ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান কলাক্ষেত্রে একদিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান কলাক্ষেত্রে একদিন বামে- প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রেবতি দেবী ও ডানে- সঙ্গীত শিক্ষণ প্রক্রিয়া ও শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী

চেন্নাই থেকে: অনেকটা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গড়া শান্তি নিকেতনের আদলে তৈরি। সবুজ গাছ-পালা যেমন আছে, তেমনই রয়েছে নানা ধরনের অল্প উঁচু ভবন। নগর জীবনের কোলাহলমুক্ত বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সাগর আর পাহাড়ের কোলে অবস্থিত চেন্নাইয়ের কলাক্ষেত্র ফাউন্ডেশন।

শিল্পকে ব্যক্তি, জাতীয়, ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার জন্য এখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয়। তেমনই এ নিয়ে চলে গবেষণা।

সঙ্গীত নৃত্যনাট্য চিত্রকলা এবং ভরত নাট্যমকে প্রাধান্য দিয়ে সমানতালে চলে শিক্ষা-শিক্ষণ প্রক্রিয়া। সেই সঙ্গে অশ্লীলতা বর্জিত শিল্পচর্চার প্রত্যয়ে দৃঢ় এই আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

চেন্নাই দক্ষিণ ভারতের প্রবেশদ্বার। তামিলনাড়ুর রাজধানী। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অনুচ্চ পাহাড় আর সমতল ভূমি ঘিরে বেশ ব্যস্ত শহর এটি। সাগরের তীর ঘেঁষা বেলাভূমির ১০০ একর বনাঞ্চল নিয়ে ১৯৩৬ সালে এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় কলাক্ষেত্র।

ভারত সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলটি সোমবার (০৯ মার্চ) শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান কলাক্ষেত্র পরিদর্শন করে। ঘুরে দেখে প্রতিষ্ঠানটির সাজানো-গোছানো ক্যাম্পাস। সঙ্গে ছিল শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান কলাক্ষেত্র-এর শিক্ষার্থীরাএই ক্যাম্পাসে এসে মনে হচ্ছিল এখানকার শিক্ষার্থীরা যেন একেক জন ভরত-নাট্যমের প্রবাদপ্রতিম রুকমিনি দেবীর সাক্ষাৎ দিয়েছেন! শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এ প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন রুকমিনি দেবী।

দক্ষিণের রক্ষণশীল নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে জাত-পাতের তোয়াক্কা না করে ভিনদেশি বিধর্মীকে বিয়ে করায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল সমগ্র অঞ্চলজুড়ে। কিন্তু রুকমিনি অনড়। স্বামীর আগ্রহে এবং নিচের একাগ্রতায় ভরত নাট্যম নৃত্যশিল্পকে আধ্যাত্মিক আদলে উঁচুমানের ধ্রুপদী নৃত্যশিল্প হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দান করেন তিনি।

এরই ফলশ্রুতিতে আজ হয়তো কলাক্ষেত্র প্রাচীন ভারত এবং গ্রীসের গুরুবাদী শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত করেছে। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কলাক্ষেত্র নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রেবতি দেবী।
শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনাএর আগে সকাল ১০টার দিকে হোটেল থেকে কলাক্ষেত্রে পৌঁছামাত্রই স্বাগত জানালেন তিনি। এরপর নিজে সাংবাদিকদের ব্রিফ করলেন ও প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিরেক্টরকে ডেকে বললেন, শিল্প-সংস্কৃতি শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রটি পুরো ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাতে। এ সময় ক্যাম্পাসের এক কোণে পদ্মপুকুরের পাশেই গাছের ছায়ায় শিক্ষার্থীদের নৃত্যের ক্লাস চলছিল।

রেবতি জানান, ক্যাম্পাসের একই আঙ্গিনায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকেন। কলাক্ষেত্রের সবুজ পরিবেশে গড়ে উঠেছে সব অনুচ্চ শ্রেণিকক্ষ, অফিস কক্ষ, ছাত্রাবাস, বসবাসের ঘর।

সরেজমিনে দেখা গেল, ক্যাম্পাসের কোনো ঘরই বৃক্ষশাখা উপচিয়ে আকাশচুম্বী নয়। ফলে প্রকৃতির শোভা এখানে ধরা দিয়েছে স্নিগদ্ধতা বয়ে। পুরো ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো গড়ে তলতে এখানে কোনো পাহাড় কেটে করা হয়। পুরোটাই অক্ষত রাখা হয়েছে। এখানেও রুকমিনি দেবী একক এবং অদ্বিতীয়।
শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান কলাক্ষেত্রে সঙ্গীত শিক্ষণ প্রক্রিয়াকলাক্ষেত্র-এর বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় এর নাট্যশালায়। রেবতির ভাষ্য অনুযায়ী, কেরালা মন্দিরের অনন্য সাধারণ স্থাপত্যের আদলে কলাক্ষেত্রের থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।

পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে নিতান্তই স্বল্পপরিমাণ সিমেন্ট ও লোহা ব্যবহার করা হয়েছে এটি নির্মাণে; রয়েছে কাঠের ব্যবহার। ফলে আধুনিক প্রযুক্তির শব্দ-নিয়ন্ত্রণ অ্যাকসটিক এবং আলোকসম্পাত যথাযথভাবে ক্রিয়াশীল থাকে।
বাম থেকে শিক্ষক রেখা ও এক শিক্ষার্থী।  ছবি: বাংলানিউজএই থিয়েটারে প্রাচীন-ভারতীয় রীতিতে বসার ব্যবস্থা রয়েছে- পাটি বিছিয়ে বা খালি মেঝে বা ফ্লোরে বসা যায় যেমন, তেমনই সোফা-চেয়ারেও বসা যায় অর্থাৎ চেয়ারগুলো স্থায়ীভাবে সেট করা বা বসানো নেই।

প্রায় সময়ই এখানে চলে পরিবেশনা। নাট্যমঞ্চ সংলগ্ন এলাকায় যেতেই মনে হলো যেন কোনো সুরের রাজ্যে এসে হাজির হয়েছি। চারদিকে ভেসে আসছিল মোহনীয় বাঁশির সুর।

রেবতি দেবীরেবতি বললেন, ১৯৯৩ সালে কলাক্ষেত্র ভারতের লোকসভায় ‘কলাক্ষেত্র ফাউন্ডেশন অ্যাক্টের’ মাধ্যমে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে এটি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।

কলাক্ষেত্র ক্যাম্পাসে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসান্ত থিয়োসফিক্যাল হাইস্কুল, মারিয়া মোন্টিসরি শিশু নিকেতন, বেসান্ত অরুনডালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে দেশ-বিদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের সংস্কৃতিমনা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।