টানা তিন ঘণ্টা পাহাড়ের গাঁ বেয়ে হাঁটতে হয় সে চূড়ায় যেতে। অনেকে ঘোড়ায় চড়ে অর্ধেক পথ গিয়ে তারপর হেঁটে যান।
মাটি ও পাথুরে পথ পাড়ি দিয়ে যদি ক্লান্ত হয়ে যান তবে টাইগার নেস্টের ভিউ পয়েন্টে কতক্ষণ জিরিয়ে মন ভরে দেখে নিতে পারেন আশ্চর্য এক সৃষ্টি। কীভাবে পাহাড়ের ভাঁজে বিহার স্থাপন করা হয়েছে। এবার আরও কিছুক্ষণ সিঁড়িপথ পেরুলেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে।
দীর্ঘ ক্লান্তির পথ শেষে পৌঁছে যাই টাইগার নেস্টে। উঁচু পাথুরে পাহাড়ের গা ঘেঁষে বানানো এই বিহার এক অনন্য সৃষ্টি। যতটুকু জানা যায় বৌদ্ধগুরু পদ্মসম্ভব অষ্টম শতাব্দীতে এখানে তিনবছর, তিন মাস, তিন সপ্তাহ, তিন দিন, তিন ঘণ্টা ধ্যান করেছিলেন। তিনিই ভুটানে বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তন করেন। টাইগার নেস্টে মন্দির তৈরি করা হয় ১৬৯২ সালে।
লোকগাঁথা অনুসারে, ঈয়েশি সোগ্যাল নামে একজন সম্রাজ্ঞী স্বেচ্ছায় গুরু পদ্মসম্ভবের অনুচর হন এবং গুরুকে সহায়তা করার জন্য নিজে বাঘিনীর রূপ ধারণ করেন। তিব্বত থেকে গুরুকে পিঠে করে নিয়ে আসেন টাইগার নেস্টে। এখানে গুরু ধ্যানস্ত হন। এবার ফেরার পালা। তবে ফিরতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। দেড় থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে আপনি নেমে যেতে পারবেন। অনেকটা ডুবন্ত সূর্যের মতো নিস্তেজ হয়ে গেছে আমাদের শরীর। কিন্তু আজকের তারিখে বরাদ্দ রাখা আরও একটি ভিউ দেখা বাকি।
সেদিন পারোকে বিদায় জানিয়ে রওয়ানা হই ভুটানের রাজধানী থিম্পু শহরে। হোটেল ঠিক করে ব্যাগ রেখে বেরিয়ে পড়ি ভুটান ভিউ পয়েন্টে। রাত তখন ৯টা বাজে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে আঁকা বাঁকা পথ ধরে আমরা পৌঁছে যাই। অসাধারণ এক দৃশ্য। উঁচু স্থানটি থেকে পুরো থিম্পু শহর দেখা যায়। মনে হবে আকাশের সব তারা নেমে এসেছে ভুটান শহরে। সমতল, পাহাড়, ঘরবাড়ি, সড়কপথ, গাড়ি সবখানের নানা রঙের আলো দেখে মন জুড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন >> ভুটান: রাজার দেশের অবাক রূপ-১
ক্লান্ত শরীর নিয়ে হোটেলে ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে অঘোর ঘুম। যেহেতু আজ পরিশ্রম হয়েছে, তাই ঘুমটাও কড়া ছিল। চতুর্থদিন ছিল থিম্পুর সাইট সিয়িং। আজকের দিনটি একটু আয়েশ করে কাটানো যাবে। খুব দূরে কোথাও যাচ্ছি না।
সকালে নাস্তা সেরে আমাদের প্রথম যাত্রা বুদ্ধ পয়েন্টে। বিশাল জায়গা জুড়ে বুদ্ধ পয়েন্টের অবস্থান। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রায় ১৭৭ ফুট উচ্চতায় এক বুদ্ধমূর্তি। বিহারের মাথার উপরে উপবিষ্ট মূর্তিটি থিম্পু শহরের প্রায় সব জায়গা থেকে চোখে পড়ে। সারি সারি সবুজ পাহাড়ের মাঝের একটি পাহাড়ে সোনালি রঙের বিশাল বুদ্ধ মূর্তিটি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। বিহারের আশপাশে আরও ১৭টি মূর্তি রয়েছে। শুনেছি চতুর্থ রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুকের ৬০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ভুটানের রাজধানী থিম্পুর কুয়েসেলফোদরং পাহাড়ে এই বিশালাকায় মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বুদ্ধ পয়েন্ট থেকে বেরিয়ে যাই জাতীয় মেমোরিয়াল কর্টেন। এটি মূলত স্মৃতিস্তম্ভ। ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দরজি ওয়াঙচুকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৭৪ সালে এটা তৈরি হয়েছিল। এর ভেতরের বিভিন্ন পেইন্টিং ও স্ট্যাচু বৌদ্ধ ফিলোসফির প্রতিবিম্ব।
পরের গন্তব্য ফোক হেরিটেজ মিউজিয়াম। এখানে মূলত ভুটানিদের ইতিহাসটা তুলে আনা হয়েছে। দেখেছি ক্লক টাওয়ার, চিড়িয়াখানা, স্টেডিয়াম। ভ্রমণকালে যে লোভটি থেকেই গেছে সেটি হচ্ছে ভুটানের কম বেশি সব জায়গায় আপেল গাছ। রাস্তার দু’পাশে দেখা যাবে গাছভর্তি আপেল। গাছ থেকে আপেল ছিঁড়ে খাওয়ার প্রচণ্ড লোভ ছিল।
চলবে…
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এডি/এএ