দিন- ৪৪
খুলনা - কালিয়া ( নড়াইল) - গোপালগঞ্জ = ৫০.৪৬ কি. মি.
এ যাত্রায় অনেকের বাড়িতেই মধুর বিড়ম্বনায় পড়ে খুব সকালেও খেয়ে বের হয়েছি। সৈকতের বাড়িতে খেয়ে বের হওয়ার সঙ্গে নিয়েও বের হলাম।
যাত্রা শুরু করলাম মহসিন মোড় বাস স্টপ থেকে। আবীর বেশ আগেভাগেই এসে অপেক্ষা করছিল সেখানে। আমার সঙ্গে সৈকতও আছে। মিনিট দুয়েকের মধ্যে সুমিতের নেতৃত্বে চলে আসলো কুয়েট এডভেঞ্চার ক্লাবের সদস্যরা। ওরা বেশিরভাগই এসেছে সাইকেলে চেপে। দল-বল নিয়েই হাঁটা শুরু। এই সকালবেলাতেই এই রাস্তায় অনেকগুলো ট্রাক। ছোটখাটো একটা জ্যামেই পড়ে গেলাম। ট্রাকের ফাঁক গলে বেরোতেই বেশ কটা জুটমিল। এই অঞ্চলে ব্যক্তি মালিকানাধীন জুট মিল আছে বেশ কিছু।
আরও কিছু ট্রাকের ফাঁক গলে পৌঁছালাম রেলিগেট ফেরীতে। পেরোতে হবে ভৈরব নদী। এদিকে ব্রিজ না থাকায় ভরসা ফেরী। আমরা দুটো পা সমেত আর সুমিতরা নিজেদের পায়ের সঙ্গে সাইকেল সমেত ফেরীতে। আবীর বাড়ি ফিরবে এখান থেকেই। নদী পেরিয়েই দিঘলিয়া উপজেলার গন্ডিতে। কুয়েট এডভেঞ্চার ক্লাবের বাকি সদস্যরা যোগ দিল নদীর ওপারে।
ছাত্রাবস্থায় কেউই ছুটির দিনে সহজে ঘুম থেকে উঠতে চায় না। সে জায়গায় এতগুলো ছেলে ভোরে উঠে চলে আসায় খানিকটা অবাকই হলাম আমি। গল্পে গল্পে বেশ কিছুদূর এগিয়ে ওরা বিদায় নিল বারাকপুর বাজার থেকে। সৈকতও ওদের সঙ্গী হলো। রয়ে গেলো সুমিত আর শাকিল। ওরা দুইজন সাইকেল নিয়েই হাঁটছে। পথে এক মুদি দোকানে লেখা - ‘আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নাই, নগদ ছাড়া বাকি নাই। ’
খানিক এগিয়ে ভৈরব নদী দুই ভাগ হয়েছে। নদীর পাড়ে বেশ কিছু পানের বরজ। বরজ থেকে পান উঠিয়ে বাজারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ছোট এই রাস্তাটায় হাঁটতে বেশ দারুণ লাগছে। ভ্যান আর মোটরসাইকেলের শব্দ ছাপিয়ে মাঝে মাঝেই কানে আসছে পাখির ডাক। সাইকেলে চুল কিনতে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে এক ফেরিওয়ালা। শাকিল গিয়ে জেনে এলো প্রতি কেজি চুলের দাম পাঁচ হাজার টাকা।
গত জানুয়ারিতে আমার লম্বা চুল কাটার পর সেই চুল কেন সংগ্রহে রাখলাম না সেটা নিয়ে বড্ড আফসোস হলো। আড়ুয়া বাজারে সামনে পড়লো রুপসা নদী। ছোট একটা খেয়া নৌকায় যেতে হবে ওপারে।
সুমিত আর শাকিল বিদায় নিতেই আমি খেয়া নৌকায়। নদীর অপর পাড়ের রাস্তা আরও অপরূপ। মাথার উপর পুরু সবুজের ছাউনি ভেদ করে রোদ মাটিতে পৌঁছাতে পারছে না। মাথার হ্যাটটা হাতে নিয়েই হাঁটছি। নদী পেরিয়ে কিলোমিটার দুয়েক এগিয়েছি কী এগোইনি, এর মধ্যেই দ্রুতগতিতে সাইকেল চালিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে এলো সুমিত আর শাকিল। আমার জন্য ওদের একটা টিশার্ট এনেছিল সুমিত। সেটা বিদায় নেওয়ার সময় দিতে ভুলে যাওয়াতেই আবার নদী পার হবার হ্যাপা নিলো ওরা।
নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায় ঢুকে পড়লাম পিরোলী থেকে। গাজীরহাট নামক বাজারের কিছু অংশ পড়েছে কালিয়াতে আর কিছু অংশ খুলনার দিঘলিয়াতে।
সামনের দিকে যেতেই রাস্তার একেবারে গা ঘেঁষে মধুমতী নদী। দেশের অন্য অনেক নদীর মতো মরা নয় এই নদী। শীতের শুরুতেও দুকূল ছাপিয়ে বয়ে চলছে যেন। ভোমবাগ হয়ে বিষ্ণুপুর। এদিকের রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। মাধবপাশা বাজারের কাছে বাঁক নিয়ে রাস্তা থেকে দূরে সরে গেছে মধুমতী। বাবুপুর বাজার থেকে হাতের ডানের ছোট রাস্তাটা এগিয়েছে গ্রামের দিকে। এই জায়গাটা বেশ ইউনিক। দুপাশে মাটির রাস্তার মাঝে সরু খাল। খালের শোভা বাড়াচ্ছে সাঁকো আর নৌকাগুলো। সুপারি গাছের খোল নিয়ে তিন শিশুকে মহানন্দে খেলতে দেখে ক্ষণিকের জন্য শৈশবে ফিরে গেলাম। মজার ব্যাপার হলো এইদিকের পিচ্চি বাচ্চাদের কারো উর্ধাংগেই কাপড় নেই।
ছোটকালিয়া তেমাথা মোড়ের পর থামালেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন তার সহকর্মীদের সঙ্গে। আমার পদযত্রার উদ্দেশ্য নিয়ে বলার সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। কড়ই গাছের কান্ডে বিশাল সব ফার্ণ আর পরগাছা। জয়পুর থেকে একটা রাস্তা গেছে তেরখাদার দিকে। আমি ধরলাম চাপাইলের রাস্তা।
কালীনগর হয়ে কলাবাড়ীয়া বাজারে কাছে এক লোকের ডাকে থামলাম। ‘ও বিদেশী ভাই’- বলে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেন ভদ্রলোক। ‘ক্যান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড বাংলা। ইংলিশ প্লিজ’ - বলে আমিও খানিকটা দুষ্টুমি করে নিলাম। বাঐসোনা বড়ঘাট থেকে খাল পেলাম ডানপাশে। এই অংশ নড়াইলের নড়াগাতী থানার অন্তর্ভুক্ত। এক স্কুল মাঠে জমজমাট ভলিবল খেলা হচ্ছে। এই খেলার চল এখন খুব একটা নেই। মুগ্ধতা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দেখলামও। গত কদিনের মতো আজও বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক পোলে ডুবুরির ফোন নম্বর দেওয়া। আজ অবশ্য এর রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হলাম। এই ডুবুরিরা পানিতে ডুবে যাওয়া গৃহিণীদের স্বর্ণের গয়না উদ্ধার করে।
এ রাস্তায় গাড়ি চলাচল খুব একটা নেই বলে এদিকের ছেলেরা রাস্তাতে বসেই আড্ডা দেয়। যোগানিয়া বাজার নামক বেশ বড়-সড় একটা বাজার পেরোলাম। এ অঞ্চলের মুদির দোকানগুলো দেখতে খাঁচার মতো। পুরোটাই লোহার গ্রীল দেওয়া, শুধু টাকা আদান-প্রদানের জন্য ছোট্ট খোপ আছে একটা। পহরডাঙ্গা বাজার পৌঁছালাম সূর্য ডুবছে এমন সময়ে। আরও খানিকক্ষণ পা চালিয়ে মধুমতি নদীর উপর নির্মিত চাপাইল সেতুতে। এখান থেকেই গোপালগঞ্জ জেলার শুরু। সেতু পেরিয়ে ফোন করলাম পারভেজকে। ওর মেসেই আজ থাকার ব্যবস্থা।
সেতুর উপরেই পারভেজ অপেক্ষা করছিল রিফাত, অর্পিতা আর জুনায়েদকে নিয়ে। সেতুর কাছের প্রস্তরফলকে আজকের মতো এন্ডোমন্ডোটা অফ করে অটোতে চেপে গোপালগঞ্জ মেডিক্যালে। মেডিক্যালের গেটে নামলেও এরা সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওদের পরিচিত এক টংয়ে নিয়ে গেলো। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় জায়গাটা গমগম করছে। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হলো আর তোলা হলো অনেক সেলফি।
চলবে...
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২০
এইচএডি/