ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাইব্যুনাল

নেত্রকোনার ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন পিছিয়ে ১৫ মার্চ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
নেত্রকোনার ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন পিছিয়ে ১৫ মার্চ

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে আদেশের দিন পিছিয়ে আগামী ১৫ মার্চ ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে  ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী ।

আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।

গত বছরের ০৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য ২৪ জানুয়ারি দিন ছিলো।

গত বছরের ২২ মে ছয়জনের বিরুদ্ধে  আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। এর আগে ১৬ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা।

আসামিরা হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন (৭০)।
 
এ মামলার মোট সাতজন আসামির অপরজন আহাম্মদ আলী (৭৮) গ্রেফতারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ছয় আসামির মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আব্দুর রহমান। বাকি পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।

গত বছরের ১৬ মার্চ তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান খান জানান, চার ভলিউমে মোট ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ৪০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে, যারা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে।

আসামিদের রাজতৈনিক পরিচয় সম্পর্কে সানাউল হক জানান, মজিদ মওলানা মুক্তিযুদ্ধের সময় নেজামে ইসলামির নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

এছাড়া কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য। আব্দুর রহমান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুর উদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বতর্মানে তারা বিএনপির সমর্থক।

গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের মৃত মৌলভী হোসেন আহম্মদ ওরফে হোসেন মৌলভীর ছেলে আব্দুর রহমান ও ঘাগড়া ইউনিয়নের সুনাইকান্দা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আহাম্মদ আলীকে যার যার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ১৩ আগস্ট তাদেরকে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।

পরে কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান আহাম্মদ আলী। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমানকে।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর একটায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় ২০১৩ সালে। শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।


বাদী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির মামলায় অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত তার বড় ভাই আব্দুল হেকিম ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন। রাজাকাররা এ খবর জানতে পেরে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বড় ভাই আব্দুল খালেককে পিঠমোড়া করে বেঁধে মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের খোঁজ-খবর জানতে চান। ভাইদের কোনো খোঁজ না দেওয়ায় তখন রাজাকার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ভাই খালেককে ধরে নিয়ে জারিয়া রাজাকার ক্যাম্পে দুই দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরদিন ২১ আগস্ট তাকে জারিয়া কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেন রাজাকাররা।


বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ট্রাইব্যুনাল এর সর্বশেষ