দিন ৫৩
গোয়ালমারী বাজার ( দাউদকান্দি, কুমিল্লা) - চাঁদপুর - ফরিদগঞ্জ ( চাঁদপুর) = ৫৪.৫৬ কি. মি.
গোয়ালমারী বাজার থেকে হাঁটা শুরু করতেই বাম পাশে সঙ্গ দিচ্ছিল সুন্দর একটা খাল। খালের আশেপাশে প্রচুর মাছরাঙা।
পদুয়া মধ্য পাড়া হয়ে শ্রীরায়েরচর। খালিশা বাজারের শেষ মাথায় একটা নদী। নদীর নাম ধনাগোদা। সেতুতে উঠেই চোখ গেল নিচে নৌকায় বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে ব্যস্ত দুই শিশুর দিকে। সেতুর ওপাশেই বাংলাবাজার। চাঁদপুর জেলার সীমানা এখান থেকেই শুরু। ইলিশের রুপালী প্রতিকৃতি স্বাগত জানাল এই জেলায়। চাঁদপুরে প্রবেশ করেই রাস্তার অবস্থার আমূল পরিবর্তন। ভাঙা রাস্তা এখন মাখনের মত মসৃণ। দক্ষিণ গালিমখাঁর কিছুটা পরে এসে যোগ দিলেন মুন্না ভাই। উনি ভোরে নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছেন কিছুদূর একসাথে হাঁটবেন বলে। অবশ্য মতলব উপজেলায় আসার আরো একটা মতলব আছে তার। কিছুটা পথ হেঁটে মতলব পৌঁছে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলবেন মতলব ডিগ্রি কলেজেরই মাঠে। ক্রিকেটের জার্সি-বুট পড়েই বেরিয়েছেন বাসা থেকে।
বড় রাস্তা ছেড়ে ডানদিকের ছোট রাস্তা ধরে পশ্চিম দূর্গাপুর। আরো খানিকক্ষণ হেঁটে সুজাতপুর বাজার হয়ে লুধুয়া। দক্ষিণ ঠেটালিয়া বাজার থেকে ছোট রাস্তা ছেড়ে আবার বড় রাস্তায়। ক্রিকেটারের পোষাক পড়া মুন্না ভাই থাকায় আজ লোকে আমাকেও ক্রিকেটার ভাবছে। খানিক যেতেই রাস্তায় পড়ে থাকা মরা সাপ চোখে পড়ল। এই রাস্তাটা একদম ধনাগোদা নদীর পাড় লাগোয়া। গাড়ী চলাচল ছাড়াও এটা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসেবেও কাজ করে। নদীর ধারের পোঁতা বাঁশে আলসে পানকৌড়ির দল বসে আছে। বারোটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম মতলব বাজারে। মতলব কলেজের মাঠেই মুন্না ভাইয়ের ম্যাচ। উনি থেমে গেলেন এখানেই। এই বাজারের শেষ মাথায় আছে আইসিডিডিআরবির হেলথ রিসার্চ সেন্টার। বেশ ভিড় লোকের ওখানটায়। নবকলসের কাছে দেখলাম একটা কোল্ড স্টোরেজ। উত্তরবঙ্গে কোল্ড স্টোরেজ বেশ কমন হলেও দেশের অন্য জায়গায় এরা সংখ্যায় কম।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান হচ্ছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। লাল-সবুজ শাড়ী পরা ছাত্রীদের ভিড় গেটজুড়ে। ঢাকিরগাঁও এর পর থেকে রাস্তা বেশ ফাঁকা। অল্প এগিয়েই বরদিয়া আড়ং বাজার। এখান থেকেই আকাশটা হঠাৎ করে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল। আমার মনের মধ্যে খানিক শঙ্কা। বৃষ্টি না হলেই বাঁচি আর কি। রাস্তার ডানদিকে সেচ প্রকল্পের খাল। আর তার উপর অসংখ্য বাঁশের সাঁকো। মুন্সীরহাট নামক বাজারের সব ক'টা দোকানের সামনেই জাতীয়া পতাকা। দূর থেকে বেশ লাগছিল দেখতে। এই বাজারের পরপরই শেষ মতলব দক্ষিণ উপজেলা। গাবতলী পার হয়ে বাবুরহাট থেকে উঠে পড়লাম কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কে।
পুলিশ লাইন্স, খলিশাডুলি পার হয়ে ওয়ারল্যাস মোড়। এখান থেকে বামের রাস্তা ধরলাম ফরিদগঞ্জ অভিমুখে। খানিক যেতেই ডাকাতিয়া নদী। প্রচুর কচুরিপানা এই নদীতে। এর উপর নির্মিত সেতুকে গাছতলা সেতু নামেই ডাকা হয়। নদীর ওপারেই চাঁদপুর ইন্সটিটিউট অফ মেরিন টেকনোলজি। পাভেল ভাই এখানেই কর্মরত গত বছরখানেক ধরে। উনার ওয়্যারলেস মোড়ের বাসাতেই আজকের রাত্রিযাপন। তার আগে কালকের আরো কিছুটা পথ এগিয়ে রাখা। বাগাদী বাজারে এক পিচ্চি ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করল - আপনি কে? আমি আসলেই কে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা বড্ড কঠিন মনে হয় আমার কাছে।
বাগড়া বাজার ছাড়িয়ে সেকদী। চাঁদপুর সদর উপজেলার শেষ আর ফরিদগঞ্জ উপজেলার শুরু এখান থেকেই। টুবগী পার হয়ে ধানুয়া বাজারের কাছে আসতেই সন্ধ্যা। বাকিটা পথ গাড়ীর হেডলাইটের আলোতে পথ চলা। ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা, কালী বাজার চৌরাস্তা হয়ে ফরিদগঞ্জ পৌঁছে গেলাম পৌনে সাতটা নাগাদ। আজকের মতো এখানেই দিনের হাঁটার ইতি টানলাম। অটোতে চেপে ওয়্যারলেস মোড় এসে ফোন দিতেই পাভেল ভাই চলে এলেন। বাসায় এসেই পরিচিত হলাম উনার কলিগদের সাথে। তারপর থেকেই কলিগদের রান্নাঘর ঘিরে ব্যস্ততা দেখছি। আমি আসা উপলক্ষ্যে একটু স্পেশাল রান্না হচ্ছে বিধায় সবাই সেদিকেই ব্যস্ত। আর এর ফাঁকেই এটা-সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে পাভেল ভাইয়ের সাথে। কথোপকথনের বড় অংশ জুড়েই আছে দুজনেরই অভিন্ন ভালোবাসার জায়গা - কাপ্তাই কায়াক ক্লাব।
চলবে...
আরও পড়ুন
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
এএ/