প্রধান ফটক থেকেই চোখে পড়বে বিশাল লেক। লেকের স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে বাহারি ডিজাইনের নৌকা।
কথা উঠবে এ আর নতুন কি! অনেক লেকেই তো নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু না, অন্য এলাকায় দেখা যাবে ইঞ্জিনচালিত নৌকার বিকট শব্দ নৌ ভ্রমণের আনন্দ বিষাদে পরিণত করে। কিন্তু মেঘলায় পানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই আপনার কানে আসবে না। বর্ণিল সব নৌকা চলে ব্যাটারিতে। এ কারণে পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আপনাকে হিরন্ময় নিরবতার অনুভূতি যোগাবে।
বিশাল আকৃতির লেকের পরে ৩শ’ ফুট উঁচু পাহাড়। যে কারণে বাইরে চলাচলকারী যানবাহনের শব্দ আপনার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের প্রশান্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
দূষণমুক্ত এই লেকে চলার সময় দেখতে পাবেন নানা জাতের জলজ পাখির খেলা। মাথার উপর গাছের ডাল পানি ছুঁই ছুঁই করছে। সেসব গাছে কাঠবিড়ালীর খেলা ও বিভিন্ন পাখির কলতান সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
নৌকায় ঘোরার সময় মাথার উপর সাঁই সাঁই করে চলছে ক্যাবল কার। যাতায়াত মিলিয়ে ১৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ ক্যাবল কার এক পাহাড় থেকে লেকের উপর দিয়ে অন্য পাহাড় ছুঁয়ে আসা ভ্রমণকারীদের মনে রোমাঞ্চকর অনূভূতির সঞ্চার করে।
পানির ২শ’ ফুট উপর দিয়ে ক্যাবল কারে যাতায়াতের সময় শূন্যে ভেসে থাকার দারুণ এক অনুভূতির সৃষ্টি করবে। কারো কারো মনে কিঞ্চিত ভীতিও সঞ্চার করতে সক্ষম ক্যাবল কার।
প্রধান ফটক থেকে কংক্রিটের ঢালু ওয়ার্কওয়ে দিয়ে নেমে গেলেই সামনে পড়বে পিকনিক স্পট। সেখানে রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ। শব্দ দূষণ না করে চালিয়ে নিতে পারবেন শিক্ষা সফর অথবা পিকনিকের অনুষ্ঠান।
লেকের উপর ঝুঁকে রয়েছে রেস্ট হাউস, যার বারান্দায় বসে চুটিয়ে উপভোগ করতে পারবেন চাঁদনী কিংবা আমাবস্যার রাত।
তখন লেকের স্বচ্ছ জলের শীতল হাওয়া অন্যরকম ভালো লাগার পরশে জুড়িয়ে দিয়ে যাবে মন। যান্ত্রিকতা সেখানে কোনভাবেই বাধ সাধতে পারবে না।
দুইদিকে রয়েছে দু’টি ঝুলন্ত ব্রিজ। একটি দিয়ে পার হয়ে ওই পারের টিলায় অবস্থিত ফলদ উদ্যান চিড়িয়াখানা ঘুরে আরেকটি সেতু দিয়ে পার হয়ে আসা যায়।
নান্দনিক এসব ঝুলন্ত ব্রিজ খুবই উপভোগ্য। দোলনার মতো দুলুনি আপনার মনকেও দোলা দিয়ে যাবে। ঠিক মাঝামাঝি পৌঁছে গেলে মনে হবে এই বুঝি টুপ করে খসে পড়বে পানিতে। কিন্তু না, কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিলেও দুই দিকের শক্ত বাঁধন ঠিকই আগলে রাখবে আপনাকে।
পর্যটন কেন্দ্রটির আরেকটি উপভোগ্য বিষয় উপজাতিদের তাজা ফলের দোকান। সামনে বেঞ্চ পাতা তাতে বসে স্বল্পমূল্যে পাহাড়ি সতেজ ফলে উদরপূর্তি করতে পারবেন।
বৈচিত্র্যময় এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। এজন্য একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে ঢেলে সাজানোর কাজ। এরইমধ্যে মিনি চিড়িয়াখানার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে।
চিড়িয়াখানার কাজ শেষ হলে প্রধান ফটকের বিপরীত দিকের টিলায় থাকা সাফারি পার্ক সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে। আর সাফারি পার্কের জায়গায় স্থাপন করা হবে শিশু পার্ক। সেখানে থাকবে শিশুদের উপযোগী নানা রাইড।
বর্তমানে বিনোদনের খোরাক যোগানো ক্যাবল কারকে আরও আধুনিক ও দীর্ঘ করার কথা জানালেন বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আলীনূর খান।
বান্দরবান শহর থেকে এই পর্যটন কেন্দ্রের দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে খুব বেশি বড় নয়, আবার ছোটও বলা যাবে। বেশ কয়েকটি ছোট বড় পাহাড়বেষ্টিত এই পর্যটন কেন্দ্রে নানামুখী বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
টিলাগুলো বাহারি বৃক্ষে আচ্ছাদিত। জেলা প্রশাসন নতুন করে বৃক্ষরোপণ করেছে। নিত্যনতুন সাজে পর্যটক টানছে বান্দরবানের এই নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্রটি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
এসআই/আরআর