দিন ৪৬
বাগেরহাট-পিরোজপুর-রাজাপুর (ঝালকাঠি)= ৪৭.১৭ কিমি
খান জাহান আলীর মাজারের বার্ষিক ওরশ শুরু হয়েছে মাত্রই। হাজারো মানুষের ঢল আর উচ্চৈঃস্বরে বাজতে থাকা গানের ডামাডোলে ঘুম নিয়ে খানিকটা চিন্তিত ছিলাম।
খেজুর গাছই দখল করে রেখেছে রাস্তার দু'ধার। দু’পাশ বেশ নয়নাভিরাম হলেও রাস্তার অবস্থা বেশ ভয়াবহ। খোয়ার উপরে কোনোরকমে আলকাতরার হালকা আস্তরণ পিচের কালচে ভাবটা এনেছে শুধু। বেমরতায় পেলাম চারণ কবি শামসুদ্দীন গেট। ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম কবিতা লেখেন তিনি। কবিতার নাম 'রাষ্ট্রভাষা'। অল্প এগিয়েই ফতেপুর বাজার। বাজারের শেষ মাথার ছোট্ট সেতুটার ওপাশের বাজারটার নাম চন্দ্রপাড়া বাজার। কচুয়া উপজেলার সীমানা এখান থেকেই শুরু। গোয়ালমাঠ বাজারের পরই সাইনবোর্ড বাজার। একটা চৌরাস্তা আছে এখানটায়। ডানের রাস্তা বরাবর গেলে মোড়েলগঞ্জ সদর আর রায়েন্দা। কচুয়ার দিকে এগিয়েছে বামের রাস্তা। আমার গন্তব্য পিরোজপুর বলে নাক বরাবর সোজা রাস্তাই ধরলাম। সাইনবোর্ড বাজারের পর থেকে রাস্তা মোটামুটি ভালো।
বকুলতলা বাজার থেকে অনেক মাছের ঘের দু'পাশে। ঘের থেকেও বেশি আকর্ষণীয় লাগছিল ঘেরের চারধারে লাগানো সার বাঁধা নারকেল গাছগুলো। বাধাল বাজারের শেষ মাথায় ছোট্ট একটা কালভার্ট পেরিয়ে বলভদ্রপুর। এর অবস্থান মোড়েলগঞ্জ উপজেলায়। বনগ্রাম থেকে নারকেল গাছের স্থান নিল সুপারি গাছ। ভ্যানভর্তি সুপারি যাচ্ছে আশপাশের বাজারে। এখনো আমার অবস্থান বাগেরহাট জেলায় হলেও কচুয়ার পর থেকে এদিকের লোকের ভাষায় বরিশালের টান বেশি। কলা আর সুপারি বাগানই বেশি এদিকটায়।
শ্রীপুরের কাছে ধানক্ষেত পেলেও কেমন যেন শ্রীহীন। হোগলাপাশা, মহিষপুরা হয়ে বলেশ্বর সেতু। এই নদীটা বেশ বড়-সড়। বলেশ্বর সেতুর মাঝামাঝি আরিফ ভাই এলেন সাব্বির ভাইয়ের বাইকে চড়ে। আরিফ ভাই এর পোস্টিং পিরোজপুর সদর হাসপাতালে। সেতু থেকে নামতে যাবো এমন সময় সদর হাসপাতালের ডাক্তার পেয়ে গেটে পাকড়াও করলেন টোল প্লাজার লোক। চা দিয়ে আপ্যায়ন করে তারপরেই ছাড়লেন। হাসপাতালের কাছাকাছি এসে বিদায় নিলেন আরিফ ভাই। একটু এগিয়েই পানির ট্যাংকি। এই জিনিস মোটামুটি প্রত্যেক জেলাতেই আছে। মাছিমপুর পার হয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরে। এখান থেকে ডানে মোড় নিয়ে বেকুটিয়া ফেরির দিকের রাস্তা। অল্প যেতেই স্টেডিয়াম। বামে সঙ্গী হলো ছোট্ট একটা খাল। একটু এগোতেই শহর শহর ভাবটা আর নেই। ধুপপাশার পরে বেশ ছায়াঘেরা রাস্তা পেলাম। খাম্বার আড়ৎ ডুমরীতলায়। রাণীপুর বাজার থেকে বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তা ডানে আর হুলারহাটের রাস্তা সোজা। এই রাস্তাটা বেশ সুন্দর। একটা জোর বাতাস আসতেই কড়ই গাছের পাতা সব গায়ে পড়তে লাগলো। দারুণ অনুভূতি হলো। আরেকটু এগোতেই শহরের কাছে আমাকে হাঁটতে দেখা এক অটোওয়ালা এখনো আমাকে হাঁটতে দেখে বললেন- 'হেঁটে মোগো কুড়ি ট্যাকা লস করিছেন'! কচা নদীতে ফেরি ওপারে থাকায় পার হলাম ট্রলারেই। মাঝ নদীতে অনেকগুলা নৌকায় মাছ ধরছে। তীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে অসময়ের কাশফুল। আর আছে প্রচুর কচুরিপানা। নদীর ওপারেই কাউখালী উপজেলা। শিয়ালকাঠী চৌরাস্তায় এক লোক পাশেরজনকে আমাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো- 'দেশি না বিদেশি?'
এন্ডোমন্ডোর ঝুমা ভাবি (এন্ডোমন্ডোতে কত কিমি হয়েছে সেটা নারীকণ্ঠে রিমাইন্ডার দেন যিনি, ফরহান ভাইয়ের দেওয়া নাম এটা!) কত কিমি হইসে সেটা উচ্চৈঃস্বরে বলতেই মাথা নাড়িয়ে বললেন- বিদেশি। একটু পরেই সরু খাল পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম ঝালকাঠি জেলায়। সাতুরিয়ায় একটা সাইনবোর্ড জানাচ্ছে এই জায়গাটা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মস্থান। প্রচুর ছোট ছোট খাল এখানে। রাস্তা বেশ খারাপ। ইটের খোয়া বিছানো রাস্তা। ইদুবাড়ী হয়ে নৈকাঠী। খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ির বদলে প্লাস্টিকের বোতল দেখে মন খানিকটা খারাপ হলো। এ জিনিস বড্ড বেমানান। মোল্লারহাট হয়ে রাজাপুর পৌঁছাতে শেষ বিকেল। আজ ঝালকাঠিতে হাঁটা শেষ করলেও থাকবো পিরোজপুরে। আরিফ ভাই ওনার বন্ধু সাব্বির ভাইয়ের বাইকে নিতে এলেন। পিরোজপুর থাকার আরো একটা কারণ হলো আমার মেডিক্যালের বন্ধু রাসেলও এখানে কর্মরত। ওর সঙ্গেও দেখা হয়ে যাবে। রাতে গেলাম পিরোজপুর স্পোর্টস কর্নারে। ওনাদের আতিথেয়তা অনেক দিন মনে থাকবে। এক ঘণ্টার নোটিশে একটা ক্রেস্ট বানিয়ে উপহার দিয়ে বিস্মিত করলেন নিঝুম ভাই।
আরও পড়ুন...
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
চলবে....
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২০
এএ