রিয়াদ: ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ওপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব সৌদি আরবের মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পর রোববার দেশটির রয়েল কোর্ট তা অনুমোদন দিয়েছেন।
সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ডেপুটি মিনিস্টার ডক্টর আহমেদ আল ফাহাইদ রোববার সকালে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মহঃ শহীদুল ইসলামকে বিষয়টি জানান।
একইদিন রাষ্ট্রদূত বাংলানিউজকে টেলিফোনে এ খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সৌদি সরকারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি সৌদি শ্রমমন্ত্রী ডক্টর আদেল ফাকিহ এবং ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স (বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স) মুকরিন বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বৈঠকে সৌদি মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছিলো।
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের কাজের ভিসা, পারিবারিক ভিসা, ইকামা ট্রান্সফার (স্পন্সর ঠিক রেখে কর্মস্থল পরিবর্তন), পেশা পরিবর্তনসহ সব ধরনের সুবিধা বন্ধ করে দেয় সৌদি সরকার।
পরবর্তীতে এই শ্রম বাজার সচল করতে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর করে বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুযোগ সুবিধা পুনর্বহালের আশ্বাস দেন সৌদি বাদশা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মহ. শহীদুল ইসলামকে। শহীদুল ইসলাম রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানের পর সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করার পাশাপাশি কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। পাশাপাশি অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেশ কয়েকবার একই ইস্যু নিয়ে সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দূতাবাসের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, এতো কূটনৈতিক তৎপরতার পরও ২০১৪ সালে সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের বিশেষ ক্ষমার তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলো বাংলাদেশ। খবর পেয়ে ওই রাতেই সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শেষে ভোরে বাংলাদেশের নাম সংযুক্ত করতে সফল হন রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম।
ওই সূত্র আরো জানায়, মহ. শহীদুল ইসলাম সৌদি আরবে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়াতে সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অভ্যন্তরীণ হানাহানি কমিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ‘গেস্ট কান্ট্রি’র মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপরাধের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে আসে।
সম্প্রতি সৌদি শ্রমমন্ত্রী ডক্টর আদেল ফাকিহ, ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মুকরিন বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের অপরাধের হার কমে যাওয়া এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড হবে না এমন প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই বাংলাদেশিদের ভিসাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি সরকারে প্রস্তাবিত ৬টি মেগাসিটি এবং বাংলাদেশিদের পরিচালনাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫