অবশ্য প্রথমে প্ল্যান ছিল কিশোরগঞ্জের হাওড় এলাকায় ঘুরে আসার। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার খুব ভোরে চলে এলাম এয়ারপোর্ট স্টেশনে।
আব্দুল্লাপুর থেকে বাসে করে চলে গেলাম মহেরা পুলিশলাইন। সেখান থেকে সিএনজিতে করে মহেরা জমিদার বাড়ি। এন্ট্রি ফি ৮০ টাকা। ঢুকে গেলাম ভেতরে। প্রকণ্ড বৃষ্টির কারণে আশ্রয় নিলাম কালীচরণ লজে স্থাপিত জাদুঘরে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে বৃষ্টি পড়ায় জাদুঘরের প্রতিটি বিষয়বস্তু সময় নিয়ে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ মিলল।
এই বাড়িটি ১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরের আদলে নির্মিত। লোককথায় প্রচলিত, কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই কলকাতায় লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ রোজগার করে চলে আসেন মহেরা গ্রামে। এরপর তারা সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেন। ব্রিটিশ আমলে জমিদার প্রথা চালু হলে আশেপাশের কিছু এলাকা কিনে নেয় তাদের সন্তানরা।
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী মহেরা জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ির কূলবধূসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে এখানেই মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতার পর জমিদার বাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং পরে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক সংস্কার কাজ চালিয়ে বাড়িটির আজকের এই রূপে দাঁড়িয়েছে।
জমিদার বাড়িতে চৌধুরী লজ, মহারাজা লজ, আনন্দ লজ ও কালীচরণ লজ নামে চারটি ভবন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নায়েব ভবন, কাচারি ভবন ও রানি মহল। প্রতিটি স্থাপনাতে শিল্পীর হাতে করা অসাধারণ কারুকার্য দেখে অভিভূত হতে হয়। জমিদার বাড়িটির সামনেই রয়েছে ‘বিশাখা সাগর’ নামে বিশাল এক দীঘি। কেউ চাইলে ভাড়া নিয়েও থাকতে পারবেন এই সুবিশাল বাড়িতে।
লাঞ্চ সেড়ে দেখলাম তখনও যথেষ্ট সময় হাতে আছে। তাই ভাবলাম বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু পাকশি ব্রিজ ঘুরে আসি। টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জগামী বাসে উঠে বিদায় জানালাম বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৮
এনএইচটি