চারদিকে সবুজের পটভূমিতে স্বচ্ছ কালছে রঙের জলে লাল শাপলার এমন সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেবে যে কারো মন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একেক আবহে প্রকৃতির একেক রুপ গ্রামীণ জনপদকে করে তুলছে অপরুপ।
রুপসী বাংলার অপরুপ এ রুপের দেখা মিলবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা, সাতলা কিংবা আগৈলঝাড়ার বাঘদা গ্রামে। সময়ের সঙ্গে তাই এখানে বাড়ে পর্যটকদের আনাগোনা। বিলের শান্ত জলে ডিঙ্গি নৌকা। এতে আসন পেতে ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা, উপভোগ করেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আগস্ট মাসের শেষ থেকে মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার বিল দেখতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। যা চলে পুরো অক্টোবর মাসজুড়ে। এখন পুরো বিলে শাপলা না থাকলেও স্থানভেদে বিভিন্ন জায়গায় ফুটেছে প্রচুর শাপলা। তবে দুর্গাপূজার পর বিল পুরোপুরি শাপলায় ছেয়ে যাবে বলে দাবি স্থানীয়দের। আর তখনই পর্যটকদের চাপটা বেশি হয়। গত বছর থেকে বিলে শাপলা অনেকটাই কমে গেছে বললেন কয়েকজন পর্যটক। তাদের মতে, সময়ের সঙ্গে এসব এলাকা পর্যটক নির্ভর হয়ে উঠলেও পরিকল্পনার অভাবে শাপলা কমছে, আগাছা বেড়েছে।
প্রত্যেক বছর বিলে ঘুরতে আসেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম। তার মতে, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা, সাতলা ও আগৈলঝাড়ার বাঘদা গ্রামের বিল লাল শাপলার জন্য সারাদেশে বিখ্যাত। তবে এখানে শুধু লাল নয়; দেখা মিলবে সাদা শাপলারও। দেখা মিলবে নানান প্রজাতির পাখি। এছাড়া বিলের পানিতে জেলেদের মাছ ধরা, স্থানীয়দের গ্রামীণ জীবন তো অতিচেনা, স্বাভাবিক দৃশ্য। বিলে আগাছা বেড়ে যাওয়ায় শাপলা কমে যাওয়ার কথা বললেন পর্যটক ও চিকিৎসক সাবিহা আক্তার। তিনি বলেন, শাপলা কমলেও তা হিসেবে ধরা যায় না। তবে সবুজ আগাছার কারণে লাল শাপলার সৌন্দর্যটা হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য স্থানীয়দের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আগৈলঝাড়ার বাগধা গ্রামের বাসিন্দা মো. রবিউল জানান, বর্ষার শুরুতে বিলে পানি ওঠে এবং জমে যায়, যা থাকে ছয়মাস। সাধারণত জুলাই মাস থেকেই প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফোটে।
আগাছা বাড়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এমনিতেও জুলাইয়ের দিকে শাপলা কম থাকে, তবে দুর্গাপূজার পর এর পরিমাণ বাড়বে। কারণ দুর্গাপূজার আগে শাপলা বিক্রি করেন স্থানীয়রা। কিন্তু পূজার পরে এ শাপলা কেউ যেমন খায় না তেমনি বিক্রিও করেন না। আল আমিন নামে আরেক যুবক বাংলানিউজকে জানান, নির্দিষ্ট জন্মকাল জানা না থাকলেও শত বছরের বেশি সময় ধরে এ বিলে শাপলা ফুটছে। বিল এলাকায় শাপলার পাশাপাশি ছোট-বড় কৈ, খলিসা, টাকি, শোল, পুঁটিসহ প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরে পর্যটকের ভিড় বাড়ায় স্থানীয়রাও ভালো আয় করছেন। এরই মধ্যে বিল ভ্রমণের জন্য বেড়েছে নৌকা, বেড়েছে দোকানপাট। ভালো হয়েছে রাস্তাঘাটও।
যেভাবে যাবেন:
বরিশাল সদর থেকে উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিলে যেতে হবে মোটরসাইকেলে। সময় লাগবে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। বরিশাল থেকে সরাসরি উজিরপুরের সাতলা বাজার পর্যন্ত বাস চলাচল করে। এছাড়া বরিশাল থেকে থ্রি-হুইলারসহ যেকোনো যানবাহন ভাড়া করেও যাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৮
এমএস/এএইচ/এএটি