কিন্তু খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল করে কেবল জামিন চাওয়া হবে। এখনই দণ্ড স্থগিত চাইবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই অনুলিপি পাবো। অনুলিপি পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করবো। এটা হাইকোর্টের একক বেঞ্চে করতে হবে।
‘আশা করি, আপিল দাখিলের পর গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য দুই/একদিনের মধ্যে দিনক্ষণ ঠিক হতে পারে। দিন ঠিক হওয়ার পর শুনানি হবে। আপিলের সময় জামিনও চাইবো। এটা সংক্ষিপ্ত সাজা। আশা করি, আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তবে, আমরা এখন দণ্ড স্থগিত চাইবো না। শুধু আপিল। আর আপিলের সঙ্গে জামিন আবেদন, কৌশল মতো পরে দণ্ড স্থগিত চাইবো,’ বলেন তিনি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর ও দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের দণ্ডের পর এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কী পারবেন না। এ নিয়ে আইনের নানা রকম ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বর্তমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী এবং আইনজ্ঞরা।
যদিও সংবিধান বলছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারো দুই বছরের বেশি সাজা হলে, সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
তবে কেউ কেউ বলছেন, চূড়ান্ত আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আবার অনেকে বলছেন, এখন পর্যন্ত তিনি দণ্ডিত। কোনো আপিল করেননি। সুতরাং নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। যদি আপিলের পর দণ্ড স্থগিত হয়ে জামিন পান তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক সময় যদি কারো সাজা হয় তাহলে তিনি পার্লামেন্টের নির্বাচন করতে পারবেন না। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা আছে যে, আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি, সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও ইলেকশন করতে পারবেন। আবার আরেকটা রায়ে আছে, পারবেন না। এখন উনার ব্যাপারে আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা…। এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারো দুই বছরের বেশি সাজা হলে, সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বোচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। এটাই সংবিধান।
‘তবে নিম্ন আদালতে সাজা হলেও হাইকোর্ট বিভাগ রয়েছে, আপিল বিভাগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত গিয়ে যদি নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রয়ে যায় তাহলে তিনি সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন। ’
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আরও বলেন, তবে নিম্ন আদালতে সাজা হওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করে যদি জামিন ও সাজা স্থগিতাদেশ পায় তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ আপিল বিভাগে যদি সাজা বহাল থাকে তাহলে নির্বাচিত হলেও সংসদ সদস্য পদে অযোগ্য হয়ে যাবেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আজ পর্যন্ত তিনি অযোগ্য। তবে আপিল করার পর যদি দণ্ড সাসপেনশন হয় এবং জামিন পান তাহলে নির্বাচনের অংশ নেওয়ার বিষয়টি আলোচিত হতে পারে। এর আগে নয়।
সংবিধানের পঞ্চম ভাগে ‘সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা’ সংক্রান্ত ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, এবং (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে;’
২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
ইএস/এমএ