ঢাকা: বিশ্বের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে ২০১৬ সালকে পর্যটন বছর ঘোষণা করেছে সরকার। ‘ভিজিট বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে রেখে তাই চলছে বছরজুড়ে পর্যটক আকর্ষণের প্রস্তুতি।
মূল আয়োজনের অংশ হিসেব বিদেশি পর্যটকদের জন্য থাকছে বাড়তি সুবিধা।
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে পর্যটকদের জন্য রয়েছে সব হোটেল-মোটেলে বিশেষ ছাড়। এমনকি প্লেন টিকিটেও ছাড় পাবেন পর্যটকরা। পাশাপাশি থাকছে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট কার্ড, প্রিভিলেজড কার্ড এবং করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত সব হোটেল-মোটেলে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা।
এই প্রিভিলেজ কার্ডে পর্যটকরা পর্যটন করপোরেশনের সব হোটেল-মোটেলে তিন দিনের জন্য ৩টা রুমে ৩০ শতাংশ ছাড় পাবেন। হস্তান্তরযোগ্য এ কার্ডটি নিলে এ সুযোগ এক বছর পর্যন্ত পাওয়া যাবে।
অর্থাৎ এক বছর পর্যন্ত একই কার্ড দিয়ে ব্যক্তি নিজে এবং তার পরিচিত জনরা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানে পরিদর্শনে এ সুযোগ পাবেন।
পর্যটন করপোরেশনের বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে ৩শ’ টাকার বিনিময়ে কার্ড সংগ্রহ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ইলেকট্রনিক পেমেন্ট কার্ডের মাধ্যমে পর্যটক যেকোনো স্থান থেকেই লেনদেন করতে পারবেন খুব সহজে।
পর্যটন বর্ষকে কেন্দ্র করে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শেষ হয়েছে মেগা বিচ কার্নিভাল।
এরপর রয়েছে পর্যটন লোকজ মেলা, বাংলাদেশ ফোক আর্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে থাকছে ফোক আর্ট মেলা। এ মাসের ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ২৫-২৭ জানুয়ারি কবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের জন্মবার্ষিকে থাকছে মধুমেলা।
ফেব্রুয়ারিতে মাসব্যাপী একুশে বই মেলা এবং ৬-৮ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জে হাছন রাজার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী হাছন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
ভিজিট ইয়ার বাংলাদেশ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসে প্রভাত ফেরি এবং প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে রচনা প্রতিযোগিতা।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সাভারের জয় রেস্তরাঁয় অনুষ্ঠিত হবে সেকালের গান উৎসব। ৯-১৫ মার্চ বাংলাদেশ পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে করপোরেশনের সব বিভাগীয় হেড কোয়ার্টারে কনসার্ট আয়োজন করা হবে এবং ১৭ মার্চ থাকছে প্রমোশনাল প্যাকেজ ট্যুর।
এদিকে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ লাখ পর্যটক বাংলাদেশ পরিদর্শন করবে বলে প্রত্যাশা করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, পর্যটন বিকাশে ২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বেশ আগেই অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত গিয়েছিল। আগামী সপ্তাহে ফের সেটি কমিশনে পাঠানো হবে।
অন্যদিকে প্রকল্প অর্থ ছাড়াই পর্যটন বর্ষ শুরু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছে ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)।
তাদের মতে, বাংলাদেশকে পর্যটন গন্তব্য গড়ে তুলতে আগে থেকে যেসব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তা সম্ভব হয়নি।
যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে বেশি পর্যটক আসেন, সেসব দেশে প্রচারের এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন টোয়াব সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান খান।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড জানায়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিদেশি পর্যটক আকষর্ণে একটি পরিকল্পনা ছক করেছেন তারা। যেখানে পর্যটক আগমন এবং তা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যটন বোর্ড ৭৮০টি পর্যটন স্পটও চিহ্নিত করেছে।
এর মধ্যে এ বছর ৭ লাখ, পরবর্তী বছর ২০১৭ সালে প্রায় ৮ লাখ ও ২০১৮ সালে ১০ লাখ পর্যটক নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি এ খাত থেকে ২০১৬ সালে ৯৮০ কোটি তিন লাখ টাকা (১২৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার), ২০১৭ সালে ১ হাজার ১৮২ কোটি ২৫ লাখ (১৫২ মিলিয়ন ইউএস ডলার) এবং ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৩২ কোটি ২৬ লাখ টাকা (১৯৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার) বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ সাল নাগাদ সারাবিশ্বে পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটিতে। আর এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। যেখানে বাংলাদেশের সম্ভাবনা খুব বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এটি/জেডএম