কক্সবাজার থেকে: পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকতের মাত্র কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই আবদ্ধ থাকছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে সুগন্ধা, লাবনী, কলাতলী, ইনানি বিচেই পর্যটকদের আনাগোণা বেশি।
এর কারণ অনুসন্ধান করে পাওয়া গেল বিচ ঘিরে নেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। কেউ চাইলে এসব পয়েন্টের বাইরে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারছেন না। কয়েকটি নির্দিষ্ট বিচের বাইরে পর্যটক না থাকার অন্যতম কারণ- নিরাপত্তার অভাব, নেই বসার জায়গা ও খাবার হোটেল। ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের এই নির্দিষ্ট গন্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে।
সুনির্দিষ্ট এসব বিচের কোনটির দৈর্ঘ্য ১ কিলোমিটার কোনটির দুই কিলোমিটার। সব মিলিয়ে গড়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত ঘুরতে পারছেন পর্যটকরা। সৈকতের শতাধিক কিলোমিটারই অদেখা থেকে যায় তাদের। অথচ একটু পরিকল্পনা করলেই পুরো ১২০ কিলোমিটার জুড়েই থাকতে পারেন পর্যটকরা- এমনটি মনে করেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজার ডায়বেটিস হাসপাতাল, রেজুখালি, মারমেইড রিসোর্ট, হিমছড়ি, প্রবাল সৈকত এলাকায় টহল পুলিশ, বসার ব্যবস্থা, থাকার-খাওয়ার ভালো হোটেল-মোটেল হলেই আসতে পারেন পর্যটকরা।
কক্সবাজারের সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে কথা বলেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) সি সেফ প্রজেক্টের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার মো. ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, আমাদের ১২০ কিলোমিটারের মাত্র কয়েক কিলোমিটারই ব্যবহার হচ্ছে। অথচ একটু নিরাপত্তা ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার হোটেল-মোটেল হলেই পর্যটকদের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করার সুযোগ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো ভালো ইভেন্ট নেই। শুধুমাত্র থার্টি ফার্স্ট নাইট, পহেলা বৈশাখ, বড়দিন বা বিশেষ কোনো দিন নয়, বছরজুড়েই সৈকতকেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান থাকা দরকার। সেটি নেই বলে মানুষ শুধু সমুদ্র পাড়ে আসেন একটু দেখেই চলে যান। যদি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হয়, তাহলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপ্না দাস (৪৫) বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এখানে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা থাকলেও এই লাবনী পয়েন্টের বাইরে অনেক জায়গাতে কেউ যেতে পারেন না ভয়ে।
দুই কন্যা কেয়া দাস ও অমি দাসকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ে ঘুরতে ঘুরতে বাংলানিউজকে স্বপ্না দাস আরও বলেন, আমি মেয়েদের নিয়ে প্রতিদিনই আসি। সমুদ্র পাড়ে ঘুরতে ভালো লাগে। আমাদের কোনো সমস্যা হয় না, তবে মাঝেমাঝে পর্যটকদের নানা সমস্যা দেখি। যেমন অনেকেই হকার ও মাস্তানদের খপ্পরে পড়েন। এমনও দেখি সন্ধ্যার পরে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলে কিছু ছেলে সমুদ্র পাড়ে ঘোরাঘুরি করে সুযোগ পেলেই কোনো পর্যটকের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়। এজন্য নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার।
লাবনী বিচ ঘুরে দেখা যায় পর্যটকদের জন্য সমুদ্র তীরে যে বসার ব্যবস্থা রয়েছে তাও এক শ্রেণির মুনাফালোভীদের হাতে জিম্মি। বিচে যে টহল পুলিশ রয়েছে তা সার্বক্ষণিক নয়, মাঝে মাঝে বিচে আসে আবার চলে যায়। তাই পুলিশ এলে নিরাপদে থাকেন পর্যটকরা, গেলেই বিপদের সম্ভাবনা বাড়ে।
বিচ ঘিরে নেই কোনো অনুষ্ঠানসূচি। এখানে বিভিন্ন খেলাধুলা, শুটিংয়ের ব্যবস্থা ও দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো ডিজিটাল ডিস্প্লের ব্যবস্থা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সৈকতজুড়ে ঘুরে বেড়াতে আগ্রহী হতেন বলে মনে করেন আগত পর্যটকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এসএম/এমজেএফ/
** বয়সটা কম, তবুও কাঁধটা ‘বড়’ তাদের..