ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পর্যটকে মুখরিত সুন্দরবন

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২১
পর্যটকে মুখরিত সুন্দরবন

খুলনা: সবুজের হাতছানিতে ছুটে গিয়েছিলাম সুন্দরবনে—বন দেখে আমি মুগ্ধ! প্রকৃতির সান্নিধ্যে এলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।

সুন্দরবন ভ্রমণ শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশিকুর রহমান।

তিনি বলেন, গাইবান্ধা থেকে ৪৮ জনের একটি টিম এমভি গাজী কালু লঞ্চে সুন্দরবনের গহীনে তিনদিন ভ্রমণ করেছি। ঘুরেছি কটকা, কচিখালী, দুবলার চর ও করমজল। ভালো লেগেছে বিশুদ্ধ বাতাস ও মুক্ত পরিবেশ। তবে কিছু কিছু পর্যটন কেন্দ্রে নৌযান থেকে ওঠা-নামার সময় ভয় লেগেছে। কেননা অনেক স্থানে ওঠা-নামার সিঁড়িটি নড়বড়ে ছিল, যা নারী ও শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলার বাদাবন ইকো-কটেজ থেকে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন ঢাকা থেকে আসা ইমরানসহ তার ১০ বন্ধু।

ইমরান বলেন, স্থানীয় জেলে, লোকালয়ের মানুষ, বন-বনানী, নদী-খাল নিয়ে অন্যরকম সময় কেটেছে আমাদের। সুন্দরী, গেওয়া, গরানের বনের সবুজের বিচ্ছুরণ দেখে মুগ্ধ হয়েছি আমরা।

মোংলার বাদাবন ইকো-কটেজের পরিচালক মো. লিটন জমাদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, ইমরান প্রতি বছরই ঢাকা থেকে তার একটি গ্রুপ নিয়ে সুন্দরবনে আসেন ও এখানে থাকেন। বনের চারদিকে আঁকাবাঁকা নদী আর দুই পাশে ঘন অরণ্য। এমন রহস্যঘেরা মায়াবী বন দেখতে পর্যটকরা ভিড় করছেন।

বর্তমানে তার কটেজে ৩০-৩৫ জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।

উড়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম হিরণ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে ভ্রমণ পিপাসু অনেকে বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারছেন না। এখন তারা সবুজ পাতার চাদরে ঢাকা সুন্দরবন ভ্রমণে আসছেন। এতে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। পর্যটকের ভিড় বাড়ায় রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের।

তিনি জানান, সুন্দরবনের করমজল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র, হারবারিয়া, কোকিলমনি, কটকা, হিরণ পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধুর চর পর্যটকদের পছন্দের জায়গা।

হিরণ বলেন, খুলনা-সুন্দরবন-খুলনা তিন দিন দুই রাতের নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক ভ্রমণে অত্যাধুনিক লঞ্চে আমাদের বেশ কয়েকটি প্যাকেজ রয়েছে। ভ্রমণ স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে হাড়বাড়িয়া, জামতলা সমুদ্র সৈকত, কটকা অফিস পাড়, টাইগার টিলা, কচিখালি, করমজল, দুবলার চর/ডিমের চর ভ্রমণ। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপস নেই। নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে বাংলাদেশ বনবিভাগের দুই জন সশস্ত্র নিরাপত্তা কর্মী। আবহাওয়া এবং অন্য যেকোনো প্রয়োজনে ফরেস্ট, কোস্ট গার্ড, নৌ-বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকবে। সুন্দরবন ভ্রমণে জন প্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকা নেই আমরা।

একই সুরে কথা বললেন খুলনা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিক আহমেদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সুন্দরবন ভ্রমণে আসছেন পর্যটকরা। যে কারণে ঢাকা-খুলনা-ঢাকা রুটে প্রতিদিন প্রায় ২/৩টি বাড়তি কোচ যাচ্ছে।

করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বাংলানিউজকে বলেন, দিনে দিনে আসা-যাওয়া করা যায় বলে করমজলে পর্যটকদের আগমন বেশি থাকে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার সুন্দরবনে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা বাড়ে।

যেভাবে যাবেন সুন্দরবন
ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/নন এসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত প্লেনে আসা যায়। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে।

মোংলা থেকে করমজল লঞ্চ বা ট্রলারে মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ভ্রমণে তুলনামূলক খরচও কম। খুলনার বিআইডব্লিউটিএ-এর লঞ্চ ঘাট থেকে সুন্দরবনে যাওয়া যায়।

সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সাধারণত তিন দিন দুই রাতের প্যাকেজ থাকে। তারাই ভ্রমণের অনুমতিসহ সবকিছুর দায়িত্ব নেবে। খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর। ঢাকাতেও মিলবে। প্যাকেজের আওতায় সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, জামতলা সমুদ্রসৈকত, দুবলারচর, হিরণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়। সুযোগ আছে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে। ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনিও সময় করে বেরিয়ে পড়তে পারেন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন দেখতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২১
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।