বাগাতিপাড়া (নাটোর) থেকে: উত্তরবঙ্গের উত্তুরে হাওয়া কী কারণে প্রসিদ্ধ তা আশাকরি সবারই জানা। সঙ্গে বৃষ্টি হলে কী ঘটে, সেটি বুঝতে হলে উত্তরবঙ্গই আসতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলেই চলনবিল থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরা। মধ্যরাত থেকে শুরু হলো রীতিমতো বর্ষণ। পরদিন ভোর থেকে সাতটা, আটটা, নটা- বৃষ্টি অনবরত চলছেই। এরপর থেমে থেমে, কখনও মৃদু, কখনও জোরে- বৃষ্টি থামার নাম নেই।
বাড়ির বড়রা তো বলেই ফেললেন, এ তো আষাঢ় মাসের বৃষ্টি শুরু হলো!
বৃষ্টি থামছে না, এদিকে বেরুতেই হবে- শেষে প্যান্ট গুটিয়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল-ছাতা নিয়ে ছুট। সেটিই হলো কাল!
বুধবার (২০ জানুয়ারি) আমাদের যাত্রা ছিলো দয়ারামপুর থেকে মালঞ্চি, তমালতলা হয়ে জামনগর শাঁখারি পাড়া। কাগজে-কলমে দূরত্ব প্রায় ২৫ কিমি হলেও, এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা আর বৃষ্টি-কুয়াশা মিলে ৪০ কিমির কষ্ট।
তার উপর বাহন কেবল ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও অটোরিকশা। নাটোর সদর থেকে অবশ্য জামনগর ১৫ কিমির পথ।
রাস্তায় বেরিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। বেলা বাজে দু’টো অথচ পুরো দৃশ্যপট ভোরের। টানা বৃষ্টিতে বেশিরভাগ মানুষ বেরোয়নি। বলা ভালো, বেরোনো সম্ভব হয়নি। ভ্রাম্যমাণ দোকানের উপর টুল-টেবিল বাঁধা।
চায়ের দোকানের চুলোতো জ্বলেইনি বরং সামনে পানি জমে খাল-বিল। বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় ছাতামাথায় দু’-চারটে লোকের দেখা মিললো, তাও বিশেষ প্রয়োজনে। কিন্তু বাজার ছেড়ে গ্রামের দিকে ঢুকতেই মনে হলো, এ কেবল ভোর নয়, কাকভোর। কাকও বোধহয় ওঠেনি!
বৃষ্টি নেই কিন্তু মেঘ কাটেনি। তার উপর ঘন কুয়াশা। সামনে খানিকটা পিচঢালা রাস্তা আর দু’ধারে বাবলা-খেজুর গাছের সারি, এছাড়া বিশেষ কিছু দেখা যায় না।
সর্ষে খেত, গমের খেত, দূরের গ্রাম, গাছ-বাড়ি সব সাদা। যেনো শিল্পী তার চিত্রকর্মে চ্যাপ্টা ব্রাশ দিয়ে সাদা রং টেনে দিয়েছেন! এর সঙ্গে বাড়তি যোগ, হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা।
বৃষ্টির দাপটে শীত বাবাজি একটু পিছু হঠলেও, এবার স্বরূপে অবির্ভূত হচ্ছেন। শুরুতেই লিখেছিলাম, গোটানো প্যান্ট আর স্যান্ডেলই কাল হলো।
বিষয় হলো, চারদিক খোলা ব্যাটারিচালিত ভ্যান তিরতির করে এগিয়ে চলেছে, যাচ্ছে তো যাচ্ছেই- পথতো আর কম নয়!
মোবাইলে কিছু লিখতে গিয়ে দেখা গেলো আঙুল চলে না, হাত-পা যেনো নেইই, পুরো অবশ। উপরি গোটানো প্যান্টের ভিতর দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে মেরুদণ্ড বেয়ে সোজা নিউরনে বাড়ি মারছে!
এক সহযাত্রী তো প্যান্টের উপর লুঙ্গির পরে চলে এসেছেন। বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলে মুচকি হেসে বললেন, বৃষ্টির জন্য লুঙ্গি আর শীতের জন্য প্যান্ট।
তার এই অন্যরকম ব্যবস্থায় অন্যরাও বেশ মজা পেলেন।
ভ্যান এগিয়ে চলেছে। মাইলের পর মাইল বিরানভূমি। হঠাৎ সবাই যেনো সব ছেড়েছুড়ে কোথাও চলে গেছে। এ তো চিরায়ত গ্রামের রূপ নয়! মাঠভর্তি লোক থাকবে, বাড়ির সামনে থাকবে বউদের জটলা- কিন্তু নেই। কিছু না থাক, রাস্তাজুড়ে দস্যি ছেলেপুলে তো থাকার কথা, তাও নেই।
রাস্তার ধারের দোকানগুলো খোলেইনি। এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। যে কয়েকটি খুলেছে তা চায়ের দোকান। দু-একজন ভিড় করেছেন গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের জন্য, এসময় এটিই যেনো অমৃত।
এসব নিয়ে আলাপচারিতার সূত্র ধরে পাশ থেকে একজন ফোড়ন কাটলেন, কিডা বের হবি এই শীতে!
ভ্যানচালক আসাদ চাচা সেই সার্টিফিকেটও দিয়ে দিলেন, শীত এই কদিন ভালোই পড়বি চাচা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এসএস/এএ
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট