দিন ৩৩
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) - কুড়াইতলী (পলাশ, নরসিংদী) = ৪০.২৬ কি.মি.
সকালে হাঁটা শুরু করার পর থেকে শুধু গাড়ির হেডলাইটই চোখে পড়ছে। ঘন কুয়াশা আজ।
কুয়াশায় আবছা আবছা কী দেখলাম না দেখলাম সেটা নিয়ে আফসোস করেই কিশোরগঞ্জ জেলার সীমানা পেরিয়ে নরসিংদীতে ঢুকে পড়লাম। যত এগোচ্ছি কুয়াশা যেন ততই বাড়ছে। প্রথমেই পড়লো রায়পুরা উপজেলা। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগরের ফলক পড়লো এই উপজেলার শুরুতেই। রায়পুরার রামনগর নামক গ্রামেই উনার পৈতৃক ভিটা। এই অসম সাহসী বীরকে মনে মনে আরেকবার স্যালুট জানিয়ে আগে বাড়লাম।
মাহমুদাবাদের কাছে প্রথমবারের মতো আগুনের তাপ পোহাতে দেখলাম একদল ছেলে-বুড়োর দলকে। যদিও অনেক কুয়াশা তবে শীত খুব একটা অনুভূত হচ্ছে না। আরও কিছুদূর যেতেই নীলকুঠি নামক এলাকা। বেলাব উপজেলার সীমানায় প্রবেশ করলাম নারায়ণপুর থেকে। ইপিল ইপিল গাছের সীমের মতো দেখতে থোকা থোকা ফল ঝুলছে রাস্তার দুপাশে। দেখতে বেশ লাগছে। বিশাল এক সবজিবাজার পেলাম গকুলনগরের কাছে। লালশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি আর মুলারই প্রাধান্য।
নরসিংদীতে ধান চাষ তুলনামূলক কম। ধানক্ষেত চোখে পড়ছে কদাচিৎ। সবজি চাষ বেশ জনপ্রিয় এদিকে। আরেকটু এগিয়েই আমিনপুর নামক বাজার। সাড়ে আটটা নাগাদ মুক্তি পেলাম কুয়াশার সাদা ছায়া থেকে। আজ হাঁটা শুরু করার পর থেকেই খেয়াল করছিলাম চলতি পথে কোনো মুচির সন্ধান মেলে কি-না। কাল সেই আশুগঞ্জের কাছে জুতার একপাশ ছিঁড়েছিল। বেলা এতক্ষণ গড়িয়ে গেলেও কোথাও পেলাম না কাঙ্ক্ষিত মুচির দেখা। এর মধ্যেই পেরিয়ে এসেছি নোয়াকান্দি, দড়িকান্দি। প্রচুর সীম গাছ চোখে পড়লো।
নরসিংদী যে জন্য বিখ্যাত সেই কলাগাছের দেখা পাচ্ছিলাম না খুব একটা। টুকরি বোঝাই করে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া ধনেপাতার সুগন্ধে খানিক পর পরই মন ভালো হয়ে যাচ্ছে।
বারৈচার কাছে এক জায়গায় এক মোটর সাইকেল আরোহীকে ঘিরে দেখলাম প্রচুর ভিড়। ভেবেছি কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে বুঝি। কাছে গিয়ে দেখলাম ঘটনা অন্য। সাদা চামড়ার বাইক রাইডার দেখে লোকজন প্রচন্ড কৌতূহল থেকে ঘিরে ধরেছে। তরুণ ওই বাইকারের বাইকের গায়ে নানা দেশের পতাকা।
আরেকটু সামনে যেতেই আড়িয়াল খাঁ নদী। ড্রেজিং করে বালি তোলা হচ্ছে সমানে। আশেপাশের খালি জায়গাগুলোর দখল নিচ্ছে নদী থেকে সদ্য তুলে আনা বালি। মরজাল বাসস্ট্যান্ডেই উয়ারী বটেশ্বর প্রত্নস্থলে যাবার সাইনবোর্ড দেখলাম। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে এই ধরনের জায়গায় গেলে খানিকটা আশাহত হতে হয়। তাই সে পথে পা না বাড়িয়ে পা বাড়ালাম কামারটেকের দিকে। এখান থেকেই শুরু হয়ে গেলো শিবপুর উপজেলা।
কামারটেক বাজারে ঢোকার মুখেই সবুজ পাহাড় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এই নামকরণের শানে নুযুল আর জানা হলো না। চৈতন্যা, সৃষ্টিগড় পার হয়ে হাজীবাজারের রাস্তাটা বেশ ছায়াঘেরাই পেলাম।
সাড়ে বারোটা নাগাদ পেলাম অতি কাঙ্ক্ষিত মুচির দেখা। শেষ কবে কোন পেশাজীবী দেখে এত খুশি হয়েছি মনে পড়ে না। কুন্দারপাড়ায় জুতা তার হাতে সঁপে দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। সবুজ পাহাড় কলেজের রেশ কাটতে না কাটতেই সাক্ষাৎ হলো পাহাড়িয়া নামক নদীর সহিত। ঘাশিরদিয়ার কাছেই রাস্তার দুপাশে প্রচুর ট্রাক থামানো। বোঝা গেলো এইদিকের খাবার হোটেলগুলোর মূল খদ্দের ট্রাক ড্রাইভাররাই। একে একে পার হলাম শাষপুর, ইটাখোলা, সৈয়দনগর। বড়ইতলার কাছে মহাসড়ক থেকে ডানে ঢুকে পড়লাম। পুরোদিনে এই প্রথমবার ছোট রাস্তায় হাঁটার সুযোগ মেলাতে আমি মনে মনে খুশিই হলাম। কোনো একটা মাজারের ওরশ উপলক্ষে বিশাল মেলা পেরিয়ে উত্তর কারারদী।
রাস্তার দুপাশে ছোট বাঁশঝাড় আছে এদিকে। সেসবে চোখ বুলাতে বুলাতেই মধ্য কারারচর। পলাশ উপজেলার শুরু গজারিয়া বাজার থেকে। নরসিংদীর বিখ্যাত কলাবাগান এখানে প্রচুর।
একরের পর একর জমিতে শুধু এক ধরনের গাছ, কলাগাছ। আরও কিছুটা এগিয়ে রাস্তাটা একেবারে অন্যরকম হয়ে গেলো। গাছের সবুজ ডাল-পালা মাথার উপর তৈরি করেছে পুরু সবুজের ছাউনি। সেসব ভেদ করে খুব কম পরিমাণেই সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারছে মাটিতে। হাতের বামে রাস্তার সমান্তরালে কাটা একটা খাল বেশ কিছুদূর পর্যন্ত সঙ্গ দিল। কালির হাটের পর থেকে রাস্তার দুধারে মাছ চাষের পুকুরই নজরে আসছে বেশি। আর তার পাড়ে অতি অবশ্যই কলাগাছ।
কুড়াইতলী নামক বাজারে পৌঁছে আজকের দিনের জন্য পদযুগলকে ভারমুক্ত করলাম। ততক্ষণে বারকয়েক যোগাযোগ হয়েছে সায়মন ভাইয়ের সঙ্গে। ভাইয়ের বাসাতেই আজ রাত্রিযাপন। আমার মেডিক্যালের সিনিয়র এই ভাইয়ের আবাস নরসিংদী রেল স্টেশনের কাছেই পশ্চিম ব্রাহ্মন্দীতে।
ভেলানগর আসতেই ভাই নিতে এলেন। রিকশায় উনার বাসার দিকে এগোতে এগোতে শহরের উল্লেখযোগ্য দেখার স্থানগুলো চেনাচ্ছিলেন। ফ্রেশ হয়ে আরেক চক্কর দিতে বেরিয়ে পড়লাম ভাইয়ের সঙ্গে। মার্কাজ মসজিদের কাছে উনার ছোটভাইদের গ্রুপের সঙ্গে একদফা আড্ডা দিয়ে সৈকত ভাইয়ের বাইকে শহরের বাকি দেখার স্থানগুলো দেখা শেষ করে গেলাম বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভান্ডারে। নেপাল ঘোষের এই মিষ্টি এ অঞ্চলে বিখ্যাত।
গরম গরম মিষ্টি জিভে ছোঁয়াতেই গলে গেলো যেন। মিষ্টির রসে দাড়ি মাখামাখি করে সায়মন ভাইয়ের বাসায় ফিরতে রাত নয়টা।
চলবে…
আরও পড়ুন...
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০
এইচএডি/