ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৬
ইন্দ্রার পাড় (লালমনিরহাট)-কুড়িগ্রাম শহর-রাজারহাট সদর (কুড়িগ্রাম জেলা) (২৯.২১ কিমি)
প্রভাতের নতুন সূর্যটা নতুন নতুন জেলায় দেখার পরম সৌভাগ্য হচ্ছে এ ক'দিনে। কাল যেহেতু জেলা সদর থেকে কিছুটা দূরে মণ্ডল ভাইয়ের বাসায় ছিলাম, সেহেতু আরেকটু আগেভাগেই উঠে পড়লাম।

মণ্ডল ভাইয়ের বাইকে চেপে কাল যেখানে হাঁটা শেষ করেছি তথা ইন্দ্রারপাড়ের উদ্দেশে যখন রওয়ানা দিলাম তখন সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। পথে থামলাম আদিতমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বন্ধু মাহফুজের সঙ্গে দেখা হতেই ঢাকা থেকে আনা পিঠা দিয়ে দারুণ আপ্যায়ন করলো ও। ইন্দ্রারপাড় থেকে যখন হাঁটা শুরু করলাম, তখন সূর্যালোকের আলোয় চারপাশ উদ্ভাসিত। অন্যদিনের চেয়ে ঢের দেরিতেই শুরু করেছি আজকের হাঁটা। কাঁঠালপাতা নিয়ে চরম ব্যতিব্যস্ত দুই ছাগলকে পাশ কাটিয়ে পৌঁছে গেলাম শিবরাম।

আরও পড়ুন>>পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)​

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলাখানিকটা এগিয়েই পড়লো দারুণ ব্যস্ত আর হাঁকডাকে সরগরম বড়বাড়ীবাজার। গুগল ম্যাপে ছোট্ট একটা শর্টকার্ট দেখে হাইওয়ে ছেড়ে নামলাম পাশের ছোট্ট রাস্তায়। এসব রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বেশ আরাম লাগে। অল্প এগিয়েই বিশাল গরুর হাট। এই সকালবেলাতেই বিকিকিনি জমে উঠেছে। বিক্রির অপেক্ষায় থাকা সুপারি চারাগুলো খুব নজর কাড়ছিল। আবার মহাসড়কে উঠে আইর খামার নামক জায়গায় পড়লো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের একটি স্কুল। সেলিনগর, খেদাবাগের পরই পৌনে দশটা নাগাদ প্রবেশ করলাম কুড়িগ্রাম জেলায়। 'হিটে আসা গাভীদের কৃত্রিমভাবে পাল দেওয়া হয়’- চওড়াবাজার নামক একটা জায়গায় সাইনবোর্ড দেখে আমিই হালকা হিট খেয়ে গেলাম!

আরও পড়ুন>>পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)

‘বেলা-অবেলা’ নামের বাস সার্ভিসের বাসের এইদিকে ভালোইজনপ্রিয়তা। রাস্তাজুড়ে এদেরই রাজত্ব। রাস্তার ওপাশে বেশ কজন স্কুলগামীছাত্র আমার বেশ-ভূষা দেখে মন্তব্য করলো- কল্লাকাডনি নি কোনো? একটা গাছ কেন্দ্র করে চৌকোণা বৈঠকখানায় পথিকের প্রতি উত্তরবঙ্গের ভাষায় উদাত্ত আহ্বান - আইসো বাহে, বসি। কুড়িগ্রাম ৯ কিমি লেখা মাইলফলক পার হতেই শেষ রাজারহাট উপজেলা। সদর উপজেলার প্রথম বাজার কাঁঠালবাড়ীতে এক ফার্মেসিওয়ালার আন্তরিক ডাকে সাড়া না দিয়ে পারা গেলো না। আমার উদ্দেশ্য জানতে পেরে ভদ্রলোক এই নাদানকে একটি স্যালুট ঠুকে দিলেন। খালিসা কালোয়া ছাড়িয়ে পড়লো দাশেরহাট আরডিআরএস বাজার। এনজিওর নামে এই প্রথম কোনো বাজারের নামকরণ দেখলাম।
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলাঅল্প এগোতেই একটা হিমাগার। নাম বাবর কোল্ড স্টোরেজ। আমার নাম ভাঙিয়ে যে কত লোকে ব্যবসা করে যাচ্ছে! উৎসাহীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরুতেই আরিফ ভাইয়ের ফোন। উনি দিনে দু-তিনবার ফোন করে আমার খবরাখবর নেবেনই। ত্রিমোহনী থেকে রাজারহাট সদর যাওয়ার রাস্তাটা দেখে নিয়ে চললাম কুড়িগ্রাম শহরের পানে। এর মধ্যেই ফোন করে আমার চলার পথের আপডেট নিচ্ছিলেন কুড়িগ্রামের বিশ্বজিৎ দা আর বিপ্লব ভাই। বাস টার্মিনাল, মধুর মোড় পেরিয়ে শাপলা চত্বরে পৌঁছাতেই ফুল দিয়ে কুড়িগ্রামে স্বাগত জানালেন বিশ্বজিৎ দা। কুশলাদি বিনিময় করে নিয়ে গেলেন প্রেসক্লাবে। বাংলানিউজের স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়ার সময় উনি বললেন আপনাকে আমি চিনি। আপনার নিউজ কালই আমি শেয়ার করেছি।

আরও পড়ুন>> পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)

ছোটখাট একটা ইন্টারভিউ শেষে রূপসী বাংলা হোটেলে জম্পেশ খাওয়া হলো হাঁস দিয়ে। ঘোল খাইয়ে খাওয়ার ইতি টানলেন বিশ্বজিৎ দা। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ ভাই বললেন, ধরলা নদী না দেখলে কুড়িগ্রাম দেখা সম্পূর্ণ হবে না। সোহাগ ভাইয়ের বাইকে চেপে শহর ঘুরিয়ে এনে আবার নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবটা বিদ্যুৎ ভাই দিতেই লুফে নিলাম। ধরলা নদী দেখে যথারীতি মন খারাপ। নদী যদি এরকম মরা হয়, কারই না দেখতে ভালো লাগবে? কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে চিরশায়িত সৈয়দ শামসুল হকের কবর আর উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে ঢুঁ মেরে আবার দু পায়ে চলা শুরু।

ত্রিমোহনী থেকে এবার বামে পথচলা। দু’দিকে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মাঝে মাঝে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইটভাটার চিমনি। একটু পর থেকেই মূল রাস্তার সঙ্গে সমান্তরালে সঙ্গী হলো রেললাইন। টগরই হাট থেকে দিনোবাজার হয়ে এসে পড়লাম এক খালের পাড়ে। তার পাড়েই ঠাঁটমারী বধ্যভূমি। যাদুর বাজার হয়ে রাজারহাট রেলস্টেশন পেরিয়ে মূল সদরে যখন পৌঁছেছি তখন সবে পৌনে পাঁচটা। ইমরান ভাইকে ফোন করতেই উনি এসে নিয়ে গেলেন পাশের চা দোকানে৷ বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাশেদুল ভাই উলিপুর থেকে ফিরতেই ওনার বাইকে চেপে বিএল স্কুললাগোয়া ওনাদের টিনের বাড়িতে। এখানেই আজকের রাত্রিযাপন।

আরও পড়ুন>> পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলাফ্রেশ হয়ে রাশেদুল ভাইয়ের সঙ্গে বেরুলাম আবার। কুড়িগ্রাম ফেরার পথে দেখা করে গেলেন রাকিব ভাই আর রাজু ভাই। খানিক পরে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তিস্তার হাওয়া খাবেন নাকি ধরলার হাওয়া? আমার ভোট তিস্তার হাওয়ার বাক্সে পড়তেই বাইক ছুটলো রাজারহাট থেকে ১০ কিমি দূরের বুড়ির বাজারে। আমি বসেছি সানি ভাইয়ের পেছনে। ভদ্রলোক দেখতে অবিকল গ্যাংস অব ওয়াসিপুর মুভির সুলতান চরিত্রে অভিনয় করা পংকজ ত্রিপাঠির মতো। গলায় ওরকমই একটা মাফলার। আর ওনার বাইকটাও দেখতে অবিকল মুভির সুলতান চরিত্রের বাইকের মতো। হাওয়া বিলাস করে রাশেদুল ভাইয়ের বাসায় যখন ঢুকছি ততক্ষণে সন্ধ্যার পর থেকে ৮-৯ কাপ চা-কফি পান করা শেষ।

চলবে...

আরও পড়ুন>> পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।