ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭) পথ...

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ২৭
শান্তিগঞ্জ বাজার (সুনামগঞ্জ)-সিলেট=৫০.৯২ কিমি
আজ সকালে প্রণবদারও কিছুক্ষণ হাঁটার কথা ছিল। আমি বেশ ভোরেই বেরিয়ে যাওয়াতে সেটা আর হলো না।

কালকের হাঁটা যেখানে শেষ করেছিলাম সেই শান্তিগঞ্জ বাজার থেকে শুরু যখন করেছি তখন প্রায় সাতটা। অল্প হাঁটতেই দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা। হিজল ও করচ নামের দু’টি বাড়ি দেখলাম। স্থানীয় এমপি সাহেব নিজের বাড়ির নামকরণ হাওরের এই দুই পরিচিত গাছের নামেই করেছেন।

সদরপুরের পরই কামরুপদলং। এ জায়গার নাম কোনোভাবে আসামের কামরুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সেটা জানা গেলো না। সাড়ে সাতটা নাগাদ পাগলা বাজার নামক জায়গায়। হাঁটাহাঁটি নামক এই পাগলামিতে বেরিয়ে পাগলা বাজারটাও দেখা হয়ে গেলো এ যাত্রা।

পাগলা স্কুলনতুন পিচ করা মসৃণ রাস্তা ধরে চলছি। নতুন পিচ সকালের নরম রোদে চিকচিক করছে। দাবরের মোড়ে পেয়ে গেলাম সুন্দর একটা ভাস্কর্য। সব ভাস্কর্যগুলোই সাধারণত শহরের মধ্যেই হয়। এটা ব্যতিক্রম। শহর থেকে বেশ দূরেই অবস্থান এর। অল্প এগিয়েই মহাসিং নামক নদী। মাছ বোঝাই ছোট নৌকা তীরে ভিড়েছে। একদল ব্যস্ত হয়ে পড়লো মাছ বাছাইয়ে।  

মহাসিং নদীদামোধরতপী বাজার পেরিয়ে রাস্তার পাশে দু-চারটা শাপলা চোখ এড়ালো না। বড় কাপন নামক জায়গা থেকে শুরু ছাতক উপজেলা। এ বাজারে বসে চা পান করতে করতেই দুই ড্রাইভারের মধ্যে বিশাল ঝামেলা। এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ালে বাজারের লোকেরা গিয়ে দু’জনকেই কয়েক ঘা লাগিয়ে পাঠিয়ে দিলেন দু’দিকে।

মনবেগ নামক গ্রামের ধারেই ঘানুরা নদী। রাস্তায় যেতে যেতে পিএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ব্যস্ততা অবলোকন করছি। একটা জিনিস দেখে ভালো লাগলো, এদের বেশিরভাগেরই চোখে-মুখে পরীক্ষা নিয়ে কোনো টেনশনই নেই। বয়স কম বলেই হয়তো সবাই কেমন জানি নির্ভার। বিশাল কড়ই গাছে ছাওয়া পথ ধরে চলে জাউয়া বাজার। বেশ বড়-সড় এই বাজারে নোয়াখালী বিভাগ চাই আদলে জাউয়া বাজার উপজেলা চাই লেখা প্রচুর ব্যানার-লিফলেটের ছড়াছড়ি। জাউয়া বাজার উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের কর্মকাণ্ডও চোখে পড়ার মতো। এই দাবির সপক্ষে ব্যানার-লিফলেটে পুরো এলাকা ছেয়ে ফেলেছে তারা। পরের কিলোমিটার দুই-তিনেকও এই দাবি বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান।

জাউয়া বাজার উপজেলা চাই!খিদ্রা কাপন পার হয়েচেচান বাজার। এই রাস্তায় শত শত সিএনজি অটোরিকশা। জাতুয়া বাজার ছাড়িয়ে ধারণ বাজার। এই ধারণ জায়গাটা ধারণ করে আছে অনেক পুরনো সব কড়ই গাছ। জালালপুর পয়েন্ট থেকে রাস্তার দু'পাশ খানিকটা ন্যাড়া। মাঝে মাঝে দু-চারটা আকাশমণি ছাড়া আর কিছু নেই। বুড়াইরগাঁও পার হয়ে সুহিতপুরে নির্মাণাধীন সুন্দর এক মসজিদ পেলাম চলতিপথে। একটু এগিয়েই গোবিন্দগঞ্জ বাজার। জমজমাট বিকিকিনির জায়গা। ব্যাংক, দোকান-পাট, বহুতল মার্কেট, কাঁচা বাজার ইত্যাদিতে সরগরম জায়গাটা। ছোট একটা সেতু পেরিয়েই বিশ্বনাথ উপজেলা। এতক্ষণ রাস্তার পাশের খালি জায়গাটাতে আরামসে হাঁটতে পারলেও এবার বেশ অসুবিধে হচ্ছিল। রাস্তার পাশের খালি জায়গায় প্রচুর বড় বড় নুড়ি ফেলা। হাঁটতে গেলে উপর-নিচে পা পড়ে পথ চলতে বড্ড অসুবিধা হয়।

এম এ খান সেতুদিঘলী, গোলচন্দ বাজার হয়ে লামাকাজী পয়েন্ট। সিলেট জেলাটাকে মনে হচ্ছে যেন পয়েন্টের জেলা। নানান জায়গায় পয়েন্ট। সুরমা নদীর উপর নির্মিত এম এ খান সেতুর ওপারেই সদর উপজেলা। নিচের নদীতে লোকে রং-বেরঙের ছাতা লাগিয়ে বড়শিতে মাছ ধরছে। পূর্ব হাউসা হয়ে বলাউরা আসতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। একে একে পেরোলাম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট, ঘোপাল বাজার। টুকের বাজার থেকে সঙ্গী হলো শাহজালাল ভার্সিটির ছাত্র জাহিদ। এখান থেকেই শহরের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। লোকের ভিড়ে ফুটপাতে পা রাখাই মুশকিল। । জাহিদের নানান কৌতূহলী প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে বিজিবি গেটের কাছে আসতেই মাশুক, প্রিয় ওরা চলে এলো। এক দফা চা পানের বিরতি দিয়ে বাকিরা বিদায় নিলেও মাশুক আর জাহিদ আরো খানিক সঙ্গ দিতে রয়ে গেলো।

সিলেটে আমার থাকার কথা বন্ধু তৌকিরের বাসায়। আমার মেডিক্যালের ব্যাচমেট তৌকির সিলেট মেডিক্যালের কোর্সে আছে৷ ও আসার আগেই চলে এলো ইমদাদ। সেও বেশ কিছুদিন ধরে এখানে। কানাইঘাট উপজেলায় তার পোস্টিং৷ খানিক বাদেই সাইফুলও এসে গেলো। ওদের বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তৌকিরের বাসার দিকে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা। এর মধ্যেই তৌকির বেরিয়েছে বলে রয়ে গেলাম ইমদাদের বাসাখানাতেই।

চলবে...

আরও পড়ুন...

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।