হালতি বিল (নাটোর) থেকে: প্রায় ৪০ হাজার একর জমির বিল হালতি। আকৃতিতে ডিম্বাকার।
নলডাঙা উপজেলার একাংশে হালতির অবস্থান। নাটোর সদর থেকে দূরত্ব আট কিলোমিটার। দক্ষিণে পাটুল থেকে শুরু বিল। পাটুল থেকে উত্তরে খাজুরা পর্যন্ত আট কিলোমিটার সাবমার্সিবল রোড (ডুবো সড়ক) বিলকে ভাগ করে দুই ভাগে।
পথে মাঝ বরাবর ১০ ফুট চওড়া রাস্তা ছুঁয়ে গেছে খোলাবাড়িয়া গ্রাম। গ্রামের বাঁপাশ দিয়ে পশ্চিমে কিলোমিটার খানেক দূরত্বের রাস্তা গিয়ে যুক্ত করছে হালতি গ্রামকে। এখানে তিন রাস্তার সঙ্গমস্থল। খোলাবাড়িয়া থেকে সোজা আরও কিলোমিটার খানেক রাস্তা গিয়ে মিশেছে ৭শ’-৮শ’ মানুষের গ্রাম একডালায়। একডালা থেকে একটু উত্তর-পূর্ব কোণে দিঘিরপাড় গ্রাম। রাস্তাটি আরও যুক্ত করেছে হালতিকে।
পাটুলি থেকে খাজুরা পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়ক বিলের দক্ষিণ থেকে উত্তরে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে আরেকটি সড়ক গেছে মাধনগর থেকে মহনপুর। এটি সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ।
দুদিক থেকে বড় দুই রাস্তা মাঝের গ্রামগুলিকে সংযুক্ত করে বিল হালতিকে করেছে চৌচির। এ রাস্তা সাধারণ মানুষের অশেষ উপকারের হলেও বিলের জন্য বিষয়টি খুব সুখকর নয়। মাছের অবাধ বিচরণ এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
ডুবো রাস্তার বিষয়টি বেশ অদ্ভুত। বছরের ৫-৬ মাস এ রাস্তা ডুবে থাকে ৩-৪ ফুট পানির নিচে। পানির নিচে ডুবে থাকে বলে বিশেষ পদ্ধতিতে কংক্রিটের ঢালাইয়ে তৈরি করা হয়েছে এ রাস্তা। একটি ২০০৮ সালে, অন্যটি ১৩তে। সাধারণত নভেম্বর পর্যন্ত পানির নিচে থাকে। তবে প্রতিবছর একরকম নয়। বৃষ্টি কম হলে পানি নেমে যায় আরও আগে।
রাস্তাগুলোর শাখা-প্রশাখা কম নয়। মাঝে-মধ্যে গ্রামের অলিগলিতে ঢুকে পড়েছে। গ্রামগুলো সব উঁচু। তাদের কাছে বর্ষার পানি মানেই বন্যা। যা তাদের গলার কাঁটা। এলাকাবাসী একে হাঁড়ির তলানিও বলে। কারণ সামান্য বৃষ্টি হলেই এ বিলে হু হু করে বাড়তে থাকে পানি।
খোলাবাড়িয়া থেকে পূর্বে বিলের যে অংশটিতে তুলনামূলক বেশি পানি থাকে সারাবছর সেটি মাছের অভয়ারণ্য। এ বিলের সঙ্গে আত্রাইয়ের সরাসরি যোগযোগ না থাকলেও আত্রাইয়ের শাখা বারলইয়ের সংযুক্তি আছে, যা বিলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাস্তার দুপাশ জুড়ে নানা ফসলের খেত। শুষ্ক মৌসুমে স্কুল মাদ্রাসায় যাতায়াত, পণ্য পরিবহন প্রভৃতি কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ রাস্তা। তার পাশজুড়ে কুনি, গম, ধানের খেত। শেষ মাথায় রয়েছে একটি প্রাইমারি স্কুল। তেমাথার কোণে হাইস্কুল ও মাঠ। মাঠের পাশ দিয়ে পুবের একডালাগামী রাস্তার পাশেও এখন ইরি ধানের ব্যস্ততা।
খোলাবাড়িয়া দাখিল মাদ্রসার পাশ দিয়ে সর্পিল রাস্তাটি ডানে মোড় নিয়ে একডালা ও দিঘিরপাড়ে গেছে। চাষির নিত্য আনাগোনা রাস্তার পাশের একফসলি জমিগুলোতে।
চৌচির হালতি বুকে যন্ত্রণা নিয়ে সেবা দিয়ে চলেছে চার গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে। সবুজ চাদর আর কক্সবাজার তুল্য জলরাশির অসীম সৌন্দর্যের হালতি বিল মা তুল্য। মৃত্তিকা তো মা-ই।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এসএস/এএ/জেডএম
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট