নৌকায় করে ভ্রমণের সময় আপনাকে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি মুগ্ধ করবে। বিলাইছড়ি উপজেলাটি চাকমা, মারমা এবং তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বসবাস করলেও পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপন আপনার মনকে পুলকিত করবে।
আর শিল্পীর আঁকা এমন ক্যানভাসের সৌন্দর্য রূপ দেখতে আপনাকে যেতে হবে বিলাইছড়ি উপজেলার পাংখোয়া পাড়ায়। এ পাড়ায় দেড় হাজার পাংখোয়া তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে বসবাস করছে দীর্ঘ বছর ধরে।
ওই এলাকায় প্রবেশ করলে আপনাকে স্বাগত জানাবে ‘ট্রাইবাল ভিলেজ’। ভিলেজটিতে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন সংগ্রামী নারীরা তাদের ঐতিহ্যর পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বয়স এসব নারীদের সংগ্রামী জীবনকে হার মানাতে পারেনি। ট্রাইবাল ভিলেজটি নদীর পাড়ে গড়ে ওঠায় প্রকৃতিকে দান করেছে আলাদা সৌন্দর্য। এখানে পাওয়া যায় পাংখোয়া সম্প্রদায়ের তৈরি গায়ের চাঁদর, মাফলার, মাথার হেডসহ নানা রকম পোশাক এবং তৈষজপত্র। সামর্থ্যানুযায়ী যে কেউ এসব পোশাক-পরিচ্ছেদ এবং তৈষজপত্র কিনে নিতে পারেন।
পাশাপাশি এখানে গড়ে তোলা হয়েছে দ্বিতল ভবনের একটি রেস্ট হাউস। ভবনের নিচতলাতে রয়েছে একটি মিলনায়তন। যেকোনো পর্যটক এখানে বেড়াতে এলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দিষ্ট ভাড়া দিয়ে রেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন।
রেস্ট হাউসে থেকে আপনি দু’টি সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। একটি হলো, কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি অপরদিকে প্রকৃতির নৈসর্গিক পাহাড়ের সৌন্দর্য। এছাড়া পুরো এলাকায় ঘুরে দেখতে পাবেন কোন নারী বসে সেই। সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত। বর্তমানে পাংখোয়া পাড়াটিতে পর্যটন সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
এ গ্রামের পাংখোয়া পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জুম কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। দেখতে পাবেন নানা রকমের চোখ ধাঁধানো মাচাং ঘর। পাশাপাশি এই সম্প্রদায়ের কিশোরীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করে অনুষ্ঠানে এলে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে তাদের রূপের সৌন্দর্য।
এছাড়া পাংখোয়া পাড়ায় যাওয়ার সময় উপজেলার পুরো হ্রদ এলাকায় দেখতে পাবেন এই জনগোষ্ঠির সংগ্রামী জীবন। সম্প্রদায়টি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হলেও নারীরাও পিছিয়ে নেই। নৌকা চালিয়ে বন থেকে লাকড়ি সংগ্রহ এবং যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক নারী। যদিও তাদের প্রধান পেশা জুম চাষ। পাশাপাশি বাঁশ, কাঠ বিক্রি করে অবদান রাখছে পরিবারে।
এই এলাকার প্রধান সমস্যা হলো-নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই আসতে চাইলে আপনাকে দু’টি সেনা চৌকিকে অবগত করে আসতে হবে এবং সেখানে আপনার পূর্ণাঙ্গ পরিচয় এবং আসার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানাতে হবে।
এখানকার আরেকটি সমস্যা হলো অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল না থাকায় নিজ উদ্যোগে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
ট্রাইবাল ভিলেজ’র প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে তিনকোনিয়া মৌজার হেডম্যান লাল ইং লিয়ানা পাংখোয়া বাংলানিউজকে বলেন, পাংখোয়া সম্প্রদায়কে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে ট্রাইবেল ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি।
এ ভিলেজটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের কারণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, অনেক পর্যটক এবং সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ এলাকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। কিন্তু পাংখোয়া সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি তাদের সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে পারিনি। সেই চিন্তা থেকে নিজেদের জাতিসত্তাকে তুলে ধরতে কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেঁষে গড়ে তুলেছি ‘ট্রাইবাল ভিলেজ’।
বিলাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পার্বত্যঞ্চল হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। এর মধ্যে পাংখোয়া পাড়া অন্যতম। তাই এ অঞ্চলে পর্যটকদের সমাগম ঘটাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, পাহাড়গুলোতে বিভিন্ন রাইডস স্থাপন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে এ এলাকা হবে একটি প্রসিদ্ধ পর্যটন নগরী।
এছাড়া বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভ মঙ্গল চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, বিলাইছড়ি উপজেলাকে আমরা স্বর্গ বলি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের উপজেলাকে মুগ্ধ করেছে। সরকার যদি আমাদের উপজেলায় সুনজর দেয় তাহলে এ এলাকার সুনাম চারদিক ছড়িয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
ইউবি