ইউএস-বাংলায় উড়ে: পায়ের নিচে মেঘের সাদা চাদর। পনেরো হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ছে ইউএস-বাংলার অত্যাধুনিক এয়ারক্র্যাফট।
এমন যাত্রীবান্ধব আতিথেয়তার ফলও ঠিক ঠিকই পাচ্ছে তারা। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বিএস১৪১ ফ্লাইটটির সব আসনই পূর্ণ।
আরশির বাবা রানা বেক্সিমকোর ফার্মাসিস্ট। সপরিবারে যাচ্ছেন কক্সবাজার। ইউএস-বাংলার সেবা ও সময়ানুবর্তিতা নিয়ে দারুণ সন্তুষ্টি তার। অকপটে বললেন, ডমেস্টিক ফ্লাইটে এখন ইউএস-বাংলাতেই চড়ি। এই এয়ারলাইন্সটি অপারেশন শুরুর পর আর অন্য কোনো এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করার ইচ্ছা হয় না।
দেশের ভেতর ফ্লাইট পরিচালনাকারী সব এয়ারলাইন্স নিয়েই নিজস্ব বিশ্লেষণ আছে এই ফার্মাসিস্টের।
নিজের বক্তব্য আর একটু এগিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, বাংলানিউজে ধারাবাহিক রিপোর্টের কারণেই তো ইউনাইটেড এয়ারের মতো গরুর গাড়ি মার্কা সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলো। আমরা বেঁচে গেলাম। এখন আপনারা এই এয়ারলাইন্স নিয়ে ভালো কিছু লেখেন। বাস্তবিকই ইউএস-বাংলাকে নিয়ে লেখার মতো ইতিবাচক বিষয়ের অভাব নেই। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে পৌঁছামাত্র এয়ারলাইন্সটির কর্মীরা এসে যেভাবে লাগেজের দায়িত্ব নিয়ে নিলো তাতে চমকিত না হয়ে উপায় নেই।
কাউন্টারে বসা কর্মীরা সব সময়ই হাসছেন। যাত্রীর মনস্তত্ত্ব বুঝে প্রয়োজনীয় পরামর্শ আর সহযোগিতা দিচ্ছেন তারা। বোর্ডিং পাস নেওয়ার পর থেকে বিশেষভাবে খোঁজখবর করতে থাকলেন ম্যানেজার, এয়ারপোর্ট সার্ভিস মাহবুবুর রহমান। তাদের আন্তরিক সহযোগিতায় নির্ধারিত সময়েই প্লেনে উঠে বসলেন যাত্রীরা।
রানওয়েতে দৌড় শুরু করে কিছু দূর এগিয়ে ফের থেমে গেলো প্লেন। সামনে আরো দু’টো এয়ারক্র্যাফট ওড়ার অপেক্ষায়। ঘোষণা ভেসে এলো-দেরি হবে ৫ কি ৭ মিনিট। অবশ্য তিন মিনিট পেরুনোর আগেই ফের দৌড় শুরু করলো প্লেন। হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওড়ার সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১৪৭ ডিগ্রি থেকে ১৫১ ডিগ্রির ভেতরে কাঁপতে থাকলো কম্পাসের কাঁটা। একটু ওড়ার পর অবশ্য কম্পাসের কাঁটাটা স্থির হয়ে পড়ে রইলো ১৮১ ডিগ্রিতে। কমে এলো ঝাঁকুনি।
আর সব ডমেস্টিক ফ্লাইটের মতো ইউএস-বাংলার এই এয়ারক্র্যাফটে ঝাঁকুনি একদমই নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাও দারুণ কার্যকর। প্রত্যেক যাত্রীর কাছে গিয়ে ভ্রমণের সুবিধা-অসুবিধা জানতে চাইলেন কেবিন ক্রুরা।
জানালা গলে নিচে কয়েক স্তরের মেঘ। দ্রুত ছুটে যাচ্ছে পেছনে। মেঘ সরে গেলে মনে হলো-পায়ের নিচে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে দিগন্তবিস্তৃত এক নীল সমুদ্র। দূরে তার তীর ধরে পাহাড়ের মতো মেঘ। চট্টগ্রাম পার হওয়ার পর একটু একটু করে নিচে নামতে থাকলো প্লেন। মহেশখালী দ্বীপ পেরুনোর সময়ে চোখে পড়লো সারি সারি পানের বরজ। অসংখ্য খাঁজ বিশিষ্ট পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে শুয়ে দুপুরের রোদ মেখে চিকচিক করছে।
শাহজালালে আকাশ ছিলো মেঘলা। মুখ ভার করে ভাসছিলো ধূসর রূপ নেওয়া মেঘের দল। কিন্তু কক্সবাজারের আকাশে ঝলমলে রোদ হাসছে। পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের দল এখানে তুষারের মতো সাদা। তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি হলেও সাগর ছুঁয়ে আসা হু হু বাতাস রোদের তাপ গায়ে বসতে দেবে না বলে পণ করেছে যেনো। প্লেন ত্যাগের সময়েও হাসি মুখে বিদায় দিলেন ক্রুরা।
‘ফ্লাই ফাস্ট ফ্লাই সেফ’ স্লোগানে দেশের আকাশপথ জয়ের পর এবার আন্তর্জাতিক রুটে ডানা মেলছে ইউএস -বাংলা। আগামী ১৫ মে ঢাকা থেকে প্রথম ফ্লাইটটি উড়বে হিমালয়কন্যা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উদ্দেশে। রিটার্ন টিকিটের ভাড়া হবে ১৭ হাজার ৬২২ টাকা। এই ভাড়া ঢাকা-কাঠমান্ডু যাতায়াতকারী আর সব ফ্লাইটের তুলনায় কমই বটে।
ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট চালু হবে কানাডার বোমবার্ডিয়ার কোম্পানির তৈরি ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ সিরিজের এয়ারক্র্যাফট দিয়ে। তারপর দ্রুতই নতুন প্রজন্মের এয়ারক্র্যাফট বোয়িং ৭৩৭-৮০০ যোগ হবে ইউএস-বাংলার বহরে। আগামী ১০ এপ্রিল ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
দু’বছর ধরে বেশ সুনামের সঙ্গেই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। নিখুঁত শিডিউল, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, আন্তরিক যাত্রীসেবা, সাশ্রয়ী ভাড়া ইত্যাদি কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে এখন ইউএস-বাংলাই প্রথম পছন্দ যাত্রীদের। আন্তর্জাতিক রুটেও দেশের ব্যবসাসফল এই বেসরকারি এয়ারলাইন্সটি সুনাম কুড়াবে বলেই মনে হচ্ছে।
বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বরিশাল, যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা।
কাঠমান্ডুর পর ভুটানের পারো, ভারতের কলকাতা, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ওমানের মাস্কাট, কাতারের দোহা, আরব আমিরাতের দুবাই, সৌদি আরবের জেদ্দা এবং চীনে ফ্লাইট চালু করবে তারা।
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
জেডএম/