত। ১৯৯৪ সালে কনফুসিয়াস মন্দির, কনফুসিয়াস সমাধি ও কনফুসিয়াসের বাসভবনকে ইউনেস্কোর 'বিশ্ব সংস্কৃতি উপরাধিকার'-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ শহরটির পর্যটন শুধুমাত্র কনফুসিয়াসকে ঘিরে। এখনও তার প্রচুর ভক্ত ভিড় করেন কনফুসিয়াসের সমাধিতে।
তবে এখানে আমাদের গন্তব্য ভিন্ন। যাচ্ছি একটি রোলার কারখানায়। প্রশস্ত সড়কের ধারে বিস্তৃত ভূমি নিয়ে একেকটি রোলার আর সড়ক যন্ত্রপাতির কারখানা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সড়কের গর্ত বা সড়ক নির্মাণের সব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি মেলে এখানে। সেটি ঘুরে ঘুরে দেখছি।
তবে যাই দেখি শহরটির ভেতরে বাইরে এখনও কনফুসিয়াস দৃশ্যমান। সেটা মানুষের শৃঙ্খলা, নম্রতা অথবা সৌজন্যবোধ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
প্রশস্ত রাস্তার পাশে অসংখ্য সাইনবোর্ড আর বিলবোর্ড। তবে কোনোটিই এবড়ো থেবড়ো বা যেন তেন নয়। সবগুলোতেই উচ্চতা ও রঙের সমন্বয় দৃশ্যমান। রাস্তার একটু পরপর নির্দেশক সাইন, তাতে কনফুসিয়াসের বাণী লেখা।
কনফুসিয়াস নৈতিকতা ও নম্রতার শিক্ষা দিতেন। তিনি শুধু ধনীদের জন্য নয়, সবার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ শহরে তার ধারণার সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে।
সব ঘুরে দেখার জন্য আবার আসতে হবে কনফুসিয়াসের ছু ফু তে। কারণ প্রযুক্তি আর গতির শহরের ডাক পড়ে গেছে। বেইজিং থেকে ছেড়ে আসা সাংহাইয়ের ট্রেনে উঠে পড়েছি। স্মৃতিপটে ভাসছে কাঠ দিয়ে বানানো কনফুসিয়াসের প্রতিকৃতি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
এসএ/এসআই