কক্সবাজার থেকে: দোহাজারী স্টেশন। দেশের সর্ব দক্ষিণের রেলওয়ে স্টেশন এটি।
অবিভক্ত আসাম রেলওয়ে ১৯২৯-৩১ সালে পূর্বাঞ্চলীয় রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম শহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৭ কিলোমিটারের এ রেলপথ নির্মাণ করে। এরপর কেটে গেছে সুদীর্ঘ ৮৫ বছর। কিন্তু দক্ষিণে আর বাড়েনি রেলপথের দৈর্ঘ্য। ট্রেন এসে থেমে যায় এই স্টেশনে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহর থেকে সৃষ্ট এ রেলপথ জেলার তিনটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে দোহাজারী স্টেশনে এসে শেষ হয়েছে। এই রেলপথের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের বটতলী, ঝাউতলা, পলিটেকনিক ও ষোলশহর, বোয়ালখালী উপজেলার জানালি হাট, গোমদণ্ডী, বেঙ্গুরা, পটিয়া উপজেলার ধলঘাট, খানমোহনা, চক্রশালা, খরনা, খানহাট, হাশিমপুর ও দোহাজারীসহ প্রায় ১৬টি রেলওয়ের ছোটবড় স্টেশন রয়েছে। সর্বনিম্ন ৫ টাকা, সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ভাড়ায় শহরে যাতায়াত করতে পারেন মানুষজন।
মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে সাতটায় দোহাজারী স্টেশনে সরিজমিনে দেখা যায়, দোহাজারী সবজিবাজারের বুক চিরে দক্ষিণে কিছুদূর গিয়ে থেমেছে রেলপথ। ওই স্টেশনে চারটি রেলবিটের মধ্যে তিনটি সচল রয়েছে। তবে তেলবাহী ও পাথরবাহী দুটি ওয়াগন দেখা গেলেও যাত্রীবাহী ট্রেন ছিল না।
একটা সময় চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে দিনে ১২ জোড়া রেল চলাচল করলেও, বর্তমানে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র একটি ট্রেনে। তাও রাতে আসে, ভোরে চলে যায়। তাই মানুষজনও যেন ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে সেই ট্রেনে।
স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী আবদুল মোতালেব বলেন, ‘একটা ট্রেন আসে রাত নয়টা-সাড়ে নয়টার দিকে। আবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় নগরের উদ্দেশে চলে যায়। এত ভোরে মানুষ কই যাবে? দোহাজারী স্টেশন থেকে প্রতিদিন ১০-১২ জন মানুষ শহরে যায়। ’ ‘সরকারি সম্পত্তি বলে টিকে আছে আর কি! এখান থেকে তো লাভ দূরের কথা। কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনও উঠবে না। আল্লাহর ওয়াস্তে চলছে এই আর কি!’- যোগ করেন আবদুল মোতালেব।
মোহাম্মদ আইয়ুব আলী নামের স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘সেবার মান বাড়লে মানুষজনও আগ্রহী হবে ট্রেনে। যে ট্রেনটি চলাচল করে সেটি প্রায় মালবাহী ধরনের। পাশাপাশি ট্রেনের শিডিউলেও পরিবর্তন আনা দরকার। তবেই যাত্রীরা আগ্রহী হবে। ’
সবজিবাজারের উত্তরের ঢিল ছোড়া দূরত্বে লাগোয়া দুটি ঘর। এর একটিতে বসেন স্টেশন মাস্টার। অন্য একটি ঘরের দু'টি কক্ষের মধ্যে একটি বিশ্রামঘর, অন্যটিতে লাইনম্যান আর অপারেটররা বসেন।
সকাল পৌনে আটটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দারোয়ান অলি আহমেদ। বাইরে ঝাড়ু দিচ্ছিল রেলওয়ের কর্মচারী মাজুরা বেগম।
স্টেশন মাস্টারের কক্ষটি তালাবদ্ধ। পরে দারোয়ান অলি আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্টেশন মাস্টারের বাসা পটিয়ায়। তিনি ট্রেনে করে সেখানে চলে গেছেন। ’
পরে অনেক তোড়জোড়ে মিলল স্টেশন মাস্টার কাঞ্চন ধরের মোবাইল নম্বর।
কাঞ্চন ধর বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি মাত্র ট্রেন, তাও চলে এক শিডিউলে। তাই যাত্রী একটু কম আমার স্টেশনে। দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম শহরের বটতলী স্টেশন যেতে প্রতি টিকিটের মূল্য ১৪ টাকা। দিনে ২০০-২৫০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় এই স্টেশনে। বর্তমানে আমিসহ পাঁচজন কর্মকর্তা কর্মরত আছি স্টেশনটিতে। ’
তবে যাত্রীবাহী ট্রেন সংকট থাকলেও ২০১২ সালে দোহাজারীতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পিকিং প্ল্যান্ট স্থাপনের পর ফার্নেস অয়েলবাহী ২/৩ জোড়া ট্রেন নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে বলেও জানান কাঞ্চন ধর।
এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম দোহাজারী রেলপথ সংস্কারের পাশাপাশি কক্সবাজার হয়ে রামু পর্যন্ত এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এসব অঞ্চলের মানুষ অনেক কম সময়ে এবং কম ভাড়ায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যাতায়াত করতে পারবেন, চাপ কমবে যাত্রীবাহী বাসের ওপর। এমনটিই মনে করেন এসব এলাকার মানুষেরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
টিএইচ/এমজেএফ/
** মেঘের সাগরে আয়েসি উড়াল