কক্সবাজার থেকে: দেশের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত ও সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট কক্সবাজার। এখানে পর্যটকরা আসেন আনন্দঘন সময় কাটাতে।
এখানে বেড়াতে এসে যারা দ্রুতগতির ‘জেট স্কি’ তে উঠছেন তাদের জন্য ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশি। কারণ দ্রুতগতির এ জেট স্কি চালানো হচ্ছে সৈকতের জনবহুল এলাকায়। যদিও এটা চালানোর জন্য শুধু নির্দিষ্ট এলাকাতে অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ জেট স্কি। মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) কক্সবাজারের লাবনী বিচ ঘুরে পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতগতির এ জেট স্কি নিয়ে এমন ঝুঁকির কথা জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জনবহুল এলাকায় অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন ’জেট স্কি’ চলছে আপন গতিতে। যারা চালক তাদেরও নেই প্রশিক্ষণ, যারা শখের বসে উঠছেন তাদেরও নেই এর নিয়ন্ত্রণ করার ধারণা।
একটি ‘জেট স্কি’তে দুই থেকে চারজন উঠে সমুদ্রের ঢেউয়ে নিজেকে মেলে ধরছেন, আনন্দ করছেন। কিন্তু যারা সমুদ্রের পানিতে নামছেন তাদের একজনেরও ধারণা নেই, এটি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
যেকোনো মুহূর্তে দ্রুত গতির জেট স্কি তার গায়ের ওপর দিয়ে উঠে যেতে পারে। যদি এমনটি হয় নিমিষেই হারিয়ে যাবে দেহটি। কেননা জেট স্কির নিচের দিকে রয়েছে ব্লেডের মতো ধারালো বস্তু। এর আঘাত লেগে যে কেউ প্রাণ হারাতে পারেন।
রয়েল ন্যাশনাল লাইফ বোর্ড ইনস্টিটিউশনের (আরএনএলআই) অর্থায়নে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) সি সেইফ প্রোজেক্ট- কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, ‘জেট স্কি’ নিয়ে আমরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছি। এটি যেকোনো সময় কারো গায়ের ওপর দিয়ে উঠে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটা যদি নির্দিষ্ট জোনে চালাতো বা সমুদ্র তীরের ১০০ মিটার দূরে থাকতো তাহলে তেমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু ওরা যেখানে মানুষ বেশি থাকে, সেখানেই ঢুকে পড়ে। আমরা প্রশাসনকে বলেও এর কোনো সদুত্তর পাইনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্পিড বোটের মতো দ্রুত গতির ‘জেট স্কি’র জন্য কলাতলী বিচ পয়েন্টে একটি নির্দিষ্ট এলাকার প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। কেউ চাইলে এখানে এসে জেট স্কি’তে উঠতে পারেন। কিন্তু ব্যবসার খাতিরে জেট স্কি’র চালকরা জনবহুল স্থানে চলে আসেন।
জেট স্কি’র পরিচালক খোকন বাংলানিউজকে জানান, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এটা চালাচ্ছি। পুলিশ সবই দেখেন এবং জানেন।
অনুমতি তো রয়েছে শুধুমাত্র কলাতলী বিচে সুনির্দিষ্ট জায়গায়- এমন প্রশ্নের উত্তরে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন খোকন। তিনি বলেন, আমরা এখানে থাকছি না, চলে যাচ্ছি। মানুষের মধ্যে কেন চালালেন?- এমন প্রশ্ন করতেই বলেন, দেখছেন না চলে যাচ্ছি!
অপারেটরদের কোনো প্রশিক্ষণ নেওয়া আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আছে। ’ তবে কোথা থেকে? এর কোনো উত্তর নেই জেট স্কির পরিচালকের।
সি সেইফের একজন লাইফ গার্ড সুমন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জেট স্কি যদি কারো গায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়, তবে তার শরীরের টি শার্টও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি গায়ের চামড়াও খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। কারণ, জেট স্কির আঘাতে প্রাণহানি ঘটতে পারে।
বিষয়টি বিচে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাশেমকে অবহিত করলে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন, এখানকার নিয়ম কানুন জানি না। তবে, জেট স্কি বোর্ডটি দেখে মনে হলো দুর্ঘটনা ঘটতেও পারে। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। ’
তবে টহল পুলিশদের উপস্থিতি পেয়ে জেট স্কি’গুলো সমুদ্রের পানি থেকে তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ চলে গেলে আবার নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমনি ভাবে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ‘জেট স্কি’। জেট স্কি’র দুর্ঘটনায় এখানে অনেকেই আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এমনকি গত বছর একজন মারাও গেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
নারী পর্যটকদের ক্ষেত্রে ‘জেট স্কি’ নিয়ে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। জেট স্কির অপারেটরদের বিরুদ্ধে অনেক সময় নারীদের গায়ে হাত দেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ নিয়ে নাকি মাঝে মাঝেই বাকবিতণ্ডা ঘটে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
এসএম/এসএইচ/পিসি
** অব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত