দিন ৪১
জীবননগর ( চুয়াডাঙ্গা) - ঝিকরগাছা ( যশোর) = ৫৪.৫৮ কি.মি.
মাহবুব ভাইয়ের পাঠানো সাবিত্রী মিষ্টি খেয়েই সকালে যাত্রা শুরু। জীবননগর থেকে অনেক দিকেই যাওয়া যায়।
ছোট রাস্তার প্রথম অংশটুকু লাল ইটের খোয়া বিছানো। কিছুদূর পর সেটাই হয়ে গেলো মাটির রাস্তা। অসংখ্য খেজুর গাছ রাস্তার দুধারে। কোনো বিশেষ কারণে হয়তোবা একটা নির্দিষ্ট জমিতে সব বক জড়ো হয়েছে। আশেপাশের জমিতে আবার কোনো বক নেই। শানেনুযূল কী কে জানে এর। বাড়িঘর নেই খুব একটা।
খেজুর গাছের ফাঁক গলে সূর্যদেবের উদয় দেখতে দেখতে পথ চলা। আরেকটু ভেতরের দিকে যেতে রাস্তার একপাশে বেশ কিছু ইটভাটা আর অন্যপাশে ফসলি জমি। টালির তৈরি একগুচ্ছ বাড়িঘর দেখলাম তারণীবাসে। এরপর আবার চারপাশে ফসলি জমি। খেজুরের রস জ্বাল দেওয়ার বিশাল আয়োজন চলছে এক উঠানে। মাকে ঘিরে রেখেছে তার ছানা-পোনারা।
গাদা ফুলের সুন্দর একটা খেত পেরিয়ে দূর্গাপুর। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শুরু এখান থেকেই। আরও খানিকক্ষণ পা চালিয়ে বেগমপুর বাজার। এখান থেকেই হাসাদাহ-মহেশপুরে সড়কে। আজ অনেকটুকু রাস্তা এ পথেই পাড়ি দেবো। অসংখ্য বট গাছ রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
বৈঁচিতলা পেরিয়ে নওদাগ্রাম নামক টিনের বাজার। আরেকটু এগিয়েই জলিলপুর পাঁচ মাথার মোড়। ক্ষণে ক্ষণে শুনতে হচ্ছে লোকের ছুঁড়ে দেয়া প্রশ্ন- বাড়ি কনে? চড়কতলা বাজার হয়ে পাতিবিলা আসতেই চোখ আটকালো গরুর গাড়িতে। কী সুন্দর দুলকি চালে দুলতে দুলতে চলছে। এদিকে ফিলিং স্টেশন না থাকায় প্রত্যেকটা টং দোকানই যেন মিনি ফিলিং স্টেশন। চায়ের পাশাপাশি সেভেন আপ আর কোকাকোলার বোতলে এরা সবাই নানা রকম তেল বিক্রি করে।
বেলেমাঠ পার হতেই খেজুর গাছ আরও ঘন সন্নিবেশিত হয়ে এলো। খেতে দেদারসে লাগানো হয়েছে ভুট্টা, কলা আর লাউ। জেলা প্রশাসনের সৌজন্যে নির্মিত কয়েকটা বজ্র নিরোধক যাত্রী ছাউনি দেখা গেলো। ডুবলি বিল নামক সুন্দর একটা বিল পেরিয়ে কাঁদবিলা মোড়। যশোরের চৌগাছা উপজেলায় পা রাখলাম এখান থেকেই।
সাইকেলে স্পিকার বাজিয়ে মলম বিক্রি করছে এক লোক। তার ভাষ্যমতে, এই মলম ঘাড় ব্যথা, কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা ইত্যাদিতে কাজ করে। শুধু মাত্র মনের ব্যথা উপশম করতে পারে না এ মলম। ঝাউতলা পার হতেই বিশাল সব কড়ই গাছের ডাল-পালা সঙ্গী হলো মাথার উপরে। একে একে পার হলাম ফাঁসতলা বাজার, চাঁদপাড়া, বুন্দলীতলা, টেংগুরপুর বাজার।
রাস্তার বাঁ পাশে বিশাল এক গরুর হাট। সেটা পেরিয়েই কংশারীপুর। চৌগাছা মূল বাজারের আগে আছে ছোট্ট একটা সেতু। সেটা অতিক্রম করতেই মনে হলো চরম ব্যস্ত একটা জায়গায় প্রবেশ করলাম। গাড়ির হর্ণ, দোকানিদের হাঁক-ডাক, লোকের ব্যস্ত-সমস্ত কথোপকথন ইত্যাদি মিলে কান পাতা দায়।
চৌগাছা উপজেলা সদর হলেও এর কলেবর বিশাল। ডানে বাঁক ঘুরে আমি ঝিকরগাছার রাস্তা ধরলাম। ছুটিপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে মনমথপুর। যেতে যেতে শুধু গরু বোঝাই নসিমন চোখে পড়ছে। গন্তব্য সম্ভবত কংশারীপুরের সেই গরুর হাটই।
কিছুটা পথ এগোতেই পড়লো ফতেপুর বাওড়। হাওড়ের সঙ্গে আমরা বেশ পরিচিত হলেও বাওড়ের সঙ্গে সে অর্থে পরিচিত নই আমরা। পুরাতন নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মাধ্যমেই এসব বাওড়ের সৃষ্টি।
এই রাস্তাটা বেশ মসৃণ। রাস্তার ধারে বাজারের সংখ্যাও হাতে গোনা। গরীবপুর পার হয়ে জাহাঙ্গীরপুরের দিকে যেতেই এক লোক সাইকেলে আচমকা ব্রেক কষে পাশে দাঁড়ালো। একটা সালাম দিয়েই আবার দূরে মিলিয়ে গেলো। খানিকটা অবাক হলাম। সাধারণত সালাম দিয়েই প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা শুরু করে লোকে। এই লোক ভিন্ন।
আমজামতলা বাজারে প্রকান্ড একটা জাম গাছ দেখলেও নেই আম গাছ। পাশাপোল বাজারের কাছেই দেখলাম আরও তিনটি গরুর গাড়ি। খড় বহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এই গাড়িগুলো। প্রচুর কাঠবিড়ালি এ অঞ্চলে। মাঝে মাঝেই দ্রুতলয়ে রাস্তা এপার-ওপার করছে।
খলসী বাজার পেরিয়ে মোহাম্মদপুর মোড়। ঝিকরগাছা উপজেলার সীমানার প্রবেশ এখানেই। অমৃতবাজার নামক জায়গার ইউনিয়নের নাম পার্শ্ববর্তী জেলা মাগুরার নামে। মিশ্রিদেয়াড়া বাজারে আমাকে ভারতীয় নাগরিক ভেবে এক তরুণ প্রশ্ন করল -হেই বন্ধু, কাহা যা রাহো আভি? ম্যায় ঝিকরগাছা যাচ্ছি- বলে উত্তর দিয়ে পা চালিয়ে জামশেদ মোড়। বেলেবটতলা পার হতেই রাস্তার বাম পাশে সুন্দর ফুটপাত বানানো।
উপজেলার সদরে এত সুন্দর ফুটপাত সহজে চোখে পড়ে না। কাটাখাল বাজার হয়ে ঝিকরগাছা বাস স্ট্যান্ডে এসেই পেয়ে গেলাম বান্না ভাইয়ের ছোট ভাই আহাদ ভাইকে। বান্না ভাইয়ের বাড়িতেই আজ রাতে পিঠ ঠেকানোর এন্তেজাম।
এন্ডোমন্ডো অ্যাপ জানাচ্ছে ততক্ষণে পাড়ি দিয়েছি ৫৪.৫৮ কিলোমিটার পথ। একটু পরেই বান্না ভাইয়ের বন্ধু নয়ন ভাই চলে এলেন এপাচি বাইকে চেপে। পোস্ট অফিসের সামনে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বান্না ভাইয়ের সব বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব চলছিল। ওখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সোজা বান্না ভাইদের বাড়ি। বিশাল কম্পাউন্ডে ঘেরা বাড়িতে থাকেন মাত্র তিনজন। রাতের খাবারে সবচেয়ে দারুণ আইটেমটা ছিল আমড়া দিয়ে রান্না করা ডিমের তরকারি।
চলবে…
আরও পড়ুন>>
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এইচএডি/