রিয়াদ: ওমরাহ ভিসার নামে আদম পাচারের অভিযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের ৩১ এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়।
এ ঘটনায় গত এক মাস ধরে বাংলাদেশিদের ওমরাহ ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সৌদি।
সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, কালো তালিকায় উঠে আসার কারণে আসছে হজ মৌসুমেও বাংলাদেশিদের হজ ভিসার ক্ষেত্রে এই ইস্যুটি জটিলতা তৈরি করতে পারে।
সূত্র জানায়, সহস্রাধিক বাংলাদেশি ওমরাহ ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার পর সেখানে অবৈধভাবে বসবাস শুরু করেছেন। পালিয়ে পালিয়ে কাজ করায় তাদের চিহ্নিত করতেও পারছে না দেশটির সরকার।
ওমরাহ করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিদের দেশে না ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সৌদি সরকার গত ২২ মার্চ থেকে পুরোপুরিভাবে ওমরা ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
সৌদি হজ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের ৩১ হজ এজেন্সি ওমরাহ ভিসার নামে সৌদি আরবে আদম পাচার করছে।
এই এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে গত চার মাসে ওমরাহ পালন করতে সৌদি গিয়ে তাদের একটি বড় অংশ দেশে ফেরেননি। আর এ বিষয়টি দেশটির সরকারের নজরে আসা মাত্রই বাংলাদেশকে ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ করেছে।
জানা যায়, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া নতুন নিয়মেই বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ হজ যাত্রীদের সৌদিতে পাঠানো হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ওমরাহ ভিসায় সৌদি গমনেচ্ছুকদের নির্ধারিত এজেন্ট বা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। প্রত্যেক মাসে এর সঠিক হিসাবও সৌদি সরকারের কাছে দিতে হবে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাসের মার্চ পর্যন্ত থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাংলাদেশি ওমরাহ পালন করতে সৌদি গেছেন। তাদের প্রত্যেকের ভিসার মেয়াদ ছিল ১৪ থেকে ২৮ দিন।
এরমধ্যে বেশির ভাগ লোক দেশে ফিরে গেলেও ৪ থেকে ৫ শতাংশ পালিয়ে রয়ে গেছেন সৌদিতে। অবৈধভাবে থাকা সেই সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের মতো হবে বলে জানায় সূত্র।
সৌদি সরকারের কালো তালিকাভুক্ত বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রামের আল আমানাত ট্রাভেলস (ওমরাহ করতে সৌদিতে যান ৪০০জন, ফিরেছেন ৬০জন), ঢাকার আল ফাতিহা ট্রাভেলস (১৫৭-৮৩), হাই লিংকস ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (৩৪৩-৩৩৮), চট্টগ্রামের যোগাযোগ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (৩২৮-২৯৫), ঢাকার ইনসাফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (২৯৯-২০৬), মেসার্স এসএইচ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (৩১৩-৭৮), আবাবিল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (৩০৮-২১০), মিনি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (৩২৩-১৮৭) রাজান ওভারসিজ (১৩১-৮৩), আল-আমীন এভিয়েশন (৩০৩-৮৬), হানা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (৩৮৬-৫২), সোনিয়া ট্রাভেলস (১৯৭-৮৮), এসএইচ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (৩৮২-৪৬), সাদমান এয়ার সার্ভিস (৩৬৭-৪১), সৌদি-বাংলা হজ সার্ভিস (৩১৯-১৮৯), এয়ার কক্স ইন্টারন্যাশনাল (৩৮১-১৫৭), বিএমএস ট্রাভেলস (৩৭৪-১২), সেন্ট্রাল ট্রাভেলস (২৭৮-১৪৫), গালফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (২২২-১৪৫), চট্টগ্রামের রাহাত ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (৩০৮-৪১), এসবি আগা অ্যান্ড কোং (২৭০-২২৩), ঢাকার ট্রিশন ওভারসিজ (২৬০-৬১), চট্টগামের নিসান ওভারসিজ (৪০০-৫৩), মাসুদ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (৩৯৯-০), সিলেটের রাব্বানী ওভারসিজ (৩২২-২১), ঢাকার ট্রাভেলস স্কাই কানেকশন (৩৩৬-২১৬), গ্রিন হজ ট্রাভেলস (৩৮২-১২), স্বপ্নপুরী ইন্টারন্যাশনাল (১১০-২৩), গুড জয় ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (ঢাকা, ৩৯৭-৪৬), ৩০. আরিফ ত্যুরস এন্ড ট্রাভেলস (১৮০-১২) এবং সিলেটের রাব্বানী ওভারসিজ-২(৩৯৬-২২০)।
এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর নেতারা জানান, এক ভাগের নিচে যাত্রী অবৈধভাবে থাকলেও অনেক সময় সেটি সৌদি সরকার ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে! কিন্তু এবার অতিরিক্ত ওমরাহ যাত্রী দেশটিতে রয়ে গেছেন। এজন্য বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে সৌদি।
হাব নেতারা বলেন, ওমরাহ ভিসার এই নিষেধাজ্ঞা তুলতে হলে অবৈধ ‘ওমরাহ যাত্রী’দের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত আনতে হবে। আর সেটি করা খুবই কষ্টসাধ্য।
‘এরইমধ্যে সৌদি সরকার ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে তালিকা চেয়েছে। সেটিও দ্রুত করা যাচ্ছে না। এ কারণে আসছে রমজান মাস নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশি,’ যোগ করেন তারা।
হাব নেতারা জানান, কেবল রমজান মাসেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যান। পবিত্র হজের পর রমজানই হচ্ছে ওমরাহ মৌসুম। আর এই সময়ে এবার কোনো ভিসা পাবে না বাংলাদেশ।
বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তারা জানান, রমজান মাসে সিলেট থেকেই ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ ওমরাহ পালনে সৌদি আসেন। কিন্তু এবার সে সুযোগ নেই।
আর এতে বেশ লোকসানে পড়বে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। এরইমধ্যে ওমরাহ ভিসার জন্য কয়েক হাজার মানুষ আবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু আবেদিত এসব ভিসা দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৫
এমএএ/এমএ