ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ভরা মৌসুমে অতিথি পাখি শূন্য রামসাগর

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
ভরা মৌসুমে অতিথি পাখি শূন্য রামসাগর রামসাগর

দিনাজপুর: চলছে শীতের মৌসুম। প্রতি বছর শীতের এই সময়ে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় আর অতিথি পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকে চারপাশ। কিন্তু চলতি মৌসুমে পর্যটক থাকলেও অতিথি পাখির দেখা নেই।

পর্যটক ও স্থানীয়রা বলছে দিঘিতে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত একাধিক নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় অতিথি পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যে কারণে শীতকালেও মিলছে না অতিথি পাখির দেখা।

সঙ্গে দিঘির পানি দূষণসহ নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

রামসাগর একটি জাতীয় উদ্যান। কয়েক’শ বছরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করা বিশাল এ দিঘি। প্রতি বছর শীতের ভরা মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগমে ভরে যায় রামসাগর দিঘির পানি ও আশেপাশের গাছপালা। পর্যটকরা দিঘির চারপাশে ভিড় করে দিঘির পানিতে খেলা করা অতিথি পাখি দেখেন। শীত আসলে পাখি প্রেমিরাও ভিড় জমান রামসাগরে।  
রামসাগর
সরেজমিনে দেখা যায়, পাখির দেখা না পেয়ে পর্যটক ও পাখি প্রেমিরা হতাশ হয়ে ফিরছেন। গত দুই-তিন বছর থেকে দিঘিতে নৌকা চলাচল করায় অতিথি পাখির আর দেখা মেলে না। নৌকার ডিজেল দিঘির পানিতে পড়ে দূষিত হচ্ছে পানি ও পরিবেশ। নৌকায় ভ্রমন করা  দর্শনার্থীরা চিপস-বিস্কুটের খালি প্যাকেটসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য ফেলছেন দিঘিতে।  

অন্যদিকে, নৌকায় ভ্রমনে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ত্রিশ-চল্লিশ টাকা করে আদায় করা হলেও তা জমা হচ্ছে না সরকারি কোষাগারে।  

স্থানীয় রবিউল ইসলাম বাবু নামে এক পর্যটক বাংলানিউজকে বলেন, যেদিন থেকে রামসাগর দিঘিতে নৌকা চলতে শুরু করেছে, সেদিন থেকেই এখানকার পরিবেশের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। গত কয়েক বছর থেকে দিঘিতে নৌকা চলাচলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শীতকালীন অতিথি পাখিদের আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই আগের মতো অতিথি পাখির অভয়ারণ্য ভেবে রামসাগর দিঘিতে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখিদের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে এই পর্যটক।

রবিউল বলেন, নৌকা থেকে জ্বালানি তেল পড়ে দূষিত হচ্ছে দিঘির পানি। এ কারণে মাঝে মধ্যেই বড় বড় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এছাড়া নৌকায় ভ্রমনকারীরা পানিতে চিপসের প্যাকেট-প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য ফেলছে। দিনে গড়ে ৩শ থেকে ৪শ জন নৌকায় ভ্রমণ করেন। অসাধু ব্যক্তিরা ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ম্যানেজ করে রামসাগরে নৌকা ব্যবসা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।  
রামসাগর
রামসাগর জাতীয় উদ্যানের ত্বত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুস সালাম তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, এ উদ্যানের গাছ-গাছালি দেখা-শোনার দায়িত্ব বন বিভাগের। দিঘির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রাশাসক। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

নৌকা পরিচালনাকারী মো. মোজাহার হোসেন বলেন, রাতে আমরা কয়েকজন রামসাগর দিঘির মাছ পাহাড়া দেই। এর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক পাই না। দিনের বেলা নৌকা চালিয়ে পর্যটকরা যা দেয় তা দিয়েই সন্তষ্ট থাকি।  

দিঘির মধ্যে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য ভাসার কারণ জানতে চাইলে মোজাহার বলেন, পর্যটকরা বিস্কুট-চিপস খেয়ে প্যাকেট দিঘিতে ফেলে দেয়। মাঝে মধ্যে আমরা সেসব সংগ্রহ করি। কিন্তু যে হারে এসব প্লাস্টিক ফেলা হয়, দুই-একজন মিলে পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।  

এ ব্যাপারে দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দিঘিটি জেলা প্রশাসক মহোদয় দেখেন। উপজেলা প্রশানের কোনো দায়িত্ব নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৩ ঘন্টা, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮
এমএসএ/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।