পড়ন্ত বিকেলে দৃশ্যটি ভারতের ত্রিপুরা রাজধানী আগরতলার শ্রী জগন্নাথ জীউ মন্দিরের। মন্দিরটির শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, বর্তমানে পরিণত হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম পযর্টন কেন্দ্রে।
জগন্নাথ জীউ মন্দিরটি ঘুরে দেখা যায়, সু-উচ্চ মন্দিরটি আয়তনে বিস্তৃত না হলেও নির্মাণে এর বিশেষত্ব রয়েছে। ত্রিপুরার স্থাপত্যকলার অনন্য নিদর্শন মন্দিরটি। এটি আট কোণা সমন্বিত। প্রত্যেক কোণায় একটি করে স্তম্ভ রয়েছে। মন্দিরের চূড়ায় দেব-দেবী, লতা-পাতায় অলংকারিত।
বিশাল প্রবেশদ্বার বিশেষ অলংকারে তৈরি। মূল মন্দিরের সামনে দেব-দেবীদের বাহক হাতি, ঘোড়া ও সিংহের মূর্তি। মন্দিরের পিছনের দিকে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরটির চারধার দেব-দেবীর প্রতিমা ও লোহার শিক দিয়ে ঘেরা। পুকুরের মাঝাখানে দূর্গার প্রতিমা রাখা।
মন্দির চত্বরে অতিথিদের থাকার স্থান, ফ্রি চিকিৎসালয় ও ভোজনশালা রয়েছে। পুরো চত্বরে রয়েছে ফুলের বাগান। যা মন্দিরের পরিবেশকে নয়নাভিরাম করে তুলেছে। হাজার নর-নারীর সমাগমে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত দেখা গেলো।
ইতিহাসের ভাষ্যে, ত্রিপুরার রাজারা হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতির পৃষ্টপোষক ছিলো। একশো বছর আগে ত্রিপুরার রাজর্ষি রাধাকিশোর মাণিক্য বাহাদূর উজ্জ্বয়ন্ত প্রসাদের সংলগ্ন জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
এক সময় মন্দিরটি ভগ্নদশা ও জঙ্গলে পরিণত হয়। ১৯৭৬ সালে মন্দিরটি শ্রী চৈতন্য গৌড়ীয় মঠ এর দেখভাল শুরু করে। এরপর ভক্তদের সহযোগিতায় মন্দিরটিকে বেহাল দশা থেকে মুক্ত করা হয়।
তখন থেকে মন্দিরটির নবযুগের সূচনা বলে জানান প্রধান মঠ রক্ষক ত্রিদণ্ডি ভিক্ষুক শ্রী ভক্তিকমল বৈষ্ণব।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী মন্দিরে আসেন। চন্দন যাত্রা, স্নানযাত্রা, রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা ইত্যাদি উৎসব উপলক্ষে সহস্র মানুষের আগমনে মিলনস্থলে পরিণত হয়। এসময় স্থানীয়সহ বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের ঢল নামে।
মন্দিরটি পূজা-অর্চনার কাজে ৪০ জন ব্রাহ্মণ পুরোহিত সেবা দেন। প্রতিদিন তিনবেলা আরতি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান মঠ রক্ষক।
মন্দিরের সামনে বিশাল পুকুর। চারদিক থেকে সন্ধ্যার অাঁধার ঘনিয়ে আসে। ভক্ত পূণ্যার্থী- দর্শানার্থীদের আগমনে কাণায় কাণায় পূর্ণ হয় জগন্নাথ জীউ মন্দির। আলো জ্বালিয়ে সবাই সন্ধ্যার আরতিতে অংশ নিতে শুরু করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
এমসি/এসএনএস