মানিকগঞ্জের ধল্লা গ্রাম থেকে ফিরে: ইট-পাথরের শহুরে জীবনে মাটি নেই। নেই সোঁদা মাটির গন্ধ।
বাংলাদেশের গ্রাম মানেই সবুজ। গ্রাম মানেই পাখ-পাখালি। গ্রাম মানেই মধুরতা। নগর জীবনে মিশে থাকা মানুষের গ্রাম দেখার স্বাদ মেলে বছরে দু’বার দুই ঈদে। বাস ট্রেন লঞ্চ ভরে তখন মানুষ ফেরেন নাড়ির টানে মধুর গ্রামে।
শুধু ঈদ নয় নিরেট সবুজের ভালোবাসার গ্রাম আছে ঢাকার আশপাশেই।
যে গ্রামের গল্প বলছি সেটি মানিকগঞ্জের ধল্লা। রাজধানী ঢাকার অদূরে। সময়ের হিসেবে দূরত্ব ঘণ্টাখানেক।
মিরপুর থেকে বাসে মাত্র আধঘণ্টা, তারপর হেমায়েতপুর নেমে আরও আধঘণ্টা। তারপর সবুজ, আলপথ, ভুট্টার ক্ষেত। শুকানো খাল। কালের তোড়ে হারিয়ে যাওয়া বিশাল নদীর বুক। সন্ধ্যা নামলেই জ্বলছে জোনাকি, সঙ্গে নামছে অদ্ভুত আঁধার। তার আগে দিগন্তবিস্তৃত গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে সারাদিনের ক্লান্ত সূর্য বিদায় নেয়া দৃশ্য।
হেমায়েতপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশা অথবা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় ধল্লা বাজার, তার পরেই কাঠের খাল।
এরপর আর শহর ভুলে যাওয়া মেঠোর মায়ায় পড়ে থাকার স্বাদ। মাটির পথ ধরে সবুজ জমিনে খোলা আসমানের নিচে কাটিয়ে আসা সন্ধ্যাটা। আর এমন গ্রামের প্রেমে একদমই ভুলে যাবেন শহরে ফেরার তাড়া।
ধল্লার একপাশ চরউলায়া গ্রামে তখন সন্ধ্যা। আলো নেই। যান্ত্রিকতারও ছোঁয়া নেই। আছে শুধু নিবিড়তার এক তৃপ্তি। মনে হবে শহর থেকে দূরে… অনেক দূরে কোথাও।
সন্ধ্যা নামা অস্তমিত সূর্যের এক সৌন্দের্য্যের ঢাকার মানিকগঞ্জের এই গ্রাম ধল্লা। এরপর রাত্রি শুরু। জ্বলে আর নেভে জোনাকীর আলো।
চোখে পড়ছে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে গৃহবধুর ঘরগোছানো। আর উপরে চেয়ে দেখুন রাতের আকাশভরা কেমন তারার মেলা। তার নিচে বসে শুয়ে কাটিয়ে দেয়া যায় পুরো রাত। চাইলে বসবে বাউল গানের আসর।
হাজার তিনেক টাকায় বাউল আসর বসে এই গ্রামে। খবর দিলেই দল নিয়ে এসে পড়বে বাউল। শহর জীবনে আচ্ছন্ন যান্ত্রিকতার মাঝে যদি কাটানো যায় এমন একটি রাত।
ফেসবুকে তখনই মাহমুদ হাসান খান লিখে দিয়েছেন, ‘ফাইভ স্টারের নিচে নয় বসে আছি বিলিয়ন বিলিয়ন স্টারের নিচে’।
ফেসবুকভিত্তিক জনপ্রিয় পর্যটন গ্রুপ ‘বেড়াই বাংলাদেশ’ এর প্রধান মাহমুদ হাসান খান বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেন বাংলাদেশের গ্রাম। তার ‘ট্রিপ টু বাংলাদেশ’ বিদেশিদের নিয়ে চলে গ্রামের পথে। সেই গ্রামের সুনিবিড় ছাড়ায় অনেক দিন কাটিয়ে যান সাত সাগর তেরো নদীর ওপারের ভিনদেশিরা।
কিন্তু নগরজীবনে বন্দি যান্ত্রিকতায় অভ্যস্ত মানুষকেও তিনি গ্রাম দেখাচ্ছেন ইদানিং। তার সেই উদ্যোগের ডাক পেলেই অনেকেই ছুটে চলেন। ছুটে চলে বাংলার মেলা ধরা রূপের হাড়ির খোঁজে।
বেড়াই বাংলাদেশ নিয়মিত আয়োজন করছে ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে বিভিন্ন ট্রিপ। তেমন একটি গ্রুপ ট্রিপ ছিলো এই ধল্লা গ্রামে। অনেকেই বিকেলে রওয়ানা দিয়ে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা রাতে ফিরবেন বলে। কিন্তু গ্রামের মধুর হাঁড়িতে সুখের নীড় গড়ে তাদের অনেকেই ফিরেছেন পরের দিন।
নগরজীবনে অভ্যস্ত কেউ অথবা তার পরবর্তী প্রজন্মকে গ্রাম চেনাতে হলে নিয়ে যেতে পারেন সিঙ্গাইর বা ধল্লার গ্রাম গ্রামান্তরে।
পর্যটকদের জন্য বা যারা রাতে থাকতে চান তাদের জন্য ধল্লা গ্রামে খোলা আকাশে টেন্ট গড়ে থাকার মত খোলা মাঠ সবুজ ঘাসের বিছানার অভাব নেই।
এছাড়াও বেড়াই বাংলাদেশের একটি কটেজ আছে। আগে থেকে বলে গেলে সেটি প্রস্তুত রাখতে পারে বেড়াই বাংলাদেশ।
বেড়াই বাংলাদেশের প্রধান মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘মানিকগঞ্জ এর সিংগাইর এর ধল্লা গ্রামে আমরা প্রায়ই যাই গরুর খাঁটি দুধ, সবজি আর গ্রাম বাংলার খোঁজে। ধল্লা গ্রামের পাশেই পারিল বাজারে। বাজারে তাজা তাজা সবজির সমাহার। দাম ঢাকার অর্ধেক। সবচে’ অবাক ব্যাপার হল- প্রচুর দেশি মাছের সমাহার। এমন দেশি কৈ মাছ এখন চোখেই পড়ে না। দাম বেশ কম। কেজি ৩০০ টাকার মতো পড়ে। খাঁটি দুধের কেজি ৬০ টাকা। তবে ঢাকা থেকে ধল্লা গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন মাত্র ১০০ টাকার মধ্যেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
এসএ/জেডএম