পারকী সৈকত (চট্টগ্রাম) ঘুরে এসে: অবসরে বন-পাহাড় আর সাগরের নীল জলের মিতালি কে না চায়? ঊষা ও গোধূলিতে উত্তাল সাগরের বুকে স্বর্ণের আভা ছড়ানো সূর্যের উদয়-অস্ত কাকে না শিহরিত করে?
যান্ত্রিক জীবনে আর ইট-কংক্রিটের শহরের মানুষ মাত্রই তাই একটু অবসর পেলেই ছোয়া পেতে চান সাগর-পাহাড়ের। অকৃত্রিম প্রকৃতির।
তবে পায়ের নিচে উত্তাল সাগরের নীল জলরাশির পরশ মানেই অধিকাংশের কাছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পতেঙ্গা বা কুয়াকাটা।
তবে এর বাইরেও রয়েছে মন্ত্রমুগ্ধকর এক অপরূপা সমুদ্র সৈকত। এর বালুরাশিতে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে কক্সবাজার বলেই ভ্রম হবে অনেকেরই।
এখনও দেশের অনেকেরই কাছে অজানা থাকা এ অনন্যসুন্দর সৈকতের নাম ‘পারকীর চর’। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত এ চর, বেলাভূমির সৌন্দর্য কোনো অংশে কম নয়।
তবে যাতায়াতের সমস্যা আর সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এ সৈকতটি এখনো পর্যটকদের সেভাবে দৃষ্টি কাড়েনি। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন করলে এ সৈকতের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পারকীর চরকে পর্যটকবান্ধর করে তুলে ও প্রচারণা চালালে নিরিবলি গ্রামীণ পরিবেশের এ সৈকতে সমাগম হবে দেশে-বিদেশের অসংখ্য পর্যটকের।
পারকীর চর ঘুরে দেখা গেলো, আকৃতির দিক থেকে কক্সবাজার এমনকি পতেঙ্গা সৈকতের মতো বিশালাকৃতির নয় পারকী সৈকত। তবে এর প্রতি পরতে পরতে সৌন্দর্যের ঝিলিক। মুগ্ধকর বেলাভূমি, ঝাউবন আর গ্রামীণ প্রকৃতি এতে অনন্যসুন্দর করে গড়ে তুলেছে। ফলে সেভাবে প্রচারণা না থাকলেও দিন-দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পারকীর চর। বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়।
পারকী সৈকতের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে ঝাউবন। এই ঝাউবনের শীতল হাওয়ায় গা জুড়িয়ে নিয়ে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের মনোরম সৌন্দর্য।
ফেনী থেকে আসা রুমা নামে এক পর্যটক বাংলানিউজকে জানান, নিরিবিলি গ্রাম্য পরিবেশে দারুণ লেগেছে পারকীর চর। এখানে এলে যে কারোরই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। সৈকতের বালুচরে লাল কাঁকড়ার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য মুগ্ধ করবে যে কাউকেই।
তবে তার অভিমত, এখানে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এছাড়া শহর থেকে আসার পথে যাতায়াত ব্যবস্থাও তেমন ভালো না। যদি নিরাপত্তা আর যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা যায় তাহলে কক্সবাজার আর পতেঙ্গার মত এ বিচেরও রয়েছে দারুণ সম্ভাবনা।
সৈকতের পাশে গড়ে ওঠা খাবার হোটেল ‘গাঙচিল’র কর্মচারী আবুল হোসেন জানান, এখানে খাওয়া-দাওয়ার জন্য কিছু দোকানপাট গড়ে উঠলেও এখনো সেভাবে থাকার জন্য এবং গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা আসতে চান না। ভালো আবাসিক হোটেল, যাতায়াত আর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেলেও এ বিচ পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়ে থাকবে।
এদিকে, পারকীর চরে যাওয়ার পথে কর্ণফুলী নদীর উপর প্রমোদতরীর আদলে নির্মিত নতুন ঝুলন্ত ব্রিজটিও মন কাড়ার মতো। এছাড়া পথে চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কর্ণফুলী সার কারখানা ঘুরে আসার সুযোগ রয়েছে।
পারকীর চরে কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহর থেকে এ সৈকতের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। গাড়িতে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা খানেকের মতো। এটা মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত আনোয়ার থানার অন্তর্গত উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
বিনোদনের ব্যবস্থা
পারকী সৈকতে প্রবেশ পথেই সরু রাস্তার উভয়পাশে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের রয়েছে। সৈকতের ধার ঘেঁষে অসংখ্য ঝাউগাছ। ঝাউবন ঘেঁষে ফাঁকে-ফাঁকে গড়ে উঠেছে কিছু খাবারের দোকান।
সৈকতে আসা পর্যটকরা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ঘোড়ায় চড়া ছাড়াও রাইডিং বোট, বসার জন্য বড়ছাতা সহ হেলানো চেয়ারের সুবিধা পেতে পারেন। চাইলে খেলতে পারেন বিচ ফুটবলও।
খাবার ও আবাসনের ব্যবস্থা
সৈকতের দোকানগুলোতে দুপুরের খাবার ছাড়াও ফুসকা, চটপটিসহ হালকা খাবার ও পানীয় পাওয়া যায়। পিকনিক বা পরিবারের সদস্যদের জন্য চাইলে আগে থেকেই এখানকার হোটেলগুলোতে খাবারের অর্ডার দেওয়া যায়। এরকম একটি হোটেল ‘আপন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। খাবার অর্ডারের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮২৯-৪৪৮৪০৩ নম্বরে।
তবে খাবারের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলেও পারকীর চরে এখনো রাতযাপনের জন্য নেই কোনো সুবিধা। গড়ে ওঠেনি কোনো আবাসিক হোটেল।
বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৬
এসআর