ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ত্রিপুরার চা বাগানে চলছে কলম কাটার কাজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
ত্রিপুরার চা বাগানে চলছে কলম কাটার কাজ চা বাগানে ব্যস্ত শ্রমিকরা, ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা: ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বর্তমানে চা বাগানগুলো পুরোদমে চলছে কলম কাটার কাজ। চা উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা ও রোগবালাই দূরে রাখতে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

চা পাতার কুড়ি সংগ্রহ করার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টসাধ্য কলম করার কাজ, সঠিকভাবে ও নিদিষ্ট মাপে চা গাছের কলম না হলে নষ্ট হতে পারে গাছ। এক বছরের জন্য গাছের উৎপাদন করে যেতে পারে।


 
শীত মৌসুমে চা গাছের ওপরের দিকে পাতার অংশ নিদিষ্ট মাপে কেটে ফেলার কাজকে বাগানের শ্রমিকরা কলম করা বলেন। কলম করার কাজ কষ্টের কাজ। চা শ্রমিকরা বিভিন্ন গানের মাধ্যমে এ কাজকে সহজ করার চেষ্টা করেন।

তেমনই একটি গান হলো- ‘পাতা তোলা যেমন তেমন, কলম কাঁটা বড়রে দিগদারীরে/হে মিনি কইর দেওয়া তাড়াতাড়ি।
 
ত্রিপুরার খোয়াই জেলার কল্যাণপুর ব্লকের দ্বারিকাপুর  চা-বাগান এখন রুক্ষ। পাতার ওপরের ডালগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। এতে সবুজ গাছগুলো এখন ধূসর রং ধারণ করেছে। যেন শিংয়ের মতো খাড়া-খাড়া হয়ে আছে প্রতিটি চা গাছের ডাল। টিলার পর টিলা চা গাছগুলো ন্যাড়া ভঙ্গিমায় ওভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে।

চা-বাগানে প্রুনিংয়ের সময় চলছে। পর্যায়ক্রমে একবছর পরপর প্রুনিং করা হয়। প্রুনিংয়ের বাংলা ‌ছাটাই। তবে চা বাগানের শ্রমিকরা একে কলম করা বলে থাকেন। অবশ্য ‌‌ছাটাই আর কলম কিন্তু এক জিনিষ নয়।
 পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চা বাগানে কাজ করছেন, ছবি: বাংলানিউজ
কলম করা হয় নতুন চা গাছ তৈরির জন্য। আর ছাটাই করা হয় চা-গাছের পছন্দসই আকৃতি ও দৈহিক বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। দ্বারিকাপুর চা-বাগানে দেখা গেল অভিজ্ঞ পুরুষ ও নারী শ্রমিক প্রুনিং অর্থাৎ শ্রমিকদের ভাষায় কলম করার কাজে ব্যস্ত।

শ্রমিকরা অভিজ্ঞ তারপরও কীভাবে কাটতে হবে তা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ ও  নির্দেশ দিচ্ছেন সর্দার লক্ষ্মীন্দর মুণ্ডা।
 
প্রুনিং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক একটি গাছের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ ইঞ্চি। প্রুনিং করতে হয় ২৬, ২৮ বা ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত। তবে ইয়াং ট্রি প্রুনিং করতে হয় কিছুটা কম অর্থাৱ ১৬ বা ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত।
   
চা বাগানের এক-এক সেকশনে গাছের বয়স কিন্তু এক এক রকম। কিছু-কিছু গাছের বয়স ৫ থেকে ১০ বছর। আবার কিছু গাছের বয়স ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত রয়েছে বলেও জানান সর্দার লক্ষ্মীন্দর মুণ্ডা।

বয়সের ওপর ভিত্তি করে প্রুনিংয়ের কাটার গভীরতা নির্ভর করে। তবে চা গাছের বয়স ৬০ বছর হয়ে গেলে তার উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন পুরাতন চা গাছ তুলে নতুন চারা রোপণ করতে হয়।

শ্রমিকরা জানান, তারা ৫০ জন এই বাগানে কলম কাটার কাজে রয়েছেন। একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ১৫০টি করে চারা ছাটাই করতে হয়।

চা বাগানের কলম কাটার নানা নাম রয়েছে গলাকাটা ছাটাই (Collar Prune), মধ্যম ছাটাই (Medium Prune) ও হালকা ছাটাই (Light Prune)। এছাড়া আরও কিছু ছাটাই-পদ্ধতি রয়েছে। আসলে এগুলো নির্ভর করে চা-গাছের বয়স এবং উৎপাদন ক্ষমতার ওপর।

কলম কাটা হয়ে গেলে চা গাছে বালাইনাশক স্প্রে কর হয়। যাতে পোকা বাগানে আক্রমণ না করতে পারে। কলম করার কিছুদিন পর কুড়ি আসতে শুরু করে। তারপর বৃষ্টি পড়লে চা গাছে নতুন ক্রেগুলি দ্রুত বাড়তে শুরু করে ও মার্চের মাঝামাঝি থেকে চা পাতা তোলা শুরু হবে বলে জানান চা শ্রমিকরা।

কল্যাণপুরের পাশাপাশি ত্রিপুরা রাজ্যের রানীবাড়ী, পেয়ারাছড়া, হাফলং, দুর্গাবাড়ী, লক্ষ্মীলুঙ্গা, তুফানিয়ালুঙ্গা, আদরিনি, তালতলা, ফটিকছড়া, ব্রহ্মকুণ্ডসহ রাজ্যের প্রায় সব চা বাগানেই কলম কাটা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
এসসিএন/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।